‘বাবা, এটা আমার দ্বিতীয় জীবন’

ছবি: অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সৌজন্যে

পরিবার নিয়ে বেইলি রোডের জেস্টি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। ওই ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে ফেরার পর আজ সকালে সাংবাদিকদের সেই অভিজ্ঞতা জানান তিনি।

'আমার বড় মেয়ের ১২তম জন্মদিন আজ (শুক্রবার)। তার আবদার ছিল, রাত ১২টা বাজার পর রেস্টুরেন্টে কেক কেটে জন্মদিন উদ্‌যাপন করবে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না এমন একটি বিভীষিকাময় রাত কাটাতে হবে,' অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন।

আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং প্রতিষ্ঠানটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহরুফা গুলশান আরা এবং দুই মেয়ে ওয়াজিহা জামান মজুমদার (১২) ও ওয়াজাহ জামান মজুমদার (৭)।

বেইলি রোডের ওই ভবন থেকে মাত্র দুই ভবন পর তাদের বাসা। তাই রাত ১২টায় জন্মদিন উদযাপনের জন্য তারা সেই রেঁস্তোরায় যান।

'রেস্টুরেন্টে বসে হঠাৎ আমি কোনো একটা কিছু পুড়ে যাওয়ার গন্ধ পাচ্ছিলাম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমার গবেষণা এবং কাজের কারণে, আমি বুঝতে পারি যে গুরুতর কিছু হয়েছে,' বলেন তিনি।

'জানালা দিয়ে দেখি লোকজন জড়ো হয়ে চিৎকার করে রাস্তার উল্টো দিকের কোনো ভবন দেখাচ্ছে। লোকজন জড়ো হচ্ছে। একপর্যায়ে চিৎকার বেড়ে গেল। ইতিমধ্যে আমার স্ত্রীও জানালার কাছে এসে গেছে। এমন সময় হঠাৎ জানালার পাশ থেকে ধোঁয়া উঠল। আমরা বুঝলাম, আগুন লেগেছে।'

'তখন রেস্টুরেন্টে প্রায় ১০-১২ জন ছিল। আমরা সবাইকে জানাই, আগুন লেগেছে। দ্রুত বের হয়ে যেতে হবে। সেই তলায় কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম ছিল না। সেখানে যদি আগুন লাগত তাহলে আমাদের কাছে নিজেদেরকে বাঁচানোর মতো কিছু ছিল না,' বলেন তিনি।

আগুনের কথা শুনে সবাই সিঁড়ির দিকে ছুটতে থাকে। সবাই মিলে একতলা পর্যন্ত নিচে নামার পর আর নামতে পারেননি। নিচ থেকে দল বেঁধে লোকজন আসছিল ওপরের দিকে। আগুনের ধোঁয়াও উপরের দিকে উঠে আসছিল।

'আমি তাদের বললাম, নিচে না নেমে ছাদে যাওয়া উচিত। যারা নিচে নামতে শুরু করেছিল তারাও এক তলা নামার পর উপরের তলায় ফিরে এসেছে। কারণ নিচে নামা তখন অসম্ভব,' বলেন তিনি।

'তখন একটাই ভয় লাগছিল, যদি ছাদের দরজা বন্ধ থাকে তাহলে কী হবে। কিন্তু আমাদের ভাগ্য ভালো, ছাদের দরজা খোলা ছিল। ছাদের ২৫ শতাংশ জায়গা খালি ছিল, বাকি জায়গায় রেস্তোরাঁ এবং নামাজ পড়ার স্থান। ছোট জায়গাতেই আমরা ৪০-৫০ জনের মতো ছিলাম। অধিকাংশই নারী। সময় যত যাচ্ছিল ততই আগুনের ধোঁয়া বাড়ছে, আগুনের লেলিহান শিখাও ছাদের দিকে আসছে। কেউ কেউ নিজেদের পোশাক খুলে পানিতে ভিজিয়ে চোখে–মুখে দিচ্ছিলেন। অনেকেই তখন সেখানে নামাজে বসে যান, প্রার্থনা শুরু করেন।'

'বেঁচে ফিরব এমন আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। তখন একজন জানালেন ফায়ার সার্ভিসের কথা। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন কোন দিকে তা আমরা কেউ দেখতে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী ছাদে উঠে আসেন। তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করতে থাকেন। ওই কর্মী একপর্যায়ে একটি হাতুড়ির মতো বস্তু নিয়ে ছাদের একটি রেস্তোরাঁর দরজা ভেঙে ফেলেন, যাতে আগুন ছড়িয়ে না যায়।'

'যদি ফায়ার সার্ভিস কর্মী না আসত, আমি আজ আমার মেয়েদের সাথে এখানে থাকতাম না,' বলেন তিনি।

আজ ওয়াজিহার জন্য জন্মদিনের কেক অর্ডার করেছেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান।

'মেয়ে আমাকে বলেছে, "বাবা, এটা আমার দ্বিতীয় জীবন",' বলেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান।

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

58m ago