‘করুণ আর্তনাদে উদ্ধার করার কথা বলেছিল ভাগ্নি, কীভাবে তার লাশ দেখব’

সম্পূর্ণা রায় ও সান রায়। ছবি: সংগৃহীত

'মামা আমাকে এখান থেকে বের করো। এখানে চারদিকে আগুন-ধোঁয়া। আমরা বের হতে পারছি না। ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। তুমি আসো। আমাদেরকে এখান থেকে বের করো…'

ভাগ্নির আহাজারি কিছুতেই স্মৃতি থেকে সরাতে পারছেন না পিযূষ রায়। গতকাল রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে সাত তলা ভবনের ভয়াবহ আগুনে মারা গেছেন মা পপি রায়সহ মেয়ে সম্পূর্ণা রায় (১২) এবং ছেলে সান রায় (৮)।

পপির ভাই পিযূষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুই সন্তান নিয়ে আমার বোন পপি বইমেলায় ঘুরতে গিয়েছিল। সেখান থেকে শান্তিবাগে বাসায় ফেরার পথে তারা কাছেই বেইলি রোডে রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। রাত ১০টার দিকে আমাকে ভাগ্নি ফোন করে আগুনের কথা জানায়। ফোনে তার চিৎকার শুনে আমি দ্রুত রিকশা নেই, বাকি পথ দৌঁড়ে সেখানে যাই। রাস্তা থেকেই আমি কয়েকবার ফোন করেছি কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি।'

'ভাগ্নি আমাকে বলেছে, মামা তুমি আসো। কিন্তু আমি কীভাবে যাব? সামনে-পিছনে সবখানে আগুন। সবকিছু জ্বলে-পুড়ে শেষ। আমার কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছে। কিন্তু বাঁচাতে আর পারলাম কই? ভাগ্নির লাশ আমি কীভাবে দেখব? আমার পক্ষে ওই মরদেহ দেখা সম্ভব না,' বলেন তিনি।

রাতে ঘটনাস্থলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন পপির মা বাসনা রাণী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। আশায় ছিলেন, হয়তো মেয়ে বের হয়ে আসবে, নাতি-নাতনিকে জীবিত উদ্ধার হবে।

তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের পর এক সাংবাদিকের কাছে কাগজ-কলম চান বাসনা রাণী। তিনি বলেন, 'এত লাশের ভিড়ে আমি ওদের লাশ হারিয়ে ফেলব। আমাকে কাগজ-কলম দিন। আমি লাশের উপরে নাম লিখে রাখি যেন হারিয়ে না যায়...'

রাজধানীর বেইলি রোডে সাত তলা ভবনের আগুনে এ পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ওই ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে এবং রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ভবনটিতে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ছাড়াও, স্যামসাংয়ের শোরুম, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, ইলিন, খানাস ও পিৎজা ইন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh garment exports face US tariff hike

Can Bangladesh retain its foothold in US market?

As Bangladesh races against a July 9 deadline to secure a lower tariff regime with the United States, the stakes could not be higher.

14h ago