নদী ভাঙনের ধাক্কা সামলালেও ট্রাকের ধাক্কা কাটাতে পারলেন না

সাহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত

নদীভাঙনে জমিজমা আর বসতঘর হারিয়েছিলেন ২৫ বছর আগে। তারপরও জীবনযুদ্ধে হেরে না গিয়ে সামলে উঠেছেন। কষ্ট করে ছেলে-মেয়ে মানুষ করেছেন। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। গরুর দুধ বিক্রি করে আর ছেলে-মেয়েদের আয়ে কোনোরকমে চলে যাচ্ছিল সংসার।

তবে কয়েকদিন আগে পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায় ট্রাক। একটি পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাছবারইল গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ সাহেদ আলীর। এবার আর সেই শক্তি বা সামর্থ্য নেই জীবনযুদ্ধে লড়ার।

গতকাল কথা হয় সাহেদ আলীর পরিবারের সঙ্গে। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তৃতীয় তলার ৫৪ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন তিনি। বয়সের ভারে ন্যুজ সাহেদ আলী গত দশ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। আগের মতো সবকিছু সামলে উঠতে পারবেন কিনা, আদৌ সুস্থ হয়ে ফিরবেন কি না- এমন আশঙ্কা নিয়েই দিন কাটছে তার।

সাহেদ আলীর মেয়ে শাহিদা আক্তার জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে গরুর দুধ বিক্রি করতে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বেউথা বাজারে যাচ্ছিলেন বাবা। দুধ বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে পাছবারইল মুরগির হ্যাচারির সামনে পাকা রাস্তায় পৌঁছালে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে বাবা নিচে পড়ে যান এবং তার বাম পায়ের ওপর ট্রাকের চাকা উঠে গেলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।

স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করলে ওই দিনই হাসপাতালে নিয়ে আসি। বাম পায়ের অবস্থা খারাপ হলে, ঘটনার দুই দিন পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাম পা কেটে ফেলা হয়।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর ভাঙনে ১২ বিঘা জমি  আর বসতবাড়ি হারিয়ে ২৫ বছর আগে হরিরামপুরের মধ্যবয়রা থেকে মানিকগঞ্জের পাছবারইল গ্রামে আসেন সাহেদ আলী। তার পাঁচ মেয়ের চার মেয়েই পোশাক কারখানায় কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালিয়েছেন। ছেলেরাও পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তারা সবাই শ্বশুরবাড়ি থাকেন। একজনের শ্বশুরবাড়ি কাছে থাকায় তিনি মাঝে মাঝে এসে খবর নেন। সংসারের সুখের আশায় ঋণ করে ছেলে দুটিকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। এখনও ঋণ শোধ হয়নি। বর্তমানে বাড়িতে তিনটি গরু লালন-পালন করে তার থেকে আয় দিয়েই সংসার চালাচ্ছিলেন। ট্রাকের নিচে পা কাটা পড়ায় এখন ধার দেনা করে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।

যে ট্রাকচাপায় সাহেদ আলী আহত হয়েছেন সেটি শনাক্ত হয়েছে। ট্রাকের মালিক-চালককে অভিযুক্ত করে মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলাও হয়েছে।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিল হোসেন বলেন, 'দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

Comments