মাছ চাষের জন্য নদী ইজারা দিচ্ছে পাবনা জেলা প্রশাসন

পাবনার চন্দ্রাবতী নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকলেও বর্ষায় নদীতে পানি থাকে বলছেন স্থানীয়রা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

চলনবিলের অন্যতম প্রধান নদী বড়াল। ক্রমাগত দখল, দূষণ আর অপরিকল্পিত উন্নয়নে এক সময়ের প্রমত্তা বড়াল এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। অনেক স্থানে নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। চলনবিলের অন্তর্গত পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এই নদীর ভাঙ্গুরা উপজেলার দুটি অংশ এবার জলমহাল হিসেবে ঘোষণা করে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসন।

শুধু বড়ালই নয়, চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার আত্রাই, গুমানি, চিকনাই নদীর বিভিন্ন অংশ একইভাবে জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়ার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

গত ১৪ জানুয়ারি পাবনা জেলা প্রশাসনের জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি জেলার নয়টি উপজেলার ৬৩টি জলমহাল ইজারা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়।

ডেইলি স্টার বিজ্ঞপ্তির একটি অনুলিপি পেয়েছে যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই জলাশয়গুলো তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঘোষিত ৬৩টি জলমহালের ৩১টিই জেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ১০টি নদীর অংশ।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পাবনার ইছামতী, পদ্মার কোল, আত্রাই, চন্দ্রাবতী, বড়াল, চিকনাই, গুমানি, গোহালা, কাগেশ্বরী ও রুকনাই নদীর বিভিন্ন অংশকে জলমহাল হিসেবে ঘোষণা করে লিজ আহ্বান করা হয়েছে।

এর মধ্যে পাবনা সদর উপজেলার ইছামতী নদীর ৮টি পয়েন্টে ও পদ্মা নদীর কোলের তিনটি অংশে, আটঘরিয়া উপজেলার ৮৫ দশমিক ৩০ একর চন্দ্রাবতী নদী, ইছামতী নদীর এক অংশ, চাটমোহর উপজেলার চিকনাই নদীর তিনটি অংশ, আত্রাই নদীর একটি অংশ, ভাঙ্গুরা উপজেলার বড়াল নদীর দুটি অংশ ও গুমানি নদীর একটি অংশ, ফরিদপুর উপজেলার চিকনাই নদীর একটি অংশ, রুকনাই নদীর একটি অংশ, গোহালা নদীর একটি অংশ, বেড়া উপজেলার কাগেশ্বরী নদীর একটি অংশ ও সাথিয়া উপজেলার কাগেশ্বরী নদীর দুটি অংশ, ইছামতী নদীর চারটি অংশ রয়েছে।

তবে এর মধ্যে থেকে আটঘরিয়া উপজেলার ইছামতী নদীর অংশ ইছামতী পুনরদ্ধার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অংশ লিজ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

তবে জলমহাল ইজারার নামে নদীর বিভিন্ন অংশ জলমহাল হিসেবে লিজ দেওয়ার উদ্যোগে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

চলনবিলের বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক পাবনার চাটমোহর উপজেলার মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রবাহিত নদীকে কখনই এভাবে লিজ দেওয়া যায় না। বড়াল নদীকে রক্ষার জন্য আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন করে আসছি''

ইতোপূর্বে আন্দোলন করে চাটমোহরে বড়াল নদীর লিজ বাতিল করা হয় বলেও জানান তিনি।

মাছ ধরার জন্য লিজ নিয়ে প্রভাবশালীরা পুরো নদীতে দখলদারত্ব চালিয়ে আসছে দিনের পর দিন। নদীকে প্রবাহিত রাখতে নদীতে এ ধরনের লিজ বন্ধের দাবি জানান তিনি।

পাবনা জেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নদী ও জলমহাল এক বিষয় নয়।

নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা হলেও নদীর বিভিন্ন অংশকে জলমহাল হিসেবে লিজ দেওয়ার উদ্যোগ নদীর জীবন্ত সত্ত্বাকে অস্বীকার করা হয়।

প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বার্থে নদী রক্ষার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

পাবনা জেলা প্রশাসন কর্মকর্তা আরডিসি (রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর) ফারিস্তা করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সব কিছু নিয়েম মেনেই করা হচ্ছে। নতুন করে জলমহাল ঘোষণা করা হয়নি। যে জলমহালগুলো আগে ইজারা দেওয়া হয়েছে, ইজারার জন্য সেগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। পূর্বের ফাইল অনুসরণ করেই কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।

এদিকে পাবনার ইছামতী নদীকে পুনরুজ্জিবিত করার জন্য যখন সরকার ১৫৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে তখন ইছামতী নদীর বিভিন্ন উপজেলার একাধিক স্থানে এভাবে মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরডিসি ও পাবনা জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ফারিস্তা করিম বলেন, ইতোমধ্যে ইছামতী নদীর আটঘরিয়া উপজেলার অংশে লিজের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তবে ইছামতীর অন্য জলমহালগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পের কোনো কাজ নেই বলে জানান তিনি। ফলে লিজ দিতে সমস্যা হবে না।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৬৩টি জলমহাল তিন বছরের জন্য (১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ বাংলা সন) লিজ নেওয়ার জন্য প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ৩ ফাল্গুনের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী জলমহাল ইজারা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করার জন্য কাজ চলমান রয়েছে।

আবেদন পাওয়ার পর যাচাই বাছাই করে জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ইজারার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Interest payments, subsidies soak up almost half of budget

Interest payments and subsidies have absorbed nearly half of Bangladesh’s total budget expenditure in the first seven months of the current fiscal year, underscoring growing fiscal stress and raising concerns over public finances.

1h ago