শিশু আয়ানের মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘লোক দেখানো’ ও ‘হাস্যকর’ বললেন হাইকোর্ট

Bangladesh high court
হাইকোর্ট ভবন। ছবি: ফাইল ফটো

রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, এটি 'লোক দেখানো' এবং এর সুপারিশগুলো 'হাস্যকর'।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম ও আয়ানের বাবা শামীম আহমেদের করা রিট আবেদনের শুনানির সময় বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, 'আমরা চিকিৎসক না, কিন্তু মেডিকেল জুরিসপ্রুডেন্স পড়েছি। বোঝাই যাচ্ছে যে আপনাদের (সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের) অবহেলা ছিল। (আয়ানের) কোনো সুরতহাল না করেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তার খতনা করাতে গিয়ে এত বেশি পরিমাণ ওষুধ ব্যবহৃত করা হয়েছে, সেটা সাধারণত বাইপাস সার্জারির জন্য প্রয়োজন হয় না। তার ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমার সমস্যা আছে জানার পরও চিকিৎসকরা কেন এত তাড়াহুড়ো করে তার খতনা করালেন? তারা কিছু দিন অপেক্ষা করতে পারতেন।'

গত ১৫ জানুয়ারির আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে ১৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়ানের খতনা অপারেশনের কারণে স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছিল এবং সিপিআরের (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) কারণে তার পাঁজরে ফ্র্যাকচার হতে পারে।

এই তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাদুল আলম, সহকারী পরিচালক ডা. সত্যজিৎ কুমার সাহা এবং সহকারী অধ্যাপক (অ্যানেস্থেসিওলজি) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আলী হাসান।

তদন্ত প্রতিবেদনে তারা একটি হাসপাতালে একাধিক অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট নিয়োগ, অ্যানেস্থেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকি সম্পর্কে রোগী ও তাদের আত্মীয়দের অবহিত করা, হাসপাতালে আইসিইউয়ের (নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট) ব্যবস্থা এবং সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কাজ শুরু করার সুপারিশ করেছেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় হাইকোর্ট বেঞ্চে তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু অংশ পড়ে শোনানোর পর রিট আবেদনকারী শাহজাহান আকন্দ মাসুম আদালতকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে কারচুপি করা হয়েছে।

আয়ানের অপারেশনের সময় অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছিলেন ডা. সাব্বির আহমেদ। ২০২২ সালে তিনি অ্যানেস্থেসিয়ার ওপর ছয় মাসের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। অপারেশনের সময় ইউনাইটেড হাসপাতালে কোনো অভিজ্ঞ অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ছিলেন না।

আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার নতুন করে তদন্ত করার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে হাইকোর্টের কাছে অনুরোধ জানান শাহজাহান আকন্দ মাসুম।

হাইকোর্ট শাহজাহান আকন্দ মাসুমকে আদালতে হলফনামা দিয়ে জবানবন্দি দিতে বলেন এবং এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশ দেওয়ার জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

শুনানির সময় হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল।

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইউনাইটেড গ্রুপের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে অবহেলায় গত ১৫ বছরে মোট কত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, গত ২৮ জানুয়ারি তা জানতে চান হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেন আদালত।

রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে 'অবহেলা ও ভুল চিকিত্সা'য় মারা যাওয়া আয়ানের পরিবারকে কেন পাঁচ কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা হাসপাতাল ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শিশু আয়ানের খাতনা করার সময় 'অতিরিক্ত' অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।

অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফেরায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করা হয়।

সাত দিন তাকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে রাখার পর চিকিৎসকরা আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

'Salma was killed by a tenant, not her son'

Umme Salma Khatun, whose body was recovered from a freezer in Bogura, was killed by her "drug peddler" tenant, not by her 19-year-old son, said police yesterday after primary investigation

30m ago