‘সাঁওতালদের জমি তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে’

সাঁওতালদের তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে
ছবি: মোস্তফা সবুজ

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন তাদের নৈতিক দায়িত্ব, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে যেন তারা দেশ চালায়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের কাটার মোড় এলাকায় আয়োজিত সাঁওতাল সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে যদি দেশ চালাতে হয় তাহলে এই সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তাদের চেষ্টা করতেই হবে এবং এটি করতে হলে  ফসলি জমিতে হাত দেওয়া চলবে না।'

'সাঁওতালদের ওপর যদি কোনো রকম অত্যাচার হয়, নির্যাতন হয়, বিগ্রহ হয়, হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেটার সুবিচার করতে হবে। অনেক কারণে যারা পিছিয়ে আছেন তাদেরকে সামনে নিয়ে আসার জন্য, তাদের যে দাবিগুলো রয়েছে- সংখ্যালঘু কমিশন, তাদের সুরক্ষা কমিশন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা কমিশন, সেগুলো যেন গঠিত হয়। আমরা এটা দেখতে চাই সরকারের কাছে', যোগ করেন তিনি।

'বর্তমানে এই তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড করা ও ভূমি অধিগ্রহণের যে পাঁয়তারা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। কোনো ফসলি জমিতে কোনো রকম স্থাপনা হতে পারে না। এটা আমাদের রাষ্ট্রনীতি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারবার বলে যাচ্ছেন, কোনো ফসলি জমি নষ্ট করে যেন স্থাপনা না হয়। আমরাও একই কথা বলছি। কোনোরকম বিরোধিতা নেই। দুই রকম অর্থ করারও কোনো সুযোগ নেই। ভূমি উদ্ধার আন্দোলন করতে গিয়ে সাঁওতালদের ওপর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে', তিনি বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, 'এই আন্দোলনের সময় তিন সাঁওতালকে হত্যা করা হয়েছে। সেটার বিচার আমরা চেয়ে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। বিচারটা আটকে রাখা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আবুল কালাম আজাদ সাহেবকে (বর্তমান সংসদ সদস্য, গাইবান্ধা-৪) আমি আর একবার মনে করে দিতে চাই, আমরা এখানে যে কথাগুলো বলে গেলাম এর প্রতিক্রিয়ায় যেন আমরা কখনও না শুনি যে এখানকার জনগণের ওপর অত্যাচার, নিগ্রহ আরও বেড়ে গেছে। সেটার জন্য কিন্তু আপনি ঐতিহাসিকভাবে দায়ী থাকবেন এবং আমরা আপনাকে দায়ী করব।'

সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, এএলআরডি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ ও গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে।

এতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাক্সে। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবির, আদিবাসী নেতা সুফল হেমব্রম, থোমাস হেমব্রম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশসহ দুই পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ মারা যান।

 

Comments

The Daily Star  | English
tailor injured during July mass uprising fights for dignity

Is respect too much to ask for?

Rasel Alam, 36, a tailor from Mohammadpur, has been fighting two battles since the July mass uprising -- one for his health and another for his dignity.

19h ago