সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির বিকল্প পরিকল্পনা ছিল না
নির্বাচন শেষ এরই মধ্যে নতুন সরকার গঠনও হয়ে গেছে, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে দলের শীর্ষ পর্যায়ের বিকল্প পরিকল্পনা থাকলে পরিস্থিতি অনেকটাই অন্যরকম হতো।
তবে তারা বিশ্বাস করেন যে তাদের আন্দোলনের মূল সাফল্য হলো অনেক বেশি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ নির্বাচন বয়কট করেছে। তাদের মতে, তুলনামূলকভাবে কম ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ায় ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দলটি তাদের এক দফা দাবিতে হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলন করলেও নির্বাচন তদারকির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের দাবি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
দলীয় নেতারা বলেন, সরকার বরং হাজার হাজার রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের নেতাদের চাপ, গ্রেপ্তার এবং কিছু ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে ফেলেছে।
বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ পুলিশের বাধায় পণ্ড হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
'গত ২৮ অক্টোবর আমরা খেলায় হেরে গিয়েছিলাম যখন আমাদের পুলিশি অ্যাকশনের মুখে রাস্তা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। আমাদের নেতাদের কোনো ব্যাকআপ পরিকল্পনা ছিল না এবং সে কারণেই আমাদের আন্দোলন সংগঠিত হয়নি,' বলেন উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার এক বিএনপি নেতা।
ডেইলি স্টার সাতটি জেলার বিএনপির নেতা এবং ঢাকার বাইরের দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে এবং তারা সবাই একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেন, আগামী দিনগুলোতে দলের উচিত তাদের দাবি আদায়ে একাধিক ব্যাকআপ পরিকল্পনাসহ বাস্তবসম্মত ও কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করা।
তারা আরও বলেন, দলের অনেক সিনিয়র নেতা তাদের আন্দোলনে আশানুরূপ সড়কে নামেননি, আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
গাজীপুরের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, 'সিনিয়র নেতারা রাজপথে থাকলে আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান হতো। এর সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে।'
কিন্তু এই নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে 'বিতর্কিত' ও 'ডামি' আখ্যায়িত করা বিএনপির জন্য একটি সাফল্য।
তৃণমূল নেতারা ডেইলি স্টারকে আরও বলেন, তাদের দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করার জন্য ঢাকা মহানগর ইউনিট কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা বেশিরভাগই কিছু ফ্ল্যাশ মিছিল করেছেন এবং তাদের নিজেদের প্রচারের জন্য ওইসব অনুষ্ঠানের ছবি এবং ভিডিও তাদের শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠিয়েছেন।
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সরকারি দমন-পীড়ন সত্ত্বেও দলের সব নেতা-কর্মী আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চূড়ান্ত পরিণতির আগে প্রতিটি আন্দোলনের পর্যায় থাকে।
এখান থেকে ইংরেজদের উৎখাত করতে ২০০ বছর সময় লেগেছে, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অনেক আন্দোলন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দলীয় নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত আছে এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।'
Comments