অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত ভুটানে আজ নির্বাচন

থিম্পুর একটি ভোটকেন্দ্রে সারিবদ্ধ ভোটাররা। ছবি: এএফপি
থিম্পুর একটি ভোটকেন্দ্রে সারিবদ্ধ ভোটাররা। ছবি: এএফপি

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুই দেশ চীন ও ভারতের মাঝে অবস্থিত পার্বত্য দেশ ভুটানে শুরু হয়েছে সাধারণ নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটগ্রহণ। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।

আজ মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি জানা গেছে।

করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকেই অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে ভুটান।

দেশটিতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রচলিত মাপকাঠি মোট দেশজ সুখ-সমৃদ্ধি (জিএনএইচ বা গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস) নিয়ে উঠছে অনেক প্রশ্ন।

কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বাড়ছে বেকারত্বের হার এবং অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশের পথে পাড়ি জমাচ্ছেন।

ভুটানের নির্বাচন প্রক্রিয়া

২০০৬ সালে তৎকালীন রাজা (ভুটানের চতুর্থ রাজা) জিগমে সিগমে ওয়াংচুক সিংহাসন ত্যাগ করলে তার ছেলে জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক দেশটির পঞ্চম রাজা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। রাজা হওয়ার আগে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কূটনীতি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।

নতুন রাজা দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কার করেন। দেশবাসীর মাঝে অসম্ভব জনপ্রিয় এই রাজা ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের আয়োজন করেন। তিনি দেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করেন।

এক বয়স্ক ভোটারকে সাহায্য করছেন পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি: এএফপি
এক বয়স্ক ভোটারকে সাহায্য করছেন পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি: এএফপি

ভুটানের নির্বাচনে দুইটি পর্যায় ভোট নেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুইটি দল দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে যদি শুধু দুইটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সে ক্ষেত্রে শুধু একবারই ভোট হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ ঘটনা ঘটে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন থেকে দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট ৪৭ জন আইনপ্রণেতাকে নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিতরা সরকার গঠন করেন।

ভুটানি নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়া আবশ্যক নয়। 

মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভুটানে নির্বাচন আয়োজনে রয়েছে কঠোর নীতিমালা। প্রার্থীরা স্বল্প পরিসরে প্রচারণা চালাতে পারেন। আইন অনুযায়ী, শুধু পাবলিক নোটিস বোর্ডে প্রচারণামূলক উপকরণ প্রদর্শন করা যায়। কোনো ধরনের পোষ্টার, ব্যানার বা লিফলেট প্রকাশ সম্পূর্ণ বেআইনি।

প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন

২০২৩ এর ২৯ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নেয় পাঁচটি রাজনৈতিক দল। এই ভোটে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সাবেক বিরোধী দল বাদ পড়ে যায়। 

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লোতে শেরিং এর নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল ড্রুক নিয়ামরুপ থগপা (ডিএনটি) চতুর্থ স্থান অধিকার করে। মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট পায় দলটি।

থিম্পুর একটি ভোটকেন্দ্রে সারিবদ্ধ ভোটাররা। ছবি: এএফপি
থিম্পুর একটি ভোটকেন্দ্রে সারিবদ্ধ ভোটাররা। ছবি: এএফপি

প্রাথমিক রাউন্ডে বিজয়ী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভুটান টেনড্রেল পার্টি (বিটিপি) আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে অংশ নিচ্ছে।

২০০৮ থেকে শুরু করে দেশটিতে তিন বার নির্বাচন হয়েছে—কোনো দল এখন পর্যন্ত দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়নি।

২০২২ সালে এক সাবেক কূটনীতিকের নেতৃত্বে গঠিত হয় বিটিপি।

ভোটগ্রহণ শুরু

ভুটানের আট লাখ মানুষের মধ্যে ভোটারের সংখ্যা পাঁচ লাখ। আজ এই ভোটাররা প্রাথমিক ভোটের দুই শীর্ষ দলের ৯৪ প্রার্থীর মধ্য থেকে ৪৭ প্রার্থীকে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে বেছে নেবেন।

কিছু ভোটার বেশ কয়েকদিন ধরে পাহাড়ে ট্রেকিং করে ভোট দিতে এসেছেন। আরও অনেকেই দুপুর ও বিকেল নাগাদ এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানী থিম্পুতে সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ঠাণ্ডা বাতাসের মাঝে ভোটকেন্দ্রগুলোতে মাত্র অল্প কয়েকজন ভোটার দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন এএফপির সাংবাদিক।

আজ স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল বুধবার নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে।

ভুটানের অর্থনীতি ও নির্বাচন 

ভুটানের সংবিধান অনুযায়ী, সরকারের সাফল্য নির্ভর করে 'জনগণের সুখ ও ভালো থাকার' ওপর। দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী উভয় দলই এই দর্শন মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশটি মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির পরিবর্তে উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে ভিন্ন একটি সূচক ব্যবহার করে, যার নাম মোট দেশজ সুখ-সমৃদ্ধি (গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস) বা জিএনএইচ। এই সূচক নির্ধারণে বিনোদন ও মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার মতো নিয়ামকগুলোকে আমলে নেওয়া হয়, যেগুলো জিডিপি নির্ধারণে ব্যবহার হয় না।

থিম্পুর একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন ভোটাররা। ছবি: এএফপি
থিম্পুর একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন ভোটাররা। ছবি: এএফপি

তারা ভুটানের দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত উন্নয়ন মাপকাঠি 'গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস' এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। এই নীতি মূলত চতুর্থ রাজা চালু করেছিলেন। 

উভয় দলের নির্বাচনী ইশতেহারের বক্তব্য মোটামুটি একই। তারা ৩০০ কোটি ডলারের অর্থনীতিকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে অঙ্গীকার করেছে। দেশটি বৈদেশিক ত্রাণ ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। করোনাভাইরাসের মন্দা থেকে এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ভুটান। ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে করোনাভাইরাসের সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে দেশটি।

অন্যান্য অঙ্গীকারের মধ্যে আছে ভুটানের জলবিদ্যুৎ ও কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিকে ন্যুনতম পর্যায়ে রাখা।

দুই দলই দেশটির শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অক্টোবরের শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৬ কোটি ডলার, যা এক বছর আগেও ৭৫ কোটি ছিল।

ভুটান নিয়ে চীন ও ভারতের আগ্রহ

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুই রাষ্ট্র চীন ও ভারতের মাঝে ভুটানের অবস্থান। উভয় দেশই গভীর আগ্রহ নিয়ে এই নির্বাচনে চোখ রাখছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, অক্টোবরে ভুটানের উত্তর ফ্রন্টিয়ারে চীনের সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করে একটি 'সহযোগিতামূলক চুক্তিতে' সম্মত হয়। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত।

নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে ভুটানকে তাদের নিজেদের প্রভাবও বলয়ে অবস্থিত নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।

২০০৭ সাল পর্যন্ত কার্যত ভারতই ভুটানের বৈদেশিক নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনীতিক সম্পর্ক না থাকলেও দেশটি বেইজিং এর সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে দরকষাকষি ও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। ভারতের সঙ্গেও চীনের সীমান্ত বিতর্ক থাকাও তারা এই আলোচনার দিকে নজর রাখছে।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago