আওয়ামী লীগ কথা রাখেনি: জি এম কাদের

নির্বাচনের খবর
রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের | ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাপা) জি এম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার যে প্রতিশ্রুতি পেয়ে তারা নির্বাচনে এসেছিলেন, সেই পরিবেশ ছিল না। প্রশাসন পুরোপুরি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে। জাতীয় পার্টির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে জোর করে নৌকায় সিল মারা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কথা দিয়ে কথা রাখেনি।

এছাড়া নির্বাচনে জাপার প্রার্থীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগও এনেছেন জাপা চেয়ারম্যান।

আজ সোমবার রংপুরের বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন জি এম কাদের।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, 'গতকাল যে নির্বাচনী ফলাফল আমরা দেখেছি, তাতে আমরা আশানুরূপ ফলাফল পাইনি। আমাদের বারংবার কতগুলো কথা বলা হচ্ছে, এখনো প্রচার করা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে বা অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলছেন যে আমাদের আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে।

'আমি বারংবার বলেছি, কোনো মহাজোট হয়নি, কোনো আসন ভাগাভাগি হয়নি, কোনো আসন ছাড় দেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম একটি পরিবেশ—প্রথম কথা ছিল প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে এবং আমাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থের প্রভাবমুক্ত পরিবেশ থাকবে। তারা আমাদের কথা দিয়েছিলেন, নিশ্চিত করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী দেননি। নৌকা মার্কার প্রার্থী প্রত্যাহার করেছিলেন। তখনো আমি বলেছিলাম, এটা কোনো সমঝোতা নয়, আসন ভাগাভাগি নয়।'

জি এম কাদের আরও বলেন, 'যেহেতু ওখানেই তারা আওয়ামী লীগের শক্ত একজন প্রতিদ্বন্দ্বী দিয়েছেন স্বতন্ত্র। তাকে তারা বিদ্রোহী বলেননি, তাকে তারা দল থেকে বহিষ্কারও করেননি। দল থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হয়েছে এবং দলীয় লোকজন তার সঙ্গে কাজ করেছে। সরাসরি আওয়ামী লীগের লোক আমাদের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা বহিষ্কার করেছি এ রকম প্রার্থীকে আমাদের বিরুদ্ধে ওই ছেড়ে দেওয়া আসন বলে আওয়ামী লীগের লোক সমর্থন করেছে।'

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে ফলাফল তা অনুমিত ছিল বলেও মনে করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, 'তারা আসনটা একেবারে ছেড়ে দেয়নি। তাদের লোক দিয়ে আসন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই কথাটা বলে একটা বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল এবং সবার একটা ধারণা ছিল আমরা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছি, আওয়ামী লীগের ভিকটিম হয়ে গেছি।

'ইচ্ছাকৃত হোক আর অনিচ্ছাকৃত হোক, সরকার এটা প্রচার করেছে এবং আমাদের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। প্রার্থীদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে, দলকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।'

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, 'কাল (রোববার) সকাল থেকে এবং নির্বাচনের আগের রাত থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাচ্ছিলাম, আমাদের প্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। জোর করে এজেন্টদের বের করে কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাসায় বাসায় গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যেটা আমি গতকাল বলেছিলাম। পরবর্তীতে সারাদিন ধরে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। দুপুর ২টার মধ্যে তারা সব ভোটকেন্দ্র দখল করে ফেলেছে। আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে তাদের এজেন্ট দিয়ে সিল মারিয়েছে। সেখানে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার আমাদের মানুষকে কোনো সমর্থন করেনি। সম্পূর্ণ প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করেছে। যেটা আমরা সব সময় আশঙ্কা করেছিলাম।'

জি এম কাদেরের ভাষ্য, 'এটার বিপক্ষেই আমাদের কথা ছিল যে, আমরা (নির্বাচনে) আসব তোমাদের কথায়, নির্বাচন করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা নির্বাচন করতে চাই এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাই। সংসদের মাধ্যমে আমরা আমাদের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তারা কথা দেওয়ার পরও এই কথাটা তারা রাখেননি।'

এর আগে গতকাল ভোটের দিন অনিয়মের অভিযোগ তুলে জি এম কাদের বলেছিলেন, 'কাল সারা দিন আমাদের কাছে খবর এসেছে এবং আমরা অসহায় হয়ে গেছি। যেখানে যেখানে দরকার আমরা সবখানে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তারা বলেছে, করছি—এখনই লোক পাঠাচ্ছি কিন্তু কিছুই করা হয়নি। এসব সব কেন্দ্রে আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। এর মধ্য থেকে আমাদের বিপুল সংখ্যক প্রার্থী বেরিয়ে আসত।

'এখন আরও খবর পাচ্ছি বিভিন্ন জায়গা থেকে; ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে, বাড়ি-ঘর ঘেরাও করে...যে তোমরা আর নির্বাচন করছো না—এটা লিখে দাও, বলে দাও; এ রকম করে তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।'

গতকালের ভোটের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'একটা নতুন ধরনের ডায়মেনশন দেখা গেছে' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে এটার জন্য সরকারকে মাশুল দিতে হবে বলে।'

Comments

The Daily Star  | English
BNP's stance on president removal in Bangladesh

BNP for polls roadmap in 2 to 3 months

Unless the interim government issues a roadmap to the next election in two to three months, the BNP may take to the streets in March or April next year, say top leaders of the party.

6h ago