জাপানে বিনামূল্যে ৮০ লাখ বাড়ির প্রচারণা ও বাস্তবতা

জাপানে বিনামূল্যে ৮০ লাখ বাড়ির প্রচারণা ও বাস্তবতা
প্রতীকী ছবি | সংগৃহীত

'যেকোনো নাগরিককে বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে তাদের পাসপোর্ট ও আইডি কার্ড দিয়ে সম্পূর্ণ সজ্জিত ও বসবাসের জন্য প্রস্তুত এমন ৮০ লাখ পরিত্যক্ত বাড়ি বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে দিচ্ছে জাপান সরকার। বিদেশিরাও আবেদন করতে পারবেন'—জাপানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন অহরহ দেখা যাচ্ছে।

জাপানের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটিতে অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ফলে সেসব বাড়ি খালি পড়ে আছে, অর্থাৎ সেসব বাড়িতে বসবাসের কেউ নেই।

যতই দিন যাচ্ছে, জাপানে ততই বয়স্কদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের বয়স ৬৫ বছর বা তারও বেশি। বয়স্কদের মৃত্যুর কারণে বছরের পর বছর সেসব বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকছে।

এসব পরিত্যক্ত বাড়ির কারণে মিউনিসিপ্যালিটিগুলো প্রপার্টি ট্যাক্স পাচ্ছে না। এটা জাপান সরকারের জন্য 'মাথাব্যথা'র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও দিনের পর দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরোনো আমলের বাড়িগুলো নষ্টও হয়ে যাচ্ছে।

২০১৮ সালের জাপান সরকারের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, জাপানে প্রায় ৮৫ লাখ বাড়ি খালি পড়ে আছে। জাপানের জনসংখ্যা কমতে থাকায় গ্রামীণ এলাকায় অনেক গ্রাম, মিউনিসিপ্যালিটির সংখ্যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জাপানের কিছু কিছু প্রিফেকচারে ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমে যাবে।

নামমাত্র দামে অনলাইনের মাধ্যমে যে বাড়িগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করছে, এসব বাড়িঘরের দাবিদার কেউ নেই।

আর এতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে 'রিয়েল এস্টেট'র কিছু সংখ্যক এজেন্ট। 'জাপানে ৮০ লাখ বাড়ি বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে' এমন প্রচারে সয়লাব করছে ফেসবুক। তারা টার্গেট করছে এশিয়ান বিশেষ করে বাংলাদেশি, ভিয়েতনামিজ প্রবাসীদের।

এই প্রচারণা কিছুটা বিভ্রান্তিকর, আবার কিছুটা সত্যও। গ্রাম এলাকার এইসব পরিত্যক্ত বাড়ি বিনামূল্যে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু কত সংখ্যক তা জানা যায়নি।

বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে যে বাড়িগুলো পাওয়া যাবে, সেগুলোকে সংস্কার করতে হবে কিংবা বাড়ি ভেঙে জমি বের করতে হবে। আর জমির ওপর যদি বাড়ি না থাকে, সেক্ষেত্রে প্রচুর প্রপার্টি ট্যাক্স দিতে হবে। আর এগুলো কেনার জন্য যোগাযোগ করতে হবে রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সঙ্গে।

জাপান সরকারের আইন অনুযায়ী রিয়েল এস্টেট এজেন্ট বাড়ির মূল্যের তিন শতাংশ কমিশন পাবে।

নামমাত্র দামে পাওয়া এই বাড়িগুলো কিন্তু শহর কিংবা সুবিধাজনক স্থানে নয়। এর বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে অনেক কিছুই হাতের নাগালে নয়। আয়েরও তেমন পথ নেই। সব কিছুর জন্য প্রতিদিন অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই বিনামূল্যে বাড়ি পেলেও সেখানে বসবাস করতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

সেই কারণে পরিত্যক্ত বাড়ি কিনে লাভ আছে কি না, তা ভাবতে হবে। যদি আপনি এই বাড়ি ব্যবহার না করেন, তাহলে এই বাড়ি আপনার দায় হবে। কারণ জমিসহ এই বাড়ি রেজিস্ট্রেশন করতে বিভিন্ন ফি লাগবে। আবার পুরোনো বাড়ি ভেঙে ফেললে জমির ওপর বাড়ি না থাকায় প্রচুর প্রপার্টি ট্যাক্সও দিতে হবে।

আবার সংস্কার করলেও গ্রাম্য এলাকায় ভাড়াটে পাওয়াও কঠিন হবে একই কারণে। আবার কিনে এভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে দিলে টাইফুন, ভূমিকম্পে ভেঙে পড়তে পারে। কাজেই অনেক ভেবে-চিন্তে, পরিকল্পনা করে গ্রাম এলাকার এসব বাড়ি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

rahmanmoni@gmail.com

Comments

The Daily Star  | English

Cybergangs breaking into NBR server at will

On May 20, 2024, Chattogram Custom House Deputy Commissioner Mohammad Zakaria was in Kolkata, India, where he had gone for treatment a week earlier.

14h ago