নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবেও অনেকে জড়িত: প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবেও অনেকে জড়িত: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবেও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে অনেকে জড়িত।

আজ শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির হাতে; জিয়াউর রহমান আসার পর থেকে যে হত্যাকাণ্ড তারা শুরু করেছিল, সেনাবাহিনীতে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, বিমান বাহিনীতে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। লাশ গুম করে ফেলেছে। ঠিক একই ঘটনা পর পর ঘটেছে। এই হত্যাকাণ্ড তারা ঘটনায় শুধু নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার জন্য।

'এই বিএনপি বারবার হত্যার চেষ্টা শুধু আমাকেই করেছি, আমাদের বাংলাদেশের, আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। তাদের হাত থেকে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ কেউ রেহাই পায়নি। ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে আবারও সেই একই তাণ্ডব তারা করেছে—অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করা। বাসে আগুন, রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, গাড়িতে আগুন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা; এটাই নাকি তাদের আন্দোলন। হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়েছে। ৫০০-এর মতো মানুষ তো মারাই গেছে আগুনে পুড়ে। আর এখনো যারা বেঁচে আছে, মানবেতর জীবন যাপন করছে,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করেছি। তাদের আন্দোলন হলো মানুষ পোড়ানো। তাদের আন্দোলন হলো মানুষের ক্ষতি করা। আন্দোলন হলো কী, আমাদের দেশের সম্পদ নষ্ট করা। এদের মধ্যে কোনো দেশপ্রেমও নাই, দায়িত্ব বোধও নাই।'

বিএনপির দুঃশাসনের কারণে জরুরি অবস্থা এসেছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'বিএনপির জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতি, বোমা হামলা, ৬৩টি জেলায় একইসাথে ৫০০ বোমা হামলা করেছিল তারা। আর আমাদের অগণিত নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে এই বোমা গ্রেনেড মেরে। এমনকি ২১ আগস্ট ২০০৪ সাল, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা শান্তি র‌্যালি করি, সেখানে গ্রেনেড হামলা করল। যে গ্রেনেড ব্যবহার হয় যুদ্ধের ময়দানে, সেই গ্রেনেড আমাদের ওপর চালাল। আইভী রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী, দুইজন অজ্ঞাতনামা মৃত্যু বরণ করল। আমাকে মানবঢাল রচনা করেই সেদিন বাঁচানো হয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'ওই কোটালিপাড়ার জনসভায় বোমা পুঁতে রাখা হলো। এ রকম বিভিন্ন সময়, বারবার কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন এবং আমার দলের লোকরা মানবঢাল রচনা করে আমাকে বারবার রক্ষা করেছে। কাজেই আমি আমার জীবনটা বাবার মতো উৎসর্গ করেছি। আমারও লক্ষ্য এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।'

শেখ হাসিনা বলেন, '২০০৮-এ যখন নির্বাচন দেওয়া হলো, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছে ২৩৩টি সিট। এরপর বিএনপি ২০১৩ সালে শুরু করল তাদের অগ্নি সন্ত্রাস। ১৩-১৪-১৫, আবার এখন, ইদানীং আপনারা দেখেছেন, মা আর শিশু ট্রেনে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এই দৃশ্য সারা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ওদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই। ওরা মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না।

'ক্ষমতায় থাকলে লুটপাট করে অর্থ নিয়ে পাচার করে বিদেশে পালিয়েছে। আর সেখানে বসে মানুষ খুন করার হুকুম দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে তাদের চরিত্র। কারণ তারা জানে, এ দেশের মানুষ তাদের আর বিশ্বাস করে না। ২০০৮ এর নির্বাচনে সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সে জন্য এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যখন আওয়ামী লীগ কাজ করে, তখন বারবার বাধা সৃষ্টি করবার চেষ্টা করে কিন্তু ওরা সফল হতে পারে না—পারবে না। কারণ জনসমর্থন তাদের নেই,' বলেন শেখ হাসিনা।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই যাত্রা সফল করতে পারে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ সে যোগ্যতাই নাই বিএনপি-জামায়াতের। কারণ বিএনপি হচ্ছে খুনিদের পার্টি আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর পার্টি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছিল, তাদের বিচার হবে না—আজকে আপনারা বলেন, এই ধরনের আইন কোনো সভ্য দেশে আছে কি না? কোনো দেশে নাই কিন্তু আমাদের এই দেশে জিয়াউর রহমান নেই আইন করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আমাদের পরিবারের সদস্য; ১৮ জন সদস্যকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করল তাদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী ও ১৫ আগস্টের খুনিদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের জঘন্য কাজ তারা করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স আমরা পার্লামেন্টে বাতিল করে দিই। সেই বাতিল করার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা।

'তারপর আমি বিচার শুরু করি। বিচারের রায় যেদিন ঘোষণা হবে, সেদিনও হরতাল ডেকে জজ সাহেব যাতে কোর্টে যেতে না পারে, বিচার করতে না পারে তার জন্য বোমাবাজি পর্যন্ত করেছিল। তারপর সেই বিচারের রায় আমরা পাই,' যোগ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, 'এখনো বিদেশে কয়েকজন রয়ে গেছে। মেজর নূর, কর্নেল রশিদ, মেজর ডালিম, মসলেহ উদ্দিন, রাশেদ এখনো ফেরারি। তাদের আনার জন্য বিদেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি, আইনগতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি জানি না কেন আমেরিকা সেই খুনি রাশেদকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। কানাডা নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। ডালিম আর রশিদ পাকিস্তান আর লিবিয়াতে যাতায়াত করে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে ওই খুনিদের ধরে এনে আমরা রায় কার্যকর করব। জাতির পিতার হত্যাকারীদের রায় আমরা কার্যকর করব। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আমরা নিয়ে এসেছি। ওদের রায় আমরা কার্যকর করেছি।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আজকে যে লন্ডনে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করে, রেলগাড়ি পোড়ায়, বাস পোড়ায়, আমাকে ২১ আগস্ট হত্যা করার চেষ্টা করেছে; জিয়াউর রহমান যেমন খুনি, জিয়ার বউ ওই খালেদা জিয়া, সেও আরেক খুনি; সেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং নানাভাবে আমাকে হত্যার চেষ্টা, কারণ তার তো স্লোগানই ছিল আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আর আমার কথা বলতো, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। একটা পর একটা কথা বলে আর একেকবার আমাদের ওপর হামলা করে।

'আর তার পুত্র আরেক ধাপ উপরে একদিকে লন্ডন থেকে হুকুম দেয় আর এখানে আগুনে পোড়ায়। যারা এই অগ্নি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত, যারা আগুন দিয়ে তারেকের মতো একটা খুনি, চোরাকারবারি, অস্ত্র চোরাকারবারি, টাকা আত্মসাৎকারী তার কথা আর জুয়া খেলে যে পয়সা বানায় লন্ডনে সেই জুয়ারু, তার কথা শুনে এখানে যে বিএনপি নেতারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে; মানুষ হত্যা করলে তার দায় তো যে করবে তাকেই নিতে হবে। ওই ধরনের একটা লম্পটের কথা শুনে বিএনপি নেতা বা কর্মী কেন আগুন দেয় আর অগ্নি সন্ত্রাস করে আর মানুষ মারে, সেটাই তাদের কাছে আমার প্রশ্ন। তাতে তাদের কী লাভ? শাস্তি তো এরা পাবে। বিচার তো পার্থিব জগতেও হবে, আবার আল্লাহর কাছেও মানুষ খুন করার জন্য বিচার তারা পাবে। কাজেই শাস্তি পেতে হবে তাদেরকেই,' যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ চায় দেশে শান্তি থাকুক মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশের মানুষ নিরাপদ থাকুক। দেশের উন্নতি তরান্বিত হোক। আর তারা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিন্তু এটা করেও তারা সফল হতে পারছে না।

'নির্বাচন বানচাল করার অনেক ষড়যন্ত্র এবং এই ষড়যন্ত্রের সাথে আন্তর্জাতিকভাবেও অনেকে জড়িত। আমাদের দেশে নির্বাচন হবে না, এখানে তারা তৃতীয় পক্ষ আনবে। তৃতীয় পক্ষ কী করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না। ২০০৭-এ আপনারা দেখেছেন কী করেছে। তার আগে তো জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া, এরাই তো ছিল; মানুষের তো কোনো ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি! মানুষ তো যে অন্ধকার-অন্ধকারেই ছিল! ক্ষুধার অন্ন জোগাতে পারে না। তাদের ঘর-বাড়ি ছিল না। কুঁড়ে ঘরটা পর্যন্ত ছিল না, রাস্তার পাশে থাকতে হতো। তাদের খাবার ছিল না, শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না, চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। আজকে আমি তো সবই করেছি," বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এ সময় আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

খালি জমিতে চাষ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই যে চক্রান্ত আর আজকে যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এর মাঝে আবার প্যালেস্টাইন, তাদের ওপর যে আক্রমণ ইসরাইল দ্বারা; মা-শিশুকে হত্যা করছে। হাসপাতালে তারা বোমা মারছে। ঠিক একই কাজ করছে তারেক জিয়া। হুকুম দিচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যায়, তার ওপর হামলা, সাংবাদিকের ওপর হামলা। পুলিশের ওপর হামলা, পিটিয়ে পুলিশকে হত্যা করা। সেই একই ঘটনা তারা ঘটাচ্ছে।

'বাংলাদেশে এই সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন চলবে না। আল্লাহ যদি দিন দেয়, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে, ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর আমার দেশের মানুষের ক্ষতি করবে আর দেশের মানুষকে মারবে সেটা হতে পারবে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে। ধরে এনে শাস্তি দেবো,' বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, 'আমি এটাই চাই, এই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে। এই নির্বাচন যাতে না হয়, তার যে চক্রান্ত সেই চক্রান্তের সমুচিত জবাব ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দেবো যে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago