‘খেলাঘর পাতা আছে এই এখানে’
'রূপকথা' শিরোনামের একটি পদ্যে কবি আহসান হাবীব খেলাঘর নিয়ে শিশুর কল্পনাপ্রবণ মনের দারুন এক চিত্র এঁকেছিলেন। লিখেছিলেন, 'খেলাঘর পাতা আছে এই এখানে,/ স্বপ্নের ঝিকিমিকি আঁকা যেখানে।/এখানে রাতের ছায়া ঘুমের নগর,/চোখের পাতায় ঘুম ঝরে ঝরঝর।'
মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, মূলত খেলার মাধ্যমেই শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ হয়ে থাকে। আর খেলার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে খেলনা।
শিশু যেটাতে আনন্দ পায়, সেটাই তার খেলনা। হতে পারে সেটা নিছক কোনো কাগজের টুকরা, নিতান্তই সস্তা অথবা দামি কোনো পুতুল কিংবা অন্য অনুষঙ্গ। সাধারণত শিশুর পরিবারের সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সঙ্গতি ও মানসিকতার ওপরেই নির্ভর করে কোন শিশুর হাতে কোন খেলনাটি উঠবে।
শহুরে মধ্যবিত্ত কোনো পরিবারের শিশুর হাতে থাকা খেলনা নিয়ে শিল্পী কবীর সুমন যেমন গেয়েছিলেন, 'দামী খেলনাটা কিনে দিয়ে ফের কেড়ে নেওয়া তুলে রাখা/খেলনার চেয়ে ঢের বেশি দামী খেলনা কেনার টাকা'।
কিন্তু চা বাগানের দরিদ্র শ্রমিক পরিবারে বেড়ে ওঠা ছবির এই দুই শিশু যে খেলনা দিয়ে খেলছে, তার সবগুলোই সস্তাদরের। হয়তো স্থানীয় কোনো মেলা থেকে কেনা; কোনোটা হাতে বানানো।
বৈশ্বিক সংগঠন দ্য টয় অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে খেলনার বাজার প্রতিবছরই বড় হচ্ছে। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ১০৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের খেলনা বিকিকিনি হয়েছে। ২০১৬ সালে এই বাজার ছিল ৮ হাজার ৫৪০ কোটি ডলারের।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে ২০১১ সালের দিকে যেখানে বছরে মাত্র সাত হাজার ডলারের মতো খেলনা রপ্তানি হতো, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলারে। আর এই খাতের গড় প্রবৃদ্ধির বিচারে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে তৈরি খেলনার রপ্তানি বাজার ১৫ কোটি ১৭ লাখ ডলারে উন্নীত হওয়ার কথা।
কিন্তু এসব তথ্যে কিছুই আসে যায় না প্রতিদিনের শোষণ-বঞ্চনার ভেতরে বেঁচে থাকা চা-শ্রমিক পরিবারের এই শিশুদের। তাই সস্তার সবকিছু দিয়ে খেলাঘর পেতে মাটি আর প্লাস্টিকের পুতুলের বিয়ের আসর বসিয়ে বৈষম্যের এই বাস্তব পৃথিবীতেই রূপকথার আসর বসিয়েছে তারা।
সম্প্রতি সিলেটের খাদিম নগর চা বাগান থেকে ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী শেখ নাসির।
Comments