এবার শীতে কেমন শাল
শীত চলে আসা মানেই এতদিন আলমারির এক কোণে পড়ে থাকা শীতের কাপড়গুলার কদর যেন হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। শীতকাল ফ্যাশনপ্রেমীদের প্রিয় সময়, কারণ এ সময়ে বিভিন্ন পোশাকে বিভিন্ন রকম স্টাইল করা যায়।
শীতের ফ্যাশনে বিভিন্ন সময়ে নানা পরিবর্তন আসলেও একটি পোশাক বহুকাল ধরেই ফ্যাশনে রাজত্ব করে এসেছে, আর তা হলো শাল। শালের নকশা বা উপাদানে বিভিন্ন সময়ে নানা পরিবর্তন আসলেও শীতকালে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শালের ব্যবহার দেখা যায় সবসময়।
শালেই ভরসা
ভারী শীত হোক বা হালকা শীত, একে মোকাবিলা করতে শালের জুড়ি নেই। আগেকার দিনে শীত আসার আগেই দাদি-নানিদের হাতে দেখা যেত উল। অবসর সময়ে উলের শাল, মাফলার বুনতেন তারা। এখন এই দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। ব্যস্ততার জন্য নিজেদের জন্য শাল বোনা হয় না, আবার আজকাল উলের মোটা শাল ব্যবহারের প্রচলনও নেই। ঢাকায় খুব বেশি শীত পড়ে না।
তাই এ সময় পাতলা শালই সবার প্রথম পছন্দ। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সব বয়সের মানুষের মধ্যে শাল পরার প্রচলন রয়েছে। শুধু শীতের হিমেল হাওয়া থেকে বাঁচতে নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে শীতে যেকোনো কাজে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন একটি শাল। শালের ডিজাইন আপনার স্টাইল, ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্যকে তুলে ধরে।
এবারের শীতের বাহারি শাল
শালের ধরন, উপাদান, ডিজাইন সব কিছুতেই এখন নতুনত্ব যোগ হয়েছে। বাজারে সুতি, খাদি, পশমিনা, তসর, ভেলভেট, মণিপুরি শালের চাহিদা দেখা যায়। এ ছাড়া প্যাচওয়ার্কের শাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ফ্যাশন হাউজ খুঁতের ফ্যাশন ডিজাইনার ফারহানা হামিদ বলেন, 'অন্যান্য কাজের পর কাপড় থেকে যেসব টুকরো কাপড় বের হয় সেগুলোকেই জুড়ে দিয়ে অর্থাৎ রিসাইক্লিং করে প্যাচওয়ার্ক শাল বানানো হয়। আমাদের টাই-ডাই প্যাচওয়ার্ক আছে, ফুল প্যাচওয়ার্ক শাল আছে আবার কোনো কোনো শালের একাংশে প্যাচওয়ার্ক করা।'
তিনি বলেন, 'প্যাচওয়ার্ক ছাড়াও ব্লকের এবং হাতের কাজের শাল এসেছে এবার। গল্পকথা নামের একটি শাল এবার প্রথম এসেছে যা সকলে খুব পছন্দ করেছেন। সাদা এই শালটির বর্ডারে হাতের কাজ রয়েছে। খুঁতে আরও পাওয়া যাচ্ছে মোম বাটিক, ব্লক, হাতের কাজের শাল, ফুল প্যাচওয়ার্ক, নির্দিষ্ট কোন অংশে বসানো প্যাচওয়ার্ক এবং এক কালারের ন্যাচারাল ডাইয়ের শাল।'
শীতকে সামনে রেখে ফ্যাশন হাউজ পটের বিবি বিভিন্ন ধরনের শাল এনেছে।
পটের বিবির ডিজাইনার ফোয়ারা ফেরদৌস বলেন, 'ঢাকার শীত খুব কম দিনের হয়। আমরা হাতে বোনা কটন শাল বানিয়েছি। এই বছর ভিসকস ম্যাটেরিয়ালটা ব্যবহার করছি। আমাদের প্রায় সকল শাল ইউনিসেক্স। পটের বিবির নিজস্ব প্রিন্টগুলোই সাধারণত শালে আসে। যারা বিশেষত শাড়ি পরেন না কিন্তু আমাদের প্রিন্টগুলো পছন্দ করেন তাদের কাছে এসব শালের চাহিদা অনেক। আর ইউনিসেক্স হওয়ার কারনে শীতে পুরুষ ক্রেতাদের কাছেও চাহিদা থাকে।'
বর্তমানে শাল পরার ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। এখন সব বয়সী মানুষই শাল পরতে স্বাছন্দ্যবোধ করেন। দেশীয় পোশাকের সঙ্গে যেমন শাল পরা যায় তেমনি আজকাল পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকের সঙ্গে শাল পরার প্রচলন শুরু হয়েছে। তরুণরা শালকে স্কার্ফের মত করে ব্যবহার করছেন।
এ ছাড়া নানা কায়দায় একটি শালকেই বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিনের ক্লাস, অফিস বা যেকোনো জমকালো অনুষ্ঠানে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের শাল। জমকালো অনুষ্ঠানগুলোতে ভেলভেটের ওপর কারচুপি বা এম্ব্রয়ডারি করা শাল বেছে নিতে পারেন।
শালের খোঁজ
বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউজেই পেয়ে যাবেন নানা রকমের শাল। আড়ং, খুঁত, পটের বিবি, লা রিভ, বিশ্বরঙ, দেশি দশে বিভিন্ন দামের শাল পাওয়া যায়। আড়ংয়ে ভিসকস ম্যাটেরিয়েলের শালগুলোর দাম শুরু হয় ৪৫০ টাকা থেকে। এখানে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মাঝে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন রকম শাল। পটের বিবিতে সুতি ও ভিসকস ম্যাটেরিয়েলের শাল পেয়ে যাবেন ১ হাজার ৫০ ও ১ হাজার ২০০ টাকায়। খুঁতে প্যাচওয়ার্ক শালের দাম ২ হাজার ২০০ টাকা। প্যাচওয়ার্ক ছাড়াও এখানে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে শুরু বিভিন্ন দামের শাল পাবেন। এ ছাড়া নিউমার্কেটে কম দামে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন রকমের শাল।
Comments