ভাঙ্গায় ১০ বছরে ২০ একর জমির মালিক হয়েছেন নিক্সন

Nixon_Chowdhury.jpg
মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ছবি: সংগৃহীত

১০ বছর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসন থেকে নির্বাচিত হন মাদারীপুরের শিবচরের মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। ওই সময় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার নামে কোনো জমি ছিল না। এখন শিবচরের পাশের উপজেলা ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়ায় ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ (২০ একর) জমির মালিক তিনি।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিক্সনের হলফনামায় তার ঠিকানা দত্তপাড়া, শিবচর, মাদারীপুর উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ ও চলতি বছর দেওয়া হলফনামায় তার ঠিকানা দেখানো হয় ব্রাহ্মণপাড়া, তারাইল, ভাঙ্গা, ফরিদপুর।

নিক্সন ভাঙ্গায় যে জমির মালিক হয়েছেন এর মধ্যে প্রথম পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮) তিনি ৯৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ জমি এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে (২০১৮-২০২৩) ওই জমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১০৬৪ দশমিক ০৫ শতাংশ জমি। বর্তমানে ওই এলাকায় তার জমির পরিমাণ ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিক্সন ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়ায় নির্মাণাধীন দোতলা ভবন বাবদ দেখিয়েছিলেন ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ওই ভবনের দাম দেখানো হয়েছে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি নতুন করে একতলা অফিস রুম, মিটিং রুম, রান্না ঘার, ডরমিটরি, সিসি রাস্তা, সীমানা প্রাচীর ও পুকুর ঘাট খাতে ৩৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার কৃষি জমির আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছিল ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৯১০ টাকা। যা পাঁচ বছরে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ২৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার ১৬০ টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী নিক্সনের স্ত্রী ঢাকার বনানী ও গুলশানে দুটি ফ্লাটের মালিক ছিলেন। এবার ওই দুটি ফ্লাটের পাশাপাশি গুলশানে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের নতুন একটি ফ্লাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে পরাজিত করে রাজনীতিতে নবাগত নিক্সন চৌধুরী চমক সৃষ্টি করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী কৃষি, নীপা পরিবহন লি., রিতা কনস্ট্রাকশন লি., স্বাধীন বাংলা ফিলিং এন্ড সার্ভিসিং স্টেশন, এন ডিইরি ফার্ম, এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজ ফার্মের সম্মানী বাবদ তার বার্ষিক আয় ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৫ টাকা দেখানো হয়েছে।

গত পাঁচ বছরে এন ডেইরি ফার্ম, এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজের মালিক হয়েছেন তিনি। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তার বার্ষিক আয় ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৫ টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী নীপা পরিবহন লি., রীতা কনস্ট্রাকশন লি. থেকে নিক্সনের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ দুটি খাত থেকে আরও ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বেড়ে এখন বার্ষিক আয় ১২ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্বাধীন বাংলা ফিলিং এন্ড সার্ভিসিং স্টেশন থেকে পাঁচ বছর আগে আয় করতেন ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫৬ টাকা যা বর্তমানে বেড়ে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৫০ টাকা হয়েছে।

কৃষি ও ব্যবসায় তার প্রসার বাড়লেও ব্যাপকভাবে কমেছে ব্যাংক থেকে পাওয়া মুনাফা। পাঁচ বছর আগে এ খাত থেকে তার আয় ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৭ টাকা। তা চলতি বছর কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৯০৩ টাকা।

আয় কমেছে জাতীয় সংসদের প্রাপ্ত পারিতোষিক ও অন্যান্য খাতে। পাঁচ বছর আগে এ খাত থেকে তার আয় ছিল ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৩৮ টাকা। এখন কমে হয়েছে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৫ টাকা।

তবে আয় বেড়েছে স্টক ব্যবসায়। পাঁচ বছর আগে ছিল ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ টাকা। বর্তমানে বেড়ে ১৯ লাখ ৫০ হাজার হয়েছে।

অ্যাপার্টমেন্ট বাবদ আয় বেড়েছে নিক্সনের উপর নির্ভরশীলদের। পাঁচ বছর আগে তার ওপর নির্ভরশীলদের এ খাতে আয় ছিল ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৭৪ টাকা। তা বেড়ে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৪৭২ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের ব্যাংক মুনাফা পাঁচ বছর আগে ছিল মাত্র ২১ হাজার ৬৮ টাকা। এ বার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৮ টাকা।

গত হলফনামা অনুযায়ী নির্ভরশীলদের মাস্ট প্যকেজিং লিমিটেড থেকে সম্মানী বাবদ ২৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার আয় দেখানো হয় যা চলতি বছর কমে ২১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের হলফনামায় ইত্তেফাক পাবলিকেশন থেকে কোনো আয় দেখানো না হলেও এবার সেখান থেকে ছুটি ভাতা নামে চার লাখ টাকা আয় দেখানো হয়েছে।

স্টক ব্যবসায় পাঁচ বরে আগে নির্ভরশীল কেউ যুক্ত না থাকলেও নতুন হলফনামা অনুযায়ী এখাতে মেয়ের বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

অস্থাবর সম্পত্তি কমেছে নিক্সন চৌধুরীর। তবে নতুন এফডিআরে যুক্ত হয়েছেন তার স্ত্রী। পাঁচ বছর আগে নিক্সন চৌধুরীর নামে এফডিআর ছিল ৭০ লাখ টাকা। এবার তার নামে কোন এফডিআর নেই।

তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী স্ত্রীর নামে কোনো এফডিআর না থাকলে এবার স্ত্রীর নামে ২৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫১ টাকা এফডিআর দেখানো হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিক্সনের নিজের নামে নগদ ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫৭ টাকা থাকলেও তা এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ৮৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৪১ টাকা দেখানো হয়। তা এবার বেড়ে ১ কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা নির্ভরশীলদের নামে কোনো নগদ টাকা না থাকলেও এবার নগদ ৭৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

গত হলফনামায় নিক্সনের নামে ব্যাংকে জমা ছিল ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫৪ টাকা তা এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকা।

প্রাইভেট কোম্পানি নীপা পরিবহন লিমিটেড ও রিতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডে বিনিয়োগ ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে। স্বাধীন বাংলা ফিলিং স্টেশনে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৮ টাকার শেয়ার কমে ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৯১৭ টাকা হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এন ডেইরি ফার্ম, এন ডাক ফার্ম এবং এন ফিশারিজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকলেও এবার তিনি ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানে ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৫ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার স্টক ব্যবসায় কোনো বিনিয়োগ ছিল না। এবার তিনি স্টক ব্যবসায় ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ৫৫ লাখ ১ হাজার ৩৮৪ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি ছিল এবার তার নামে ৯১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৬ টাকা দামের একটি জিপ গাড়ি দেখানো হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী গতবারের তুলনায় বেড়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি কোনো আগ্নেয়াস্ত্র দেখানি। এই বছর হলফনামায় তার নামে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের বন্দুক, পিস্তল দেখানো হয়েছে। এবার তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন একটি পিয়ানো কিনেছেন।

গত হলফনামায় জীবন বিমায় বিনিয়োগ ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৫ টাকা। এবার এ খাতে কোন টাকা দেখানো হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গতবার দেখানো হয়েছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার।

Comments

The Daily Star  | English

Moody's downgrades Bangladesh's ratings to B2, changes outlook to negative

“The downgrade reflects heightened political risks and lower growth, which increases government liquidity risks, external vulnerabilities and banking sector risks, following the recent political and social unrest that led to a change in government,” said Moody’s.

1h ago