বিএনপির সামনে ২ চ্যালেঞ্জ
নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা বাকি আর এক সপ্তাহ। এমন সময়ে এসে বিএনপির সামনে এখন দুই চ্যালেঞ্জ। একটি হলো নেতাকর্মীদের দলত্যাগ রোধ করা। অপরটি হলো চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন করা।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, আন্দোলন বানচাল করতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।
দলটির নেতারা আরও বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাদের একটি অংশকে স্বতন্ত্র বা ছোট-কম পরিচিত দলের নেতা হিসেবে সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিয়ে দল ছাড়তে প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশের হামলা ও ভয়ভীতির মুখে আমাদের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ। সরকার আমাদের দলের কয়েকজন নেতাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়াতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে। কিন্তু তারা সফল হবে না।'
'বিএনপিতে শীর্ষ নেতা, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সবার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং এই ঐক্য শক্তিশালী', বলেন তিনি।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, বিএনপি নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক হামলা তাদের বিক্ষোভ থেকে দূরে থাকতে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার সরকারি প্রচেষ্টার অংশ।
অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হামলা চলছে এবং নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের হামলা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য একাধিক বৈঠক করেন।
দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন, ৩০ নভেম্বরের পর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা উচিত।
শীর্ষ নেতাদের মতে, দীর্ঘদিন এ ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া দলের পক্ষে কঠিন।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে প্রতি সপ্তাহে চার দিন হরতাল বা অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। দলটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছে।
বিক্ষোভ নাকি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে, এখন তাই ভাবছে বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মতে, ৩০ নভেম্বরের পর কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসবে—এটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু পরিস্থিতির প্রয়োজনে হরতাল বা অবরোধও ডাকা হতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, দলটি ৩০ নভেম্বর হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কিছু নেতা ওই দিন রাজধানীতে ইসি সচিবালয় বা সারাদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় ঘেরাও করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা মনে করছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও শরিকদের মধ্যে বিভেদ দৃশ্যমান হবে।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি।
তবে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ এখনো শরিকদের সঙ্গে 'আসন ভাগাভাগি' প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারায় সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে।
তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধের চেয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ পর্যবেক্ষণ করাই ভালো।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে ইসি ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। তারা আরও বলেছে, সরকারের ইচ্ছানুযায়ী ইসি তফসিল ঘোষণা করেছে।
আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা অংশ নেয়, যে নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আছে।
Comments