তফসিল বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন: রিজভী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল দেশের ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করায় স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে বিরোধী রাজনীতির ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
শনিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।
নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশের ১২ কোটি ভোটার নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে যারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং আগামী নির্বাচন তদারকির জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে নেমেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, 'ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশসহ সকল রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর জাতীয়তাবাদী শক্তি, বিরোধী দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্মূল করে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশব্যাপী বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের অভিযান চালাচ্ছেন।'
তিনি দাবি করেন, বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তারে নেকড়ের মতো জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে পুলিশ।
রিজভী বলেন, 'পুলিশের বিস্ময়কর হীন প্রচেষ্টা প্রমাণ করেছে যে, শেখ হাসিনার সরকার একটি ধ্বংসাত্মক ও প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করতে সহিংস হয়ে উঠেছে এবং একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অতীতের মতো তিনি বাংলাদেশের জনগণকে আটকে রেখে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে ভোট ডাকাতির উৎসবকে সফল করতে চান।'
বিএনপি নেতা বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের 'গায়েবি' মামলায় গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ও গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের 'মিথ্যা' মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও 'গ্রেপ্তার বাণিজ্যে' লিপ্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'শেখ হাসিনা তাদের (পুলিশকে) গ্রেপ্তার বাণিজ্যের সনদ দিয়েছেন। কার্যত দেশে আইনের শাসন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভুতুড়ে মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।'
রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যেহেতু জনগণ তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য রাস্তায় নেমেছে, তাই নিপীড়ন চালিয়ে সরকার তার পতন প্রতিরোধ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, 'নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে সরকারের পতন অনিবার্য। অবিলম্বে আপনাদের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাহার করুন। নির্বাচন স্থগিত করুন এবং প্রথমে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ এই একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করবে।'
শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপির ৩০২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় বিএনপির ১৩ হাজার ২১০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Comments