বিএনপির ‘তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলন’ সফল হওয়া যে কারণে কঠিন

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করে এলেও সেই আন্দোলন যে এবারও সফল হচ্ছে না বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যে সংবিধানে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না—সেটি এখন মোটামুটি নিশ্চিত।

অথচ এই একই দাবিতে আন্দোলন করে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করতে বিএনপি সরকারকে বাধ্য করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।

তারা তখন আন্দোলনে জয়ী হয়েছিল বলে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এরপরে ২০০৬-০৭ সালের আন্দোলনে জয়ী হওয়ার ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনেও জয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

কিন্তু, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের আন্দোলনে সফল না হওয়ায়, অর্থাৎ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ফিরিয়ে আনার দাবি আদায় করতে না পারায় ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিলেও করুণভাবে হেরে যায়। যদিও ওই দুটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক আছে। সেটি অন্য প্রসঙ্গ।

বাস্তবতা হলো, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের বিধান পুনর্বহাল করতে না পারলে বিএনপি যে নির্বাচনে জয়ী হবে না এবং পুনরায় সরকার গঠন করতে পারবে না, সেটি এখন মোটামুটি পরিষ্কার।

প্রশ্ন হলো, বিএনপির আন্দোলন কেন সফল হচ্ছে না এবং ১৯৯৫-৯৬ সালে যে দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলন সফল হলো, এখন একই দাবিতে বিএনপির আন্দোলন কেন ব্যর্থ হচ্ছে?

শুধু এই একটি দাবিই নয়, ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে অন্য যেকোনো দাবি আদায়ের আন্দোলন করেই এখন যে সফল হওয়া কঠিন এবং কখনো কখনো অসম্ভব—তার কারণ কী?

কারণ, ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা মানুষের শক্তির মধ্যে পার্থক্য এত বেশি যে ক্ষমতার বাইরে থাকা মানুষ এখন চাইলেই ক্ষমতাবানদের কাছ থেকে কোনো দাবি আদায় করতে পারে না। ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীনের মাঝখানে যে শক্তিগুলো ছিল, সেগুলোও এখন ক্ষমতার অংশ। যেমন: জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় পরিচালিত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী, প্রশাসন, এমনকি গণমাধ্যম ও সিভিল সোসাইটি। ফলে দাবি আদায়ে ক্ষমতাহীনদের কেবল ক্ষমতাবানদেরই নয়, একইসঙ্গে তাদেরকে সেইসব শক্তিকেও মোকাবিলা করতে হয়, যাদের নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার কথা ছিল।

বিদেশনির্ভর আন্দোলন

বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনীতি এবং নেতাকর্মীদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয়, আমেরিকা বুঝি তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। প্রশ্ন হলো, কোনো বিদেশি রাষ্ট্র কি আসলেই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের সরকার ফেলে দিয়ে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারে?

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো দেশে এই ধরনের বিদেশি তৎপরতা যত সহজ, বাংলাদেশে কি তত সহজ? তারচেয়ে বড় প্রশ্ন, পৃথিবীর অসংখ্য দেশেই গণতন্ত্র-মানবাধিকার-বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক সুরক্ষার বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়া দারুণভাবে নিয়ন্ত্রিত, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ—এমনও অনেক রাষ্ট্র আছে। কিন্তু সেইসব দেশের নির্বাচন ও সরকারব্যবস্থা নিয়েও কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৎপর?

পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই 'গণতন্ত্র' নেই। নির্বাচন বলে কিছু নেই। সেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী? ইসরায়েল প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যা করে, যে ধরনের গণহত্যা চালায়, সেটি মানবাধিকারের কোন সংজ্ঞায় পড়ে? অথচ যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলকে সর্বান্তকরণে সমর্থন দিয়ে আসছে, সেটি কি মানবাধিকারের বিপক্ষে তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান নয়?

তারা ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পক্ষে অথচ বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে তারা খুব উদ্বিগ্ন—এই দ্বৈতনীতির কারণ কী? তারা কি সত্যিই বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন? বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকলে তার কী লাভ এবং না থাকলে কী ক্ষতি? মূলত পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ। ব্যবসার হিসাব।

সাম্প্রতিক একটি খবরে চোখ বুলানো যাক। দেশে গ্যাসের চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়ানোর জন্য এবার মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ২০২৬ সাল থেকে পরবর্তী ১৫ বছর ধরে এলএনজি সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

গত ৮ নভেম্বর রাজধানীতে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের চার বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সেটা আমরা এগিয়ে নিতে চাই। এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এলএনজির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিটি ১৫ বছর বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।' (প্রথম আলো, ৯ নভেম্বর ২০২৩)

মনে রাখা দরকার, এই চুক্তিটি এমন সময়ে হলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বৈরিতা বেশ স্পষ্ট। যখন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতরা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সমালোচনায় মুখর। এমনকি তাকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়ারও দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। যখন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে, গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এবং বিবিসির মতো একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন—সেই সময়ে এরকম একটি চুক্তি সই হওয়া কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা?

বাংলাদেশের ক্ষমতায় কে থাকলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ? নাকি বাংলাদেশ থেকে সে কতটুকু সুবিধা নিতে পারলো, তার স্বার্থ কে রক্ষা করতে পারলো বা পারবে—সেটি তার প্রধান বিবেচ্য? অতএব বিএনপি যদি মনে করে যে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে দিয়ে আমেরিকা তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে—তাহলে বুঝতে হবে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় কে থাকলো, এখানে গণতন্ত্রের আকার কেমন, মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে তারা কতজনের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিলো, তার কোনোটিই তার অভ্যন্তরীণ, পররাষ্ট্র এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের বাইরে নয়। অতএব যারা তার স্বার্থ রক্ষা করবে, আমেরিকা তার সঙ্গে আছে। এখানে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলো কি না, তাতে তার কিছু যায় আসে না।

বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট

বিএনপির চেয়ার‌পারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান লন্ডনে। তিনিও সাজাপ্রাপ্ত। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহিরউদ্দীন স্বপনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক নেতাই জেলে।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে মাঠে সক্রিয় সাতজনের মধ্যে মহাসচিবসহ তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতাই হত্যা ও নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি। সক্রিয় অন্য চারজনও গ্রেপ্তার এড়াতে এখন আত্মগোপনে। বয়সের কারণে নিষ্ক্রিয় চারজন। আইনি জটিলতায় ভারতে আটকা একজন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন চার সদস্য।

স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র নেতাদেরও বিরাট অংশ হয় জেলে, না হয় আত্মগোপনে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় ও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দাবি আদায় করা কঠিন।

বলা হয়, বিএনপি মূলত সমর্থকনির্ভর দল। ফলে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল যখন ক্ষমতায় এবং পুলিশ-প্রশাসনসহ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র যখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে, তখন যেকোনো দাবি আদায়ের আন্দোলন সফল করা কঠিন, বিশেষ করে দলের নীতিনির্ধারকদের বিরাট অংশ যখন কারাবন্দি ও আত্মগোপনে।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্ষমতা ও নজরদারি

সাম্প্রতিক বছরগুলোর খুব সাধারণ প্রবণতা হলো, ক্ষমতাবানরা তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে এবং ক্ষমতার চূড়ান্ত প্রয়োগ করে। একটা সময় মিছিল ও সমাবেশে লাঠিপেটা এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং তাকে কিছু লোকের আহত হওয়াই যেখানে বড় খবর ছিল, সেখানে এখন সরাসরি গুলি করা এবং একসঙ্গে বেশ কয়েকজনের মরে যাওয়াও 'বড় খবর' নয়।

ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া পূর্ববর্তী যুগের রাজনৈতিক আন্দোলন আর এই সময়ের রাজনৈতিক আন্দোলন এক নয়। এখন যেকোনো আন্দোলন করে সফলতা পাওয়া কঠিন। এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যেকোনো বিষয়ে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা যেমন সহজ, তেমনি সেই ক্ষেপে যাওয়া মানুষকে ভয় দেখিয়ে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা আরও সহজ। কেননা নাগরিকরা এখন প্রতিনিয়তই নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে ফোনে কী কথা বলে, কী পরিকল্পনা করে, কী লেখে বা কী বলতে চায়—তার উপর রাষ্ট্রের নানা বাহিনীর নজর।

২০২১ সালের জুলাই মাসে ইসরায়েলে তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং আরও অনেকের ওপর গোপন নজরদারি নিয়ে এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট নিয়ে তোলাপাড় শুরু হয়। যেসব দেশে এই প্রযুক্তি ব্যাপকহারে ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হয়েছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের নাম না এলেও বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি চালিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকসহ অনেকের মোবাইল ফোন কথোপকথনের রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে।

মানুষ কেন রাস্তায় নামবে?

আপাতদৃষ্টিতে বিএনপি এখন নেতৃত্বশূন্য। ফলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পক্ষে ব্যাপক জনমত থাকলেও এই দাবি আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। অতএব সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের গণজাগরণ বা গণঅভ্যুত্থান তৈরি না হলে টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ যে সরকার গঠন করবে—সেটি মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিএনপির পক্ষে দেশের দলনিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ কি দলে দলে রাস্তায় নেমে আসবে? তাদের লাভ কী?

মানুষ এখন অনেক বেশি বৈষয়িক এবং রাষ্ট্রীয় নানা নরজদারির কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত। নিতান্ত কোনো দলের নেতা বা বোনাফাইড কর্মী না হলে সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামতে চায় না।

আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে সঙ্গে জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি, প্রযুক্তির নজরদারি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হওয়া কিংবা অসম্মানিত হওয়ার ভয় এবং সর্বোপরি পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অধিকাংশ মানুষ এখন সাদাকে 'সাদা' বলতে পারলেও কালোকে 'কালো' বলতে ভয় পায়। কেননা কালোর পক্ষে যুক্তি ও ক্ষমতা এত বেশি এবং কালোকে 'ডিফেন্ড করার' লোকের সংখ্যা এত বেশি যে, কেউ একজন কালোকে 'কালো' বললে তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমণের শঙ্কা তৈরি হয়। যে কারণে মানুষ এখন পারতপক্ষে চুপ থাকার নীতি অবলম্বন করে। মনে মনে এই ধরনের সান্ত্বনা খোঁজে:

১. নিজে ভালো তো দেশ ভালো।

২. যে যা করে করুক, যে যা বলে বলুক, আমার কী দরকার—আমার তো ক্ষতি হচ্ছে না।

৩. দেশ গোল্লায় গেলে যাক, দেশ কি আমার একার?

৪. রাজনীতি নিয়ে আমার এত ভাবার দরকার কী, আমি তো বাজার করতে পারছি।

৫. গণতন্ত্র দিয়ে আমি কী করব, যদি ভাত খেতেই না পারি। ইত্যাদি।

এরকম একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী সচেতনভাবে মেরুদণ্ডহীন প্রাণীতে পরিণত হয়েছেন। তারা এখন নির্লিপ্ত। ইনঅ্যাকটিভ। নিজের মতো করে ভালো থাকার নীতিতে বিশ্বাসী।

ভালো থাকার সংজ্ঞাটিও তারা সীমিত করে এনেছেন। সেটি হলো চাকরি বা ব্যবসা করবেন। টাকা উপার্জন করবেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে মোটামুটি শান্তিতে, নির্ঝঞ্ঝাটে বসবাস করবেন। বছরে দুয়েকবার এখানে-ওখানে ঘুরতে যাবেন। সন্তানকে একটা ভালো স্কুলে পড়াবেন। তারপর একসময় বৃদ্ধ হয়ে মরে যাবেন। জীবনের প্রতি, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি, দেশের পরিবেশ-প্রাণপ্রকৃতির প্রতি আর কোনো দায় নেই, দাবি নেই। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট আয়ুর যাপন। জীবনের উদযাপন নয়।

যে কারণে ক্ষমতায় কে থাকলো, তার কাছে তারচেয়ে বড় প্রশ্ন চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজের দাম কেমন। নিত্যপণ্যের বাজার ইস্যুতে সরকার এখন বেকায়দায় আছে সেটি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু এই ইস্যুতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য, তার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল সরকার গঠন করলেই যে দেশের সব সমস্যা ও সংকটের নিরসন হয়ে যাবে—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

ফলে এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে বিএনপিকে ছাড়াই আরও একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এবং বিএনপি ও তার শরিকদের আরও অনেক দিন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দাবি আদায় করতে পারবে কি না, সেটি নির্ভর করবে অনেকগুলো 'যদি, কিন্তু'র ওপরে। 

আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: COP29 draft proposes $250b a year

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

1h ago