প্রকৃতির মতো মন খারাপের কত রঙ

ছবি: নাদিয়া রহমান

দেশের বাইরে পড়তে আসলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সাধারণ এবং স্বাভাবিক বিষয় হলো- মন খারাপ হওয়া। মন খারাপের তো আর এ মহাদেশ সে মহাদেশ নেই, তবে নিজের বাড়ি, চেনা জগত থেকে দূরে থাকলে ছোটখাটো বিষয়ও অনেক ভারী মনে হয়। বিশেষ করে পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে, বিশেষ দিনগুলোয় পরিবারের কাছে না থাকলে যতই ভিডিও কলে কথা হোক না কেন, একটা অপূর্ণতা থেকেই যায়। 

একটা সময় শুনেছি মানুষের মনের ওপর আবহাওয়ার প্রভাব অনেক বেশি। দেশ ছেড়ে এখানে আসার পর এটা বুঝতে পেরেছি ভালোভাবে। অক্টোবর থেকেই যে মেঘলা আকাশ, একটানা নিশ্চুপ বৃষ্টি আর তুষারপাত শুরু হয় যে, একটু রোদের দেখা মেলা ভার। এসময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিত্যদিন বই নিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগার কথাও না। সকালের ক্লাসগুলো যারপরনাই ভারী মনে হয়। সবকিছু মিলিয়ে ক্লাস শেষে ফিরতি পথে কারও সঙ্গে দুটো কথা বলার সংস্কৃতি এখানে খুব একটা নেই। আর যে জিনিসটা বেশি, বারবার মনে পরবে তা হলো- দেশের খাবার। শীত মৌসুমে বাড়িতে কত কিছুই না হতো। এখানে দিনভর কাজ-বই পড়ার পর এত সময়ই বা কোথায়। কিছু সহপাঠীকে দেখেছি দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু গবেষণার কাজে আর যাওয়া হয়নি। তাই মন খারাপের কতই না উপকরণ মাঝেমধ্যেই নজরে আসবে। 

এ সময়গুলোতে কাছের বন্ধু বা সহকর্মীদের কথা স্বীকার করতে হয়। ব্যস্ততা তো এখানে সবারই। তারপরও কিছু বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ হয়, যৌক্তিক আলোচনা হয় বা কখনো একসঙ্গে লাইব্রেরিতে পড়তে যাওয়া। শীত মৌসুম না থাকলে বিকেলে, সন্ধ্যায় কোথাও হাঁটতে বেরনো, কখনো জিনিসপত্র জোগাড় করে ওয়ান ডিশ আয়োজন করা, এভাবেই চলে মন খারাপের মরশুম। 

এ ছাড়া, নিজেকেও বেশিরভাগ সময় মন ভালো করার উপায় খুঁজে নিতে হয়। ভালো কোনো চলচ্চিত্র, শখের কাজগুলো করা, যেমন: জানালার পাশে ছোট গাছ, বাগানের যত্ন নেওয়া কিংবা রান্না করা। আমাদের ছোট গ্রুপের কয়েকজনের কথাই ধরা যাক। মন খারাপ হলে একজন বিভিন্ন রেসিপি দেখে রান্নার চেষ্টা করেন, আরেকজন রঙতুলি নিয়ে বসে পরেন। আমি রান্না কিংবা রঙতুলির ধৈর্য রাখি না। চেষ্টা করি জিমনেশিয়ামে যেতে, বিভিন্ন স্পোর্টস অনুশীলন করতে। কিংবা কখনো সেই ছোটবেলার মতো ডায়েরি লিখতে। জানালার পাশেই আমার পড়ার টেবিল। এখানে বসে ডায়েরি লিখতে আর বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতেই শীত-বসন্ত-গ্রীষ্ম-শরৎ চোখে পড়ে। কখনো সব সাদা তুষারে ঢাকা, কোথাও কেউ নেই, একটা কাকপক্ষীও না। এই কিছুদিন আগেই সহপাঠীরা সবাই সন্ধ্যার ক্লাস শেসে হই-হুল্লোড় করে হেঁটে ডর্মে ফিরেছি। সূর্য তখনো ডুবেনি। আর এখন ৬টা না বাজতেই চারিদিক অন্ধকার। আবার ফের কিছুদিন পর বসন্তে গাছেদের নিজেদের পাতা জোগাড়যন্ত্রের কাজ চলে। মে থেকে জুলাই মাস নাগাদ গ্রীষ্মে সারা দিন-রাত বিভিন্ন পোকার একটানা শব্দ। এই মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতই এগুতে থাকে বাড়ি ফেরার পঞ্জিকার পাতা।  

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।
 

Comments

The Daily Star  | English

Record toll collection on Padma and Jamuna bridges

Padma Bridge generated a record toll revenue of Tk 54.32 crore, while Jamuna Tk 41.81 crore

32m ago