আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

৭৭১ রানের ম্যাচে শেষ ওভারের উত্তেজনায় জিতল অস্ট্রেলিয়া

৩৮৮ রানও আর নিরাপদ নয়! সে বার্তাটাই ধর্মশালায় দিল নিউজিল্যান্ড। অজিদের গড়া বিশাল সংগ্রহের নাগালেই চলে এসেছিল কিউইরা।

৭৭১ রানের ম্যাচে শেষ ওভারের উত্তেজনায় জিতল অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড

৩৮৮ রানও আর নিরাপদ নয়! ধর্মশালায় সেই বার্তাটাই যেন দিল নিউজিল্যান্ড। অজিদের গড়া বিশাল সংগ্রহের নাগালে চলে এসেছিল কিউইরা। রাচিন রবিন্দ্রর সেঞ্চুরির পর জিমি নিশামের শেষের হিটিংয়ে শেষ বল পর্যন্ত কিউইদের জয়ের আশা টিকে ছিল, রোমাঞ্চ জাগিয়েও মেলেনি সমীকরণ। অ্যাডাম জ্যাম্পা, প্যাট কামিন্সদের বোলিংয়ে শেষমেশ কিউইরা আটকে গেছে ৫ রান দূরত্বে। 

বিশাল লক্ষ্যতাড়া করতে নেমে ঝড়ো শুরু পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। নিয়মিত বাউন্ডারি খুঁজে নিয়ে ষষ্ট ওভারেই পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায় ব্ল্যাক ক্যাপসরা। তবে ইনফর্ম ব্যাটার ডেভন কনওয়েকে তারা হারিয়ে ফেলে কিছুক্ষণ পরই। ৮ম ওভারে ছয়টি চারে গড়া ১৭ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন কনওয়ে। তার ওপেনিং সঙ্গী উইল ইয়াংও ভালো শুরু পেয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৪টি চার ও ১ ছয়ের ৩৭ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে ৭২ রান তুলে ফেললেও গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় কিউইরা। 

রাচিন রাবিন্দ্র ও ড্যারিল মিচেল মিলে পরে দুর্দান্তভাবে তাদের খেলায় টিকিয়ে রাখেন যদিও। ১৪তম ওভারেই শতরান পেরিয়ে যায় তারা। মিচেল ৪২ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলার পর রবিন্দ্রও তার ফিফটি পেয়ে যান ৪৯ বলে। কিন্তু ফিফটির পরপরই মিচেল ফিরে যান অ্যাডাম জ্যাম্পাকে মারতে গিয়ে। ৫১ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে মিচেল ফিরছেন যখন, নিউজিল্যান্ড ১৬৮ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে। রবিন্দ্রর সঙ্গে পরে অধিনায়ক টম ল্যাথাম এসে যোগ দিলে ৩০তম ওভারে আর কোন উইকেট না হারিয়ে দুইশ পেরিয়ে যায় কিউইরা। 

কিন্তু ল্যাথামের ইনিংসও ২১ রানের বড় হয়নি। জ্যাম্পার বলে ল্যাথামের ফেরার পর ১২ রানে গ্লেন ফিলিপসও আউট হয়ে যান। ২৬৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। যদিও রাবিন্দ্র খেলার গতিতে পরিবর্তন আনেননি। নিশামের সাথে মিলে বাউন্ডারি বের করে আস্কিং রেট নাগালে রাখেন। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৭৭ বলেই সেঞ্চুরি পেয়ে যান রবিন্দ্র। সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার, কামিন্সের বলে ধরা খেয়ে যান বাউন্ডারিতে। ৮৯ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ১১৬ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান তিনি। নিশাম এসে ততক্ষণে ভালো শুরু পেয়ে যান, কিন্ত সঙ্গীর অভাব পড়ে যায় তার। স্যান্টনার ১৭ ও হেনরি ৯ রান করেই বিদায় নেন। বোল্ট এসে তার পাশে দাঁড়াতে পারলে নিশাম জয়ের আশা টিকিয়ে রাখেন ভালোমতোই। 

শেষমেশ তিন ওভারে ৪৩ রানের সমীকরণটাকেও তারা টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। ৪৮তম ওভারে স্টার্ককে এক ছয়ের সাথে মোট ১১ রান আনেন। পরের ওভারে বোল্ট ছয় মেরে দেন হ্যাজেলউডকে, এরপর নিশাম চার মেরে দিলে মোট আসে ১৩ রান। শেষ ওভারের ১৯ রানের প্রয়োজনে বোলিংয়ে এসে স্টার্ক দ্বিতীয় বল করতে গিয়ে ওয়াইড বাইয়ে পাঁচ রান দিয়ে দেন। ৫ বলে ১৩ রানের দরকারটা পরের তিন বলে তিনটি ডাবলস বের করে ২ বলে ৭ এ নিয়ে আসেন নিশাম। কিন্তু আবার দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান নিশাম। তিন চার ও তিন ছয়ে ৩৯ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে বিমর্ষ নিশাম ফিরে যান, শেষমেশ পাঁচ রানের দূরত্বে আটকে যায় কিউইরা। 

এর আগে নিউজিল্যান্ড টসে জিতে বোলিং নেওয়ার পর ম্যাট হেনরির প্রথম ওভারে দুই চারে শুরু করেন ওয়ার্নার। পরের ওভারে এসে ডানহাতি এই পেসার করে বসেন দুই নো বল। ব্যস! হেডের হাত খুলে যায়। দুটিতেই ছক্কা মেরে পরে আতঙ্কে পরিণত হন তিনি। ফর্মে থাকা ওয়ার্নারও ছিলেন তার পুরো ছন্দে। আক্রমণের মন্ত্র জপে ভালো বলগুলোতে তো বাউন্ডারি বের করেনই, নিজেদের জায়গামতো পেলে আর ছাড়ই দেননি! একের পর এক বাউন্ডারিতে প্রতিপক্ষকে দিশেহারা বানিয়ে ফেলেন।

ইনিংসের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডকে চিন্তা করতে হচ্ছিল ডেথ ওভারের বোলিংয়ের মতো, রক্ষণেই মন দিতে হচ্ছিল। এমনকি হেডের ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে ঝুঁকিপূর্ণ শট রুখতে মিড অফের ফিল্ডার বাইরে রেখে বল করছিলেন বোল্ট। আগাম সতর্ক হয়ে ইয়র্কারের চেষ্টার সঙ্গে স্লোয়ার মিশিয়ে রক্ষণে সফলও হন এই বাঁহাতি পেসার। পাওয়ারপ্লেতে ৪ ওভার করে ৩০ রানের বেশি দেননি! হেনরির ৩ ওভারেই আসে ৪৪ রান। লোকি ফার্গুসন এসে ওয়ার্নারের হাতে মার খেয়ে বোলিং শুরু করেন ১৯ রানের ওভার দিয়ে। 

কোনোমতেই বাউন্ডারি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাচ্ছিল না নিউজিল্যান্ড। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ১২টি চারের সঙ্গে ১০টি ছয় মারেন দুই অজি ওপেনার। ৪.১ ওভারে পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া দলটি শতরান ছাড়িয়ে যায় ৮.৫ ওভারেই। সে ওভারেই ওয়ার্নার তার ফিফটি পেয়ে যান ২৮ বলে। এরপর হেডের ফিফটি আসে মাত্র ২৫ বলে! ১১৮ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ করার পরও তাদের উড়ন্ত যাত্রায় গতি কমেনি।

শেষমেশ ফিলিপস এসে একটি বাউন্ডারি ছাড়া ওভার করতে পারেন। সেটি আসে ইনিংসের ১৩তম ওভার পরে। এরপর টানা আরও চার ওভার বাউন্ডারিবিহীন করতে পারে কিউইরা। আঁটসাঁট লেংথের সঙ্গে দারুণ নিয়ন্ত্রণে দুর্দান্ত বোলিং করেন ফিলিপস। এমনকি প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ১০ ওভার করার সুযোগ হয় তার! টানা ১০ ওভারের সেই স্পেলে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরান ফিলিপস। 

ফিরতি ক্যাচে ৬৫ বলে ৮১ রান করা ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে ফিলিপস ভাঙেন ১৭৫ রানের ঝড়ো জুটি। ৫ চার ও ৬ ছক্কার পর থামে ওয়ার্নারের ইনিংস। হেড এর আগেই আউট হতে পারতেন। ব্যক্তিগত ৭০ রানে থাকা অবস্থায় মিচেল স্যান্টনার ফিরতি কঠিন ক্যাচে হাতে জমাতে পারেননি বল। ৭৫ রানে থাকাকালে মিডউইকেটে ফিলিপসের হাত ফসকে বেরিয়ে যায় হেডের দ্রুতগতির শট।
 

জীবন পেয়ে মাত্র ৫৯ বলেই সেঞ্চুরি হাঁকান বাঁহাতি হেড। তাকেও থামিয়ে দেন ফিলিপস। ১০ চার ও ৭ ছক্কার সাহায্যে ৬৭ বলে ১০৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে হেড হন বোল্ড। দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে কিউইরা পাল্টা আক্রমণ করে অজিদের। মিচেল মার্শ স্পিনের বিপরীতে স্ট্রাইক বদলাতেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। অন্যপাশে, স্টিভেন স্মিথ ঝুঁকি নিয়ে মিডঅফের উপর দিয়ে খেলতে গেলে কাটা পড়েন আগেভাগে।
 

মারনাস লাবুশেন এসে ব্যক্তিগত ১ রানেই দিয়ে ফেলেন ক্যাচ। থার্ডম্যানে সেটি ড্যারিল মিচেল ফেলে দিলেও পরে স্মিথের মতোই ১৮ রানেই থেমে যায় লাবুশেনের ইনিংস। তার আগে মার্শের মন্থর ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে স্যান্টনারের বলে বোল্ড হয়ে। ৫১ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে তিনি মারেন মাত্র ২ চার।
 

বড় কোনো জুটি গড়তে না পেরে মাঝের ৯৯ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে অজিরা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে এরপর ঝড় তোলেন আবার। নিউজিল্যান্ডের লাগাম হয়ে যায় আলগা। তরতর করে বাড়তে থাকে অজিদের রান। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে আউট হন আগের ম্যাচে বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল।

ব্যথায় ফার্গুসনের শেষদিকে বোলিং করতে না পারা নিউজিল্যান্ডের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দেয়। ম্যাক্সওয়েলের পর রান উৎসবে সামিল হন জশ ইংলিস ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কামিন্স তো ১৪ বলেই মারেন ৪ ছক্কা ও ২ চার। ৩৭ রানের ক্যামিও খেলে ফেরার পর ইংলিসও চলে যান ২৮ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে।

ইংলিসের পর একই ওভারে বোল্ট ফিরিয়ে দেন অ্যাডাম জ্যাম্পাকেও। শেষ ওভারে মিচেল স্টার্কও আউট হয়ে গেলে চার বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে অস্ট্রেলিয়া। ২৩ ওভারে দুইশ ছুঁয়ে ফেলা অজিরা তাই থামে ৩৮৮ রানে। সেটির খুব কাছে গিয়েও কিউইরা শেষমেশ দূরেই থেকে গেল!

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

2h ago