যানজট কমাতে পে-পার্কিং চালু করবে চসিক

যত্রতত্র যানবাহন পার্কিংয়ের কারণে বন্দরনগরীতে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যযাত্রীরা, বিশেষ করে, অফিসগামী এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই অনিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

নগরীর লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা রুমি বড়ুয়ার কথাই ধরা যাক। মেয়েকে স্কুলে আনা নেওয়ার পথে রাস্তায় তীব্র যানজটের জন্য তাকে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

রুমি বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাসা নগরীর লালখান বাজার এলাকায়, আর আমার মেয়ে জামাল খান রোডের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমাদের বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মেয়ের স্কুল, কিন্তু সময়মতো স্কুলে পৌঁছানোর জন্য সকালে তাকে কীভাবে যুদ্ধ করতে হয় তা আমি বর্ণনা করতে পারব না।'

'জামাল খান মোড় এবং আসকার দিঘী পূর্ব পাশের রাস্তায় স্কুল চলাকালীন সব ব্যক্তিগত যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়, যার ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে পাবলিক যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হয়।'
  
রুমি বড়ুয়া আরও বলেন, 'এক কিলোমিটার রাস্তা যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। আমার মেয়েকে সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার জন্য স্কুলের সময়ের এক ঘণ্টা আগে স্কুলে রওনা হতে হয়, আর তাই সে সকালে বাসায় পাঠ প্রস্তুত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় না।'

ট্রাফিক বিভাগ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা কী করছেন বুঝতে পারছি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তারা যদি সমন্বিত উদ্যোগ নিতো, তাহলে আমরা এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতাম।'
  
রুমি বড়ুয়ার কথার প্রতিধ্বনি করে বেসরকারি চাকরিজীবী শাহেদুল আজম বলেন, 'আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড, চট্টগ্রাম কলেজ রোড ও জামাল খান রোডে যানজটের কারণে প্রায়ই অফিসে যেতে দেরি হয়।'

'আমি চকবাজার এলাকায় থাকি আর আমার অফিস আগ্রাবাদ এলাকায়।  তবে এই চার কিলোমিটার পথ যেতে আমাকে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের দুর্ভোগ দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয় না,' বলেন রুমি বড়ুয়া।

জানা যায়, জামাল খান মোড়, চট্টগ্রাম কলেজ রোড, কাজীর দেউড়ি মোড়, নিউমার্কেট মোড়, রিয়াজ উদ্দিন বাজার মোড়, আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড, চকবাজার গুলজার মোড়, চকবাজার তেলিপট্টি মোড়, মুরাদপুর মোড় ও ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়সহ নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রায় প্রতিদিনই যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহের রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জামাল খান মোড় থেকে কাজীর দেউড়ি এলাকার মধ্যে আধা কিলোমিটার সড়কে ব্যক্তিগত পরিবহন রাস্তায় পার্ক করে রাখায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। জামাল খান মোড়ে একজন ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের জন্য মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক প্রাইভেটকারের এক চালকের কাছে জানতে চান রাস্তায় কেন গাড়ি পার্ক করে রেখেছেন, জবাবে তিনি বলেন, 'তাহলে গাড়ি কোথায় পার্ক করব?' 

তিনি জানান, নিয়োগকর্তার ছেলের স্কুল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, 'আমি কোথায় অপেক্ষা করব? এই এলাকায় কোনো নির্দিষ্ট পার্কিং জোন নেই।' 

সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংক্ষুব্ধ জনতা বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব।

তবে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের উদ্যোগ নিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর চসিকের ৩২তম সাধারণ সভায় নগরীর সড়কে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ও যানজটের কারণে জনদুর্ভোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন চসিকের কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। জনদুর্ভোগ লাঘবের উদ্যোগ নিতে কাউন্সিলররা মেয়রকে অনুরোধ জানান। 
 
এর প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২ অক্টোবর মেয়রের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠকে মেয়র সিএমপি কর্মকর্তাদের একটি প্রস্তাব দিতে বলেন যাতে করে চসিক এবং সিএমপি একটি ভালো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে পারে।
 
চসিক সূত্রে জানা গেছে, মেয়র ও সিএমপির কর্মকর্তারা নগরীর রাস্তায় পে-পার্কিং ব্যবস্থা চালু করতে এবং ব্যস্ত সড়কে পার্কিং জোন ও নো পার্কিং জোন চিহ্নিত করতে সম্মত হয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে সিএমপির ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহমেদ বলেন, 'ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে চসিক মেয়রের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে এবং রাস্তায় যানজট নিরসনে চসিকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।'

মেয়র আমাদের শহরে পে-পার্কিং ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব।'

যোগাযোগ করা হলে, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'চসিক  এবং সিএমপি কর্মকর্তারা সম্মিলিতভাবে নগরে একটি উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য একসঙ্গে কাজ করবেন। আমরা নগরে প্রথমবারের মতো পে-পার্কিং ব্যবস্থা চালু করব এবং পার্কিং জোন এবং নো পার্কিং জোন নির্ধারণ করব।'

'এই নগরী শিগগির একটি ভালো ট্রাফিক ব্যবস্থার আওতায় আসবে। আশা করি অচিরেই পার্কিং এবং নো পার্কিং জোনের সঙ্গে পে-পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Dev budget expenditure: Health ministry puts up poor show again

Two divisions responsible for healthcare delivery have once again ranked among the worst performers in executing their development budgets, spending just a fraction of their allocated funds over the past 10 months.

9h ago