‘রাজনৈতিক মদদে’ যমুনা থেকে বালু উত্তোলন, ভাঙনঝুঁকিতে সড়ক-কৃষিজমি

যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছবি: শহিদুল ইসলাম নিরব/স্টার

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা ও এর শাখা নদীগুলো থেকে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। ফলে রাস্তাঘাট, নদীর তীর, আশপাশের স্থাপনা ও আবাদি জমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশীলদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। অথচ, সব জেনেও প্রশাসন নির্বিকার।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, 'পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না।' আইনের ৪ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, 'সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হইলে, অথবা আবাসিক এলাকা হইতে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে হইলে' বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

স্থানীয়রা জানান, বালু সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা হলেন—উপজেলার রাজা মিয়া, হাফিজুর, শামীম, রাজনু, দুলাল, ফরহাদ, ফরিদ, জলিলসহ আরও অনেকে। তারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মদদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদী ধ্বংস করে আসছে। প্রশাসনকে 'ম্যানেজ' করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন ও যন্ত্রাংশ ভাঙচুর বা উচ্ছেদ করলেও কাজ হয় না। দু-চার দিন পর আবার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু হয়। প্রশাসন যথাযথভাবে নজরদারি করে না।

পিংনা গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রভাবশালীরা বছরের পর বছর নদী থেকে বালু উত্তোলন করলেও কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পায় না। কিছু বলতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়।'

কাওয়ামারা গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবৈধ ড্রেজার মেশিনগুলোর মালিকরা উপজেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন ক্ষমতাসীন নেতার প্রত্যক্ষ মদদে মাসোহারার বিনিময়ে বালু উত্তোলন করে আসছে।'

একই এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছর নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীভাঙনে তার ২৮ শতাংশ জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।

জগন্নাথগঞ্জ ঘাটের হাসান আলী জানান, বালু উত্তোলনের কারণে সড়ক ও মহাসড়ক ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সরিষাবাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। যেসব এলাকায় বালু উত্তোলন চলছে, খোঁজ-খবর নিয়ে সেগুলো বন্ধ করার জন্য শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।'

অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ এবং শৃঙ্খলা আনতে সরিষাবাড়ীতে একটি বালু মহাল স্থাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

10h ago