‘জমি সদাগর আবাদের জমি খাচ্ছে সমানে চেটে’

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা বিলের একটি ফসলি জমিতে বালু ভরাট করে চলছে আবাসিক প্লট তৈরির কাজ। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

১৯৯৮ সালে প্রকাশিত 'নিষিদ্ধ ইশতেহার' অ্যালবামের 'জমি' শিরোনামের গানে প্রমোটরদের কাছে ইউসুফ আর বনমালী নামের দুই চাষির জমি হারানোর করুণ চিত্র এঁকেছিলেন শিল্পী কবীর সুমন।

সে সময় উপকণ্ঠের সবুজ ঘুচিয়ে বহরে-গতরে বেড়ে চলা শহর কলকাতার প্রেক্ষাপটে সুমন গেয়েছিলেন, 'কৈখালী আর পাটুলি গিয়েছে, গিয়েছে উরাল পেটে/জমি সদাগর আবাদের জমি খাচ্ছে সমানে চেটে'।

চাইলে সুমনের গানের এই লাইনগুলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা কিংবা খুলনা-চট্টগ্রামের মতো অন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর সঙ্গেও মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে; যেখানে 'সর্বগ্রাসী' নগরায়ন আর তথাকথিত উন্নয়নের বলি হচ্ছে কৃষিজমি, জলাধার, খেলার মাঠ।

বাংলাদেশের আইনে ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন অবৈধ। কিন্তু সে আইনের তোয়াক্কা না করেই খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা বিলের একটি ফসলি জমিতে বালু ভরাট করে আবাসিক প্লট তৈরির কাজ চলছে।

এভাবে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) আওতাধীন এই এলাকাটিতে গত কয়েক বছর ধরেই আবাদি জমি ও জলাধার ভরাট করে গড়ে উঠছে একের পর এক আবাসন প্রকল্প।

ফিরে যাওয়া যাক সুমনের গানের কথায়। জমি ফিরে পেতে  ইউসুফ আর বনমালী গিয়েছিলেন 'দলকানা' মাতব্বরের কাছে। তাতে কাজ হয়নি। বরং প্রভাবশালী 'বাবুদের' পোষা পান্ডাদের হাতে জীবন হারানোর চেয়ে জমি হারানোকে শ্রেয় মনে করেছিলেন তারা।

তাই শহরপ্রান্তে বহুযুগ ধরে বসবাস করে আসা এই দুই চাষির অবস্থাকে সুমন তুলনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত 'দুই বিঘা জমি' কবিতার উপেনের সঙ্গে।

গানের শেষাংশে সুমন বলছেন, 'কিনে কিনে ঠিক ক্লান্ত হবেন বড় বাবুদের দল/ডিপ টিউবলে উঠেবে না আর একটুও কাদাজল।/তখন কিন্তু কেঁদেও পাবে না একটু সবুজ ফিরে,/ধানের বদলে দুলবে হাওয়ায় বিশ্রি নকল হিরে।'

এখন প্রশ্ন হলো, এই যন্ত্রকাতর নগরসভ্যতার হাত ধরে আমরাও কি এমন ভবিষ্যতের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি?

বাস্তবতা কিন্তু সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ কৃষিশুমারির তথ্য অনুসারে, ২০০৮ সাল থেকে ১১ বছরের ব্যবধানে দেশের মোট আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে চার লাখ ১৬ হাজার একর। সে হিসাবে গড়ে প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে ৩৭ হাজার ৮১৮ একর করে। অন্যদিকে কৃষি খানার পরিচালনাধীন মোট জমির (আবাদি ও অনাবাদি) পরিমাণও কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই সময়ে আবাদি ও অনাবাদি জমির পরিমাণ কমেছে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার একর।

গতকাল রোববার খুলনার বটিয়াঘাটা থেকে আলোচ্য ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী হাবিবুর রহমান

Comments

The Daily Star  | English

Remittances grow 3% in January

Migrants sent home $2.18 billion in the first month of 2025

2h ago