বন্ধ হয়ে যেতে পারে পেপারফ্লাই

লজিস্টিক ফার্ম, পেপারফ্লাই, সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইকম এক্সপ্রেস,

দেশের অন্যতম শীর্ষ লজিস্টিক ফার্ম পেপারফ্লাই গত সপ্তাহ থেকে নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ রেখেছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, 'গত সপ্তাহ থেকে নতুন অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না। বোর্ডের সঙ্গে কথা বলার পর ম্যানেজমেন্ট পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সময় মতো ফান্ড ও সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে বেশ কয়েকটি ফিক্সড ডিপোজিট না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে আছে পেপারফ্লাই।

সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মামুনুর রশীদ মোল্লা স্বীকার করেন, পেপারফ্লাই তাদের কাছে কিছু টাকা রেখেছিল।

কিন্তু তিনি বলেন, 'নগদান ইস্যুতে পেপারফ্লাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। পরে সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড নিয়মিত কিস্তিতে তাদের অর্থ প্রদান করছে এবং বেশিরভাগ অর্থ দেওয়া হয়েছে।'

পেপারফ্লাইয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এটি প্রতিষ্ঠানটির সাত শতাধিক কর্মচারীর জন্যও খারাপ খবর, কারণ পেপারফ্লাই বন্ধ হয়ে গেলে তাদের চাকরি হারাতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আমরা কর্মচারীদের কিছুই জানাইনি। অফিসিয়াল কার্যক্রম যথারীতি চলছে। এরপর কী করা হবে তা বোর্ড মিটিং শেষে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।'

তিনি আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি-ভিত্তিক ই-কমার্স লজিস্টিক সলিউশন সরবরাহকারী ইকম এক্সপ্রেসের কাছ থেকে ফান্ড পাওয়ার কথা ছিল। পেপারফ্লাইয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি শেয়ার ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির।

এই কর্মকর্তা বলেন, 'কিন্তু আমরা সেই ফান্ড পাইনি। তখন থেকে ধীরে ধীরে কার্যক্রম কমিয়ে দিচ্ছি। বর্তমানে আমরা কেবল বকেয়া অর্ডারগুলো সরবরাহ করছি।'

শাহরিয়ার হাসান, রাজিবুল ইসলাম, রাহাত আহমেদ ও শামসুদ্দিন আহমেদ মিলে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পেপারফ্লাই গড়ে তোলেন। ২০২১ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছেছিল এর সেবা।

করোনা মহামারির আগে পেপারফ্লাই প্রতিদিন ৯ হাজার বেশি ডেলিভারি করত। করোনা রোধে ২০২০ সালের এপ্রিলে দেশব্যাপী লকডাউনের শুরুতে যা ১০ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু, সরকার করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে। ২০২১ সালের শুরুতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ডেলিভারি করেছিল পেপারফ্লাই।

তখন বাংলাদেশে লজিস্টিকের বিরাট সম্ভাবনা দেখে ভারতের ইকম এক্সপ্রেস ওই বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ১০০ কোটি টাকায় পেপারফ্লাইয়ের সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয়।

২০২২ সালের এপ্রিলে ইকম এক্সপ্রেস থেকে ১০২ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেয় লজিস্টিক-টেক প্রতিষ্ঠানটি।

যাইহোক করোনা মহামারির পর পেপারফ্লাইয়ের প্রধান গ্রাহক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর অর্ডারে মন্দা অবস্থা তৈরি হয়।

বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, 'পেপারফ্লাইয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য একটি বড় ধাক্কা।'

তিনি আরও বলেন, 'পেপারফ্লাই দেশের বাইরে থেকে প্রচুর বিনিয়োগ পেয়েছে। কিন্তু, বড় বিনিয়োগ যে কোনো স্টার্টআপকে সফল করতে পারে না, পেপারফ্লাই বন্ধ হলে সেটাই প্রমাণ হবে। একটি স্টার্টআপ সফল হওয়ার জন্য টেকসই ও লাভজনক ব্যবসায়িক মডেল প্রয়োজন।'

'দেশের অন্যান্য স্টার্টআপদের সচেতন হওয়া উচিত। আমি মনে করি ইতোমধ্যে চাহিদার তুলনায় লজিস্টিক সক্ষমতা আছে। তাই অনেক প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও দেশে ই-কমার্সের চাহিদা ততটা বাড়ছে না,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

ICT cases over July atrocities: Two-thirds of 206 accused absconding

Law enforcers have managed to arrest only 73 out of the 206 accused after the ICT issued warrants for their arrests

8h ago