‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় নতুন করে আবেদন চাওয়া অমানবিক’

বেগম খালেদা জিয়া | ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় নতুন করে আবেদন চাওয়া অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কায়সার কামাল।

আজ রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে তার কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিদেশে তাঁর চিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। এখনো কেউ আবেদন করেননি। সে ক্ষেত্রে আপনাদের ভাবনা কী জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের কামাল বলেন, 'যেহেতু চিকিৎসক, উনার মেডিকেল বোর্ড বলছে এই দেশে উনার আর চিকিৎসা সম্ভব নয়, অতএব এটা এখন আবেদন করা-না করার ওপর নির্ভর করছে না। এটা এখন সময়ের দাবি এবং জনগণের দাবি, সারা দেশের দাবি—উনার প্রাণ রক্ষার জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।'

বাংলাদেশ সরকারের দায়বদ্ধতা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, '১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একটি ডিক্লারেশন আছে; রাজনীতিক হোক, সাধারণ মানুষ হোক, কনভিকটেড হলে সে দেশের সরকারের দায়িত্ব, যদি সংশ্লিষ্ট দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। সেই ডিক্লারেশনের পরিপ্রেক্ষিতে, একনায়কতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার পুতিন বিরোধী দলের নেতা অ্যালেক্স নাভালিনকে ২০২০ সালে জার্মানিতে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। চীনের একজন নোবেল বিজয়ী কনভিকটেড হওয়ার পরেও তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

'সৌদি আরবে একজন বিরোধী মতের ব্লগারকে সপরিবারে কানাডায় পাঠিয়েছে চিকিৎসার জন্য। আমাদের দেশেও আছে, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর ১৯৭৬ সালে জাসদের আসম আব্দুর রব কনভিকটেড থাকা সত্ত্বেও জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলেন,' বলেন কামাল।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক আইন এবং দেশের সংবিধানের ১৫ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য সরকারের সপ্রণোদিত হয়ে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে উনার বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।'

'বর্তমানে উনি নির্বাহী আদেশে আছেন এবং আইনমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার; উনার ভাষায় কৃপায় আছেন। যদি সেটাই হয়ে থাকে, আদালতের এখানে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্বাহী আদেশে আছেন, নির্বাহী আদেশেই উনাকে বিদেশে নেওয়া যেতে পারে,' যোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

কায়সার কামাল বলেন, 'এটা তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। মেডিকেল বোর্ড সুস্পষ্টভাবে বলেছে, তার চিকিৎসা আর বাংলাদেশে সম্ভব নয়। এখন যদি সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, দেশের মানুষ ধরে নেবে হেড অব দ্য এক্সিকিউটিভ অর্থাৎ শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এবং আইনমন্ত্রী অপেক্ষা করছেন আনফরচুনেট নিউজ শোনার জন্য। দেশের মানুষ কিন্তু তাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ছাড়বে না, যদি আনফরচুনেটলি কিছু হয়। তাদের কিন্তু জবাবদিহিতার ভেতরে কোনো এক সময় আনা হবে।'

আইনমন্ত্রী বলেছেন, আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হলে সেটা যখন আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে তখন তারা বিবেচনা করবেন—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কামাল বলেন, 'প্রতিবার যখন এক্সটেনশন করা হয় (সাজা স্থগিতের মেয়াদ), পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয় এক্সটেনশন করার জন্য। প্রতিটি আবেদনেই লেখা থাকে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন এবং উন্নত দেশে চিকিৎসার জন্য আমরা আবেদন করছি। প্রত্যেকটা আবেদনে লেখা থাকে।

'এর আগে বারংবার বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। মহাসচিব দেখাও করেছেন। এখন আইনমন্ত্রী সাহেব যে কথাগুলো বলছেন, একজন অসুস্থ রোগী যিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন, তার প্রতি উপহাস করা এবং জাতির সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। আবেদন করাই আছে। এগুলো অমানবিক। মানবিকভাবে যদি উনারা দেখতেন তাহলে এসব কথা বলতেন না,' বলেন তিনি।

কামাল আরও বলেন, 'এটা হচ্ছে উইল অব দ্য হেড অব দ্য এক্সিকিউটিভ। আমরা এখানে সদিচ্ছা তো দেখছিই না, বরং ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে এক্সিকিউটিভের পক্ষ থেকে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, অমানবিক।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago