দেশসেরা হাসপাতালে নেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট, চিকিৎসকেরও সংকট
![দেশসেরা হাসপাতালে নেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট, চিকিৎসকেরও সংকট কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/09/17/kaapaasiyyaa-upjelaa-sbaasthy-kmpleks-1.jpg)
চিকিৎসা সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য হেলথ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ পেয়েছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেসময় দেশের ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল হাসপাতালটি।
পরবর্তীতে দেশের ৪৯২টি হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসা সেবা, রোগীর সংখ্যা, অপারেশন, নরমাল ডেলিভারি, প্যাথলজি পরীক্ষা, মাতৃমৃত্যু ও সিজারিয়ান অপারেশনের ওপর অনলাইন জরিপেও প্রথম স্থান লাভ করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চলতি বছরের পহেলা মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এই ফল প্রকাশিত হয়।
দুইবার দেশসেরা হাসপাতালের স্বীকৃতি পেয়েও বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ভগ্নদশা। সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহিরাগত রোগীদের জন্য ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়াও, রয়েছে চিকিৎসক সংকট।
গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মামুনুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জ্বর হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো উচিত। কিন্তু আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে কোনো অ্যান্টিজেন কিট নেই, তাই বহিরাগত রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যাচ্ছে না।'
'ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য গত মাসে মাত্র ২০০টি অ্যান্টিজেন কিট বরাদ্দ পেয়েছিলাম। যেগুলো ভর্তি রোগীদের জন্যই লাগবে। সেগুলো দিয়ে বহিরাগতদের পরীক্ষা করলে ১০ দিনেই শেষ হয়ে যাবে', বলেন তিনি।
মামুনুর রহমান জানান, উপজেলায় চিকিৎসক ও কনসালটেন্ট মিলিয়ে ৩২ জন থাকার কথা, কিন্তু আছে মাত্র ১৭ জন।
'সরকার থেকে চিকিৎসক ঘাটতি পূরণ ও পর্যাপ্ত কিট বরাদ্দ না পেলে আমি কী করব', বলেন তিনি।
![দেশসেরা হাসপাতালে নেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট, চিকিৎসকেরও সংকট কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/09/17/kaapaasiyyaa-upjelaa-sbaasthy-kmpleks-2.jpg)
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ আশরাফুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক সপ্তাহে উপজেলায় ৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার চার্জ ৫০ টাকা হলেও বেসরকারি হাসপাতালে নিচ্ছে ৫০০ টাকা।'
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্ভার নষ্ট থাকায় আউটডোর এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর হিসেব নেই বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জ্বর নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কেউ যাচ্ছেন আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে, বাকিরা ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কথা হয় আনোয়ার মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, স্ত্রী অসুস্থ, তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ডাক্তার দেখাতে পেরেছেন।
টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। অনেকেই শিশু কোলে দাঁড়িয়ে আছেন। তীব্র গরমে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, এক রোগীকে ধরাধরি করে প্যাথলজি বিভাগের দিকে ছুটছেন স্বজনেরা।
সেই রোগীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বজন বলেন, 'রোগীর খুব জ্বর। ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এখন দেখি পরীক্ষা করাতে পারি কি না।'
জ্বর নিয়ে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন শিল্পী। তিনি বলেন, 'সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে পারিনি। তাই বেসরকারি ক্লিনিকে এসেছি। এখানে আমার ৬ গুণ বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।'
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নকিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আপাতত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।'
স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'আমাদের এখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট আছে। এ ছাড়া, প্লাটিলেট টেস্টের জন্য দুটো মেশিনও রয়েছে।'
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার মায়ের খুব জ্বর। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা হয়েও আমি কাপাসিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছি।'
কাপাসিয়ার অপর এক বেসরকারি হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট জানিয়েছেন, প্রতিদিন জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে ২-৩ জনের ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ছে।
Comments