মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ময়মনসিংহের বাঁশবাড়ি কলোনি

ছবি: ফাবিহা বিনতে হক

সমাজকে বদলে দেওয়ার মানসিকতা আর সবুজ একটি মন থাকলে চারপাশের পরিবেশকেও যে সবুজ করা সম্ভব, তার উদহারণ ময়মনসিংহের বাঁশবাড়ি কলোনি।

কলোনি নাম শুনলেই যেন চোখে ভাসে, অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি পরিবেশ, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ আর দুর্গন্ধ। কিছুদিন আগে বাঁশবাড়ি কলোনির চিত্রও দেশের অন্যান্য কলোনি থেকে আলাদা ছিল না। তবে কয়েকজন উদ্যোমী তরুণের উদ্যোগ আর এলাকাবাসীর সহায়তা বাঁশবাড়ি কলোনির চিত্র একেবারে পাল্টে দিয়েছে।

মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে বাঁশবাড়ি কলোনি। ২ পাশের দেয়ালগুলো সাজানো হয়েছে হরেক রকমের ফুল আর লতাপাতা দিয়ে। দেয়ালে তারকাঁটা দিয়ে সেখানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ফুল আর পাতার গাছ। এই বাগান মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে 'ভার্টিক্যাল গার্ডেন' নামে।

গার্ডেনে স্থান পেয়েছে হাসনাহেনা, জবা, জুঁই, বেলি, বাগানবিলাসসহ বিচিত্র সব ফুল, ফল ও ভেষজ গাছ। গাছের ফাঁকে সাঁটানো কাগজে লেখা 'এ গাছগুলো বিক্রির জন্য নহে।' গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ছোটবড় সবাই মনোযোগী। সবাই যেন বাগানকে সুন্দর করার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন।

ছবি: ফাবিহা বিনতে হক

সিটি করপোরেশন থেকে এলাকার রাস্তা ও ড্রেন পরিষ্কার করে দেওয়ার পর একদল তরুণের মাথায় আসে সবুজায়নের ভাবনা। শুধু পরিকল্পনার মাঝেই সীমাবদ্ধ না থেকে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজও শুরু করেন তারা। স্বপ্নবান এই তরুণরা হলেন- মুরাদ হোসেন কানন, মেহেদী হাসান মুহিত, সাইফুল ইসলাম ও উত্তর সরকার।

কলোনিকে সুন্দর করার পরিকল্পনায় সমর্থন দেন এলাকাবাসী। প্রশাসনও ছিল উদার।

মুরাদ হোসেন কানন বলেন, 'বাসস্থান সুন্দর হলে মানুষও সুন্দর হয়। এই এলাকায় কিছুদিন আগেও রাস্তাঘাট ভালো ছিল না, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু এখন কলোনিতে অনেকেই বেড়াতে আসেন, ছবি তোলেন গাছপালার সঙ্গে। বেশ ভালো লাগে।'

এখনো এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে পরিশ্রম করছেন তরুণরা। গাছের মাটি ঠিক করতে করতেই আমাদের সঙ্গে কথা বলেন এ কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'আমার বাসায় আগে থেকেই গাছপালা ছিল। কিন্তু আশপাশের পরিবেশ ভালো না হলে নিজের ঘরের সৌন্দর্যও ফুটে উঠে না। তাই আমরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম বদলে দেবো এই পরিবেশ। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমাদের স্বপ্ন পূরণ হলো।'

ছবি: ফাবিহা বিনতে হক

দীর্ঘদিনের অপরিচ্ছন্ন কলোনিতে এখন আবর্জনার লেশমাত্র নেই, নেই ময়লার দুর্গন্ধ। বাঁশবাড়ি কলোনির সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই এখানে বেড়াতে আসছেন, ছবি আর সেলফিতে ধারণ করছেন এলাকার শোভা।

এ নিয়ে কথা হয় দর্শনার্থী কোহিনূর নাহারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, 'বাঁশবাড়ি কলোনির কথা কিছুদিন ধরেই বেশ কানে আসছে। এখানে একটি কাজে এসেছিলাম। এই সুযোগে কলোনিটিও ঘুরে দেখা হলো। এলাকাবাসীর এই ভাবনা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।'

বাঁশবাড়ি কলোনি ময়মনসিংহের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'বাঁশবাড়ি কলোনির উন্নয়ন আমার জন্য গৌরবের বিষয়। কিছুদিন আগেও এলাকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ছিল। কিন্তু মানুষ এখন রাস্তায় চিপসের প্যাকেট ফেলতেও ভয় পায়। পরিবেশের এই ইতিবাচক পরিবর্তন আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যেও উৎসাহ জুগিয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Exporters to get Tk 108.5 for a dollar from Aug 1

Taka gains against dollar after several years

Taka gains ground as dollar influx rises, strengthening currency after years

2h ago