দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউয়ের মন্তব্য বিষয়ে বিশ্লেষকদের মতামত।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা
ছবি: সংগৃহীত

স্যাংশন দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার—ওয়াশিংটনের এমন বক্তব্যকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে প্রমাণিত এবং বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের প্রতি কড়া বার্তা বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

গত সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউ। ওই বৈঠকে নেফিউ স্যাংশনকে দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বার্তা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।'

গত রোববার ৩ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন নেফিউ। সফরে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এসব সাক্ষাতে তিনি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন ও অর্থপাচার প্রতিরোধে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা জানতে চান। এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন বাংলাদেশকে কী ধরনের সহায়তা দিতে পারে, তাও জানতে চেয়েছেন তিনি।

তার এ সফরের সময় বাংলাদেশের দুটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলাসহ কয়েকজন বাংলাদেশি দুর্নীতির দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'নির্দিষ্ট কারো বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, যদিও নেফিউ বলেছেন যে স্যাংশন দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার।'

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, তাদের নাম ওয়াশিংটন প্রকাশ করে না।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে বলে সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, যেহেতু দুর্নীতির কারণে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধভাবে অর্থপাচার এবং দেশের ভেতরে ব্যাপক দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতেই মার্কিন দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউর এ সফর।

সূত্র আরও বলছে, 'নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে কিছু প্রক্রিয়া আছে। তারা (মার্কিন কর্মকর্তারা) আগে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অভ্যন্তরীণ তদন্ত পরিচালনা করে।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, নেফিউর সফরের এ সময়টির তাৎপর্য আছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এ বছর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, 'ওয়াশিংটন দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করতে চায়।'

সোমবার মার্কিন দূতাবাসে নেফিউ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্নীতিবাজদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ওয়াশিংটন যা বলছে, তাতে তারা অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে পারে এবং অর্থ ফেরত আনতে সহায়তা করতে পারে।'

নেফিউর সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'অনেক দেশ, বিশেষ করে ট্যাক্স হ্যাভেন হিসেবে পরিচিত দেশগুলো মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সহযোগিতা করে না।'

ইফতেখারুজ্জামান নেফিউর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বলেন, 'যেসব দেশে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়, তারা প্রকৃতপক্ষে অর্থপাচারের জন্য শর্ত তৈরি করে এবং অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলে না।'

'নেফিউ বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন তারা বিষয়টি দেখবেন,' বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

নেফিউর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেন, আর্থিক অপরাধ তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুদক, বিএফআইইউ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'যথাযথ জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আর্থিক অপরাধের তথ্য সংগ্রহ, তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচারে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।'

তিনি বলেন, 'মানি লন্ডারিং অত্যন্ত জটিল ও অত্যাধুনিক অপরাধ। এটি তদন্ত করার জন্য উচ্চতর দক্ষতা প্রয়োজন, বিশেষ করে যেহেতু এতে আন্তর্জাতিক সংযোগ রয়েছে।'

কিন্তু আর্থিক দুর্নীতি মানে শুধু অর্থপাচার নয়। দেশের ভেতরেও অনেক আর্থিক দুর্নীতি সংঘটিত হয়। সুতরাং, মার্কিন উদ্যোগ কীভাবে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনে সহায়তা করতে পারে?

এ প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বড় ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হলে সার্বিকভাবে সমাজে এর প্রভাব পড়বে। এটি করার জন্য, সরকারকে তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে হবে এবং দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt to sit for dialogue with political parties from 2:30pm

According to government sources, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus, along with other advisers, will take part in the dialogue from the government's side

5m ago