ধর্মীয় জিহাদ ও উন্মাদনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীরা, দাবি পুলিশের

মামলার এজাহারে কর্মী সংগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও আটককৃতরা কোন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তা উল্লেখ করা হয়নি।
ধর্মীয় জিহাদ ও উন্মাদনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীরা, দাবি পুলিশের
টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জেলা শহরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে তাহিরপুর থানা প্রাঙ্গণে | ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গত রোববার গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টি, কর্মী সংগ্রহ ও ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সরকারকে আইনসংগত কাজ থেকে বিরত রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

তাহিরপুর থানার উপপরিদর্শক মো. রাশেদুল কবিরের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আটকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত আলামত পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন—তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ, জানমালের ক্ষতিসাধন ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছিলেন।

রোববার বিকেলে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোট নিয়ে বেড়ানোর সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জন বর্তমান ও ৭ জন সাবেক শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশ। সারারাত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন দুপুরে আটককৃত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে তাদের সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়।

আটককৃতদের মধ্যে ৩২ জনকে কারাগারে এবং ২ জনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনালয়ে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।

গ্রেপ্তারকৃত বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ জন প্রথম বর্ষ, ৬ জন দ্বিতীয় বর্ষ, ৫ জন তৃতীয় বর্ষ, ৫ জন চতুর্থ বর্ষ ও ২ জন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। এছাড়া ৭ জন সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী, ২ জন সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণ এবং একজন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বাড়িতে কাজ করেন।

মামলার এজাহারে বাদী রাশেদুল কবির উল্লেখ করেছেন যে, আসামিরা জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আইনসংগত কাজ হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এজাহারে উল্লেখ তাদের এ অপরাধ সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধিত ২০১৩) এর ৬(২)(ই)(ঈ)/১২ ধারার অপরাধ। পরবর্তীতে মামলাটি এ ধারাতেই নথিভুক্ত হয়েছে।

মামলার এজাহারে কর্মী সংগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও আটককৃতরা কোন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তা উল্লেখ করা হয়নি।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং গোপন বৈঠকে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সংগঠনটির বুয়েট শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক আফিফ আনোয়ার, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

ছাত্র শিবিরের সঙ্গে আসামিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মামলার এজাহারে উল্লেখ করা না হলেও তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত জিনিসের তালিকায় ছাত্র শিবিরের সদস্য হওয়ার সহায়িকা, কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত প্রচারপত্র, ইসলামী মানবাধিকার সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ বিভিন্ন নথির উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মোট ৩৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রাজন কুমার দাসের ব্যবহৃত নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

যে হাউসবোট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটির মালিক তাহিরপুর উপজেলার রতনশ্রী গ্রামের আহাদুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পরিচিত একজনের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকায় নৌকাটি ভাড়া হয় এবং রোববার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা তাহিরপুর সদরে এসে বাজার করে নৌকায় ‍ওঠেন।

তিনি আরও জানান, দুপুর ১২টার দিকে নৌকা তাহিরপুর ঘাট থেকে ছাড়ে এবং টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে গিয়ে সবাই গোসল ও খাওয়া-দাওয়া করেন। এরপর রাত্রি যাপনের জন্য টেকেরঘাটে যাওয়ার পথে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পাটলাই নদীতে দুটি স্পিডবোটে করে পুলিশ নৌকা থামিয়ে সবাইকে আটক করে।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ 'হাস্যকর' বলে মন্তব্য করেছেন গ্রেপ্তারকৃতদের অভিভাবকরা। আজ মঙ্গলবার বুয়েটের শহীদ মিনারে অভিভাবকদের আয়োজিত মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে এ মন্তব্য করা হয়।

তারা বলেন, 'আমাদের সন্তানদের অন্যায়ভাবে আটক করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে তাদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।'

অভিভাবকরা আরও বলেন, 'আমাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা আশ্চর্য হই। আমরা মনে করি, এ রকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।'

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

7h ago