‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া ঘরে ফিরে যাব না’

বিএনপির মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছবি: ভিডিও থেকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসমাবেশে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেছেন, 'শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাব না।'

আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি তার বক্তব্যে বলেন, 'মহাসমাবেশ মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এই মহাসমুদ্রে ঝড় তৈরি করতে হবে, তরঙ্গ তৈরি করতে হবে, সাইক্লোন সৃষ্টি করতে হবে।'

বিএনপির এক দফা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অবিলম্বে পদত্যাগ না করলে শেখ হাসিনাকে ঘেরাও করা হবে।'

সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বিষয়ে আমানুল্লাহ আমান বলেন, 'শুধু স্বাধীনতা উত্তর নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় সমাবেশ কোনোদিন হয়নি।'

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, 'এই অবৈধ সরকার একনায়কতন্ত্র কায়েম করে, বাকশাল কায়েম করে এক রানীর রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। এ দেশের জনগণ কোনো রানীর রাজত্ব চায় না। এ দেশের জনগণ চায় জনগণের রাজত্ব।'

সমাবেশে প্রশ্ন রেখে বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, 'বাংলাদেশে বর্তমানে যত এমপি, মন্ত্রী, মেয়র—তারা কি জনগণের ভোটে নির্বাচিত? শেখ হাসিনাকে কি বিশ্বাস করা যায়? শেখ হাসিনার কাছে কি গণতন্ত্র নিরাপদ? শেখ হাসিনার অধীনে কি ভোট করা যায়?'

এ সময় উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীরা সমস্বরে বলেন, 'না।'

হারুনুর রশিদ বলেন, 'এই কারণে আমাদের একটাই দাবি, শেখ হাসিনাকে বিদায় হতে হবে।'

আওয়ামী লীগের ৩ সংগঠনের সমাবেশ সম্পর্কে হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, 'ওইখানেও একটি সমাবেশ নাকি হচ্ছে। এখানে খালি মানুষ আর মানুষ। আর ওইখানে খালি চেয়ার আর প্রদর্শনী। জনসভা করেন, না চেয়ারের বিজ্ঞাপন দেন? তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে, কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিলে তারা আমাদের পিছনে পিছনে হাঁটেন।'

যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, 'পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই, এই অবৈধ সরকারের কোনো নির্দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম, খুন করবেন না।'

যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সারোয়ার তার বক্তব্যে বলেন, 'যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তাদের জন্য বড় সুযোগ হচ্ছে, লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে আপনারা এ দেশের মানুষের হৃদয়ে অঙ্কিত হতে পারেন।'

মহাসমাবেশে আসার সময় পথে পথে বাধা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আমাদের নেতাকর্মীদের পথে পথে বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। চেকপোস্টে তাদের মোবাইল চেক করা হয়েছে। এত বাধা, এত গুম, এত উৎপীড়ন—সব অতিক্রম করে মানুষ এখানে এসেছে।'

দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশ রাষ্ট্র আজকে নিপীড়নের রাষ্ট্র। তাই বিপ্লব স্পন্দিত বুকে লক্ষ জনতা শেখ হাসিনার পতন চায়।'

ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, 'আমি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে বলে দিতে চাই, চ্যালেঞ্জ করতে চাই, খায়রুল হকের দ্বারা যে সংবিধান তৈরি করেছেন সেই সংবিধানের অধীনে বাংলাদেশে আর কোনো দিন নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।'

ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, 'এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। আসলেও হবে না।'

ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, 'অধিকার আদায়ের এই সংগ্রাম আপনাদের সঙ্গে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ একাত্ম। এই মহাসমাবেশ মহাসমুদ্রে রূপ লাভ করেছে। এই ঢেউয়েই শেখ হাসিনার পদত্যাগ হবে ইন শা আল্লাহ।'

ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুবু বলেন, 'এই অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রতিদিন কোর্টে যাই। আইন মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে দায়রা জজকে, ৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে ইতোমধ্যে সাজা দিতে হবে। আর সিএমএমকে নির্দেশ দিয়েছে, ৯৭ জন নেতাকর্মীকে সাজা দিতে হবে। তাদের সাজা দেওয়ার জন্য আইনজীবীরা বসে আছেন। শেখ হাসিনাকে আমি বলতে চাই, আমাদেরকে সাজা দেওয়ার সেই সুযোগ বাংলাদেশের মানুষ আর আপনাকে দেবে না।'

বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, 'দেশের মানুষের অগণিত সমস্যা। এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে বর্তমান সরকার। আমাদেরকে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। কারণ, জনতা আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে।'

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'আমাদের প্রত্যেকটি সভায় ইন্টারনেট থাকে না। এর পেছনে যারা কাজ করছেন তারা হচ্ছেন ভোটচোরদের দালাল। আপনারা আগামী নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য ভোট চুরির প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের সংবিধানের অধীনে নির্বাচন? সংবিধান রেখেছেন? সংবিধান তো গিলে খেয়ে ফেলেছেন।'

'এই স্বৈরাচারী সরকার মানুষকে কথা বলতে দেয় না' উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, 'বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীত করে না, সহিংসতার রাজনীতি করে না। বিএনপি রাজনীতি শিখেছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। তার প্রতিষ্ঠিত দলের আমরা সদস্য। আমরা শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী।'

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'আপনাদের বাড়িঘরে পুলিশ যায়নি? শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত না করে ঘরে যাবেন না। ঘরে যে যাবেন, থাকতে পারলে তো যাবেন। তাহলে যাওয়ার আর দরকার কী? চলেন আমরা রাস্তায় থাকি।'

'একটি স্বাধীন দেশে পরাধীন নাগরিকের মতো থাকার চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না,' যোগ করেন তিনি।

এ ছাড়াও মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও অঙ্গ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা।

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

8h ago