বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, আলাদা ওয়ার্ড খোলার কথা ভাবছে চমেক কর্তৃপক্ষ

চমেক হাসপাতাল
চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালুর কথা ভাবছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওয়ার্ড না থাকায় বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীরা মেডিসিন ওয়ার্ডের ডেঙ্গু কর্নারে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে চিকিত্সা নিচ্ছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক ডেঙ্গু রোগীকে মশারি দিলেও মেডিসিন ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে থাকা ডেঙ্গু রোগীদের অনেকেই মশারি টানাচ্ছেন না। এ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

গত সপ্তাহে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে বাবাকে ভর্তি করিয়েছিলেন ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি বলেন, 'ডেঙ্গু রোগীরা দিনের বেলায় মশারি টানাচ্ছেন না। আমরা জানি কোনো এডিস মশা যদি ডেঙ্গু রোগীকে কামড়ায় এবং তারপরে অন্য একজনকে কামড়ায়, তবে সেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে। বিষয়টি আশঙ্কাজনক।'

বিষয়টি বিবেচনা করে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা উচিত বলেও জানান তিনি।

জনস্বাস্থ্য অধিকার সংরক্ষণ কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়াও ডেঙ্গু রোগীদের একটি পৃথক ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া উচিত বলে জানান।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রামে দিন দিন ডেঙ্গুর রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলার বিষয়টি বিবেচনা করেছিল। তবে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এ নিয়ে তারা আর এগোতে পারেননি।

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ও চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ডিজিএইচএসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈঠকে আমরা চমেক হসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নিবেদিত একটি নতুন ওয়ার্ড খোলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। জবাবে তারা বলেন যে যখনই প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে, তখনই তারা এইরকম একটি ওয়ার্ড চালু করবেন।'

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে নতুন ওয়ার্ড খোলা হবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. রাজীব পালিত।

তিনি বলেন, 'বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী চমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকছেন এবং প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আমরা এখনও মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা করতে পারছি। ভবিষ্যতে রোগীর সংখ্যা বাড়লে আমরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নতুন ওয়ার্ড খুলব।'

হাসপাতালে জায়গার সীমাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩টি ইউনিট রয়েছে। ২০১৯ সালে যখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল তখন আমরা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মেডিসিন ওয়ার্ডের একটি ইউনিট ডেডিকেট করেছি।'

'এই বছরও ভবিষ্যতে যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা খুব বেশি হয়, আমরা হয় তাদের জন্য মেডিসিন ওয়ার্ডের একটি ইউনিট ডেডিকেট করব অথবা একটি কম গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রুপান্তর করে ওই ওয়ার্ডের রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করব,' বলেন তিনি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে মোট ৪৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২১৩ জনে। তাদের মধ্যে মোট ১৩ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৯২৪ জন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে ২৮৯ জন রোগী চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে নিহত ১৩ জনের মধ্যে ৭ জনই শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

Indigenous group attacked in front of NCTB, at least 10 injured

The attack ensued after a scuffle between the groups "Aggrieved Indigenous Student-Masses" and "Students for Sovereignty"

10m ago