ডেঙ্গু নিধনে ‘এই ঢাকঢোল এত দিন কোথায় ছিল’

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১১ হাজার ১১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন ৬৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঢাকার ২ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ৫৫টি ওয়ার্ড। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। সেই সময় উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল ২১টি ওয়ার্ড।

বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগীর তথ্য রেকর্ড করা হয় ২০০০ সালে। সেই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ওই বছরের প্রথম ৬ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ২০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং একই সময়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৯৭৮ জন এবং একই সময়ে মারা গেছেন ৪৭ জন। চলতি বছরের শুধু জুলাই মাসের প্রথম ৬ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ১৩৮ জন এবং মারা গেছেন ১৭ জন। এর আগে জুনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় এই ভয়াবহ অবস্থা। 'লোক দেখানো কিছু কাজ করে' ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।

কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'এডিস মশা নিধনে বছরব্যাপী যে কাজ করা দরকার, সেটা না করে রোগী ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে মশা নিধনের চেষ্টা করা হয়। এগুলো আসলে লোক দেখানো ছাড়া কিছুই না। এভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব না। এই ঢাকঢোল এতদিন কোথায় ছিল? সিটি করপোরেশনগুলো বছরজুড়ে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। সবার আগে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদ্ধতিগুলো জানতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখন অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।'

'বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর যে হিসাব দেওয়া হয় তারচেয়ে প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি' উল্লেখ করে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, 'ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে আমাদের বিশেষ কোনো টিম নেই। এখনই যদি এর লাগাম না যায়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।'

যে সব এলাকায় রোগী বেশি সেখানে নিয়মিত জরিপ চালানোর এবং ফগিংয়ের মাধ্যমে অ্যাডাল্ট মশা মেরে ফেলার পরামর্শও দেন তিনি।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ফ্যাকাল্টি ড. জিএম সাইফুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বছর জুড়ে মশা নিধনের কাজ না করায় এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে এবং আরও ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে। ডেঙ্গুর মৌসুমও দীর্ঘ হতে চলেছে। সিটি করপোরেশন যা করছে তা দিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। প্রকৃতির সহায়তায় পরিস্থিতি যখন ভালো থাকে তখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, আর রোগী ও মৃত্যু বেড়ে গেলে শুরু হয় লাফঝাঁপ।'

প্রতিকারের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, 'সব অ্যাডাল্ট মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা মারতে হবে। যেসব এলাকায় রোগী আছে তার আশেপাশে ৩০০ গজ পর্যন্ত মশা মারার ব্যবস্থা নিতেই হবে। কিন্তু যারা এগুলো নিয়ে কাজ করবেন, তাদের কাছে এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য আছে বলে আমার মনে হয় না।'

সারা বছর এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকার ২ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তারা প্রয়োজনীয় সবই করেছেন। কিন্তু 'জনগণ সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না'।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছি। আর সিটি করপোরেশন একা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, যদি না জনগণ সচেতন হয়। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে একটা ভালো সংবাদ দিতে পারবো।'

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো উল্লেখ করে সেই অনুযায়ী কোনো কাজ সিটি করপোরেশন করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রোগীদের বাসা ও আশেপাশের ৩০০ গজ এলাকায় আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কিন্তু কারো বেড রুমে গিয়ে তো আর মশা নিধন করা সম্ভব না। মানুষ যদি নিজে সচেতন না হয় তাদেরকে দিয়ে তো জোর করে কিছু করানো যায় না। যদিও আমরা এখন জরিমানা করা শুরু করেছি। আশা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।'

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যাবতীয় কার্যক্রম সময় মতো করেছি। তবে এ বিষয়ে জনগণ সচেতন হচ্ছে না বলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।'

'অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি' বলেও দাবি করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands. 

2h ago