থাইরয়েড সমস্যার ঝুঁকি কাদের বেশি, বুঝবেন কোন লক্ষণে

ছবি: সংগৃহীত

থাইরয়েড হলো ছোট একটা গ্রন্থি, যা ঘাড়ের সামনের দিকে শ্বাসনালীর চারপাশে আবৃত থাকে। এর আকৃতি অনেকটা প্রজাপতির মতো, মাঝখানে ছোট দুটি ডানা আছে।

আমাদের শরীরে অনেকগুলো গ্রন্থি আছে, এগুলো আমাদের শরীরে একটা নির্দিষ্ট কাজ করতে সহায়তা করে৷ থাইরয়েড তেমনি একটা গ্রন্থি।

এই গ্রন্থির কাজ মূলত আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশকীয় হরমোন (থাইরয়েড হরমোন) উৎপাদন করা। শরীরে এই থাইরয়েড হরমোনের আবার একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার চাইতে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

শরীরে থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড সমস্যা হলে শরীরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। 

এই বিষয় নিয়ে আমাদের বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাহজাদা সেলিম

রোগটি কতদূর এগিয়েছে তার ওপর নির্ভর করে শরীরে নানা রকম উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয়৷ এক্ষেত্রে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-

  • ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব
  • অল্পতেই শীত শীত লাগবে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
  • হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া
  • অনেক সময় মুখ ফুলে যেতে পারে
  • গলার স্বর বদলে যেতে পারে
  • পেশীর দুর্বলতা
  • পেশীতে ব্যথা
  • নারীদের ক্ষেত্রে মিন্সট্রুয়াল সাইকেল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া
  • ডিপ্রেশন
  • চুল পড়ে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
  • স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া

কাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?

থাইরয়েডে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন৷ অনেকে ধারণা করেন, শুধু নারীদের এই রোগ হয়ে থাকে। তবে এই ধারণাটি ভুল। পুরুষেরও এই রোগটি হতে পারে৷ তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে৷

বিশেষ করে মেনোপজ হওয়ার পর থেকে নারীরা এই রোগে আক্রান্ত হন বেশি৷ তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের এই রোগ নিয়ে সচেতন হতে হবে।

থাইরয়েড সমস্যার কারণ

থাইরয়েড রোগের ২টি প্রধান ধরন হল হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম। উভয় অবস্থাই অন্যান্য রোগের কারণে ঘটতে পারে, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকে প্রভাবিত করে। নানা কারণে এই সমস্যা হতে পারে।

যেমন –

  • আয়োডিনের অভাব
  • শরীরে অন্যান্য গ্রন্থির ঠিক করে কাজ না করা
  • থাইরয়েড গ্রন্থির জন্মগত ত্রুটি

থাইরয়েড সমস্যার চিকিৎসা

যেকোনো রোগের কবল থেকে বাঁচতে চিকিৎসার বিকল্প নেই। চিকিৎসা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, সেইসঙ্গে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম-নীতি। কিন্তু থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে থাকে রোগীর শরীরের অবস্থা এবং রোগের ধরনের ওপর। অন্য কোনো রোগের কবল থেকে মুক্তি পেতে কিছু প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সুস্থতা আশা করা যায়। কিন্তু থাইরয়েড রোগের চিকিৎসার প্রধান বিষয় হলো চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, হরমোন ও বিকিরণ।

যদি থাইরয়েড রোগে কেউ আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে সারাজীবন ওষুধ খেতে হয়। এমন একটা লম্বা সময় চিকিৎসা নিতে হয়, যা সত্যিই বিরক্তিকর ও কষ্টকর। তবে একটা স্বান্ত্বনা এই যে, থাইরয়েডের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ওষধগুলোর মূল্য খুবই কম। সেইসঙ্গে ফুড সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যায়।

তবে গর্ভাবস্থায় কেউ যদি থাইরয়েড রোগে ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে ট্যাবলেটের পরিমাণ একটু বেশি হয়ে যায়। তবে প্রত্যেকটা ওষুধই সহজলভ্য। গ্রাম থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই এগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়।

থাইরয়েডের লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ভালো কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন, তার নির্দেশতো পরীক্ষা করুন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। খাবারের দিকে নজর দিন। যেহেতু আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে, তাই শরীরে পর্যাপ্ত আয়োডিনের যোগান দিতে পর্যাপ্ত আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খান।

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher USD rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

20m ago