একটা লোক দেখান যে নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা তো অনেক রকমের কথা শুনি, আজকেই এ সরকার ফেলে দেবে। কালকেই এটা করবে, ওটা করবে।'

তিনি বলেন, 'আজ যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেলাম, এটা আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে, বাস্তবায়ন করবে কে? আমাকে একটা লোক দেখান, সেটা করতে পারবে। নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে, একটি মানুষ দেখান। সে রকম কোনো নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নেই।'

আজ রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

আগামী ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ করতে হলে আওয়ামী লীগকে আগামী মেয়াদেও ক্ষমতায় আনা দরকার বলে মনে করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'আমরা জানি, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে উন্নীত করতে হলে আমাদেরকে দরকার। তাই আমি জনগণকে বলব, বারবার আমাদের নির্বাচিত করেছেন, দেশের সেবা করতে পেরেছি বলে আজ দেশটা উন্নয়নের এ ধারায় নিয়ে আসতে পেরেছি, দারিদ্রের হার কমাতে পেরেছি।'

অর্থনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'এত বাধা, প্রতিরোধ, সমালোচনা হচ্ছে। তারপরও সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এখানে ভয়ের কিছু নেই। সময়ে সময়ে সমস্যা আসেই। এ সমস্যা দেখে ঘাবড়ালে চলবে না। এটা মোকাবিলা করতে হবে।'

কবিতার চরণ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'মেঘ দেখে তুই করিস না ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে।'

শেষ বাজেট কি না, সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ

জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, '২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা দেশ পরিচালনা করে এই বাজেট দিতে পারছি। এই বাজেটটি আমাদের মেয়াদের ১৫তম এবং চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। কারণ নির্বাচন এই বছরেরই শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে হবে। কাজেই এটা আমাদের শেষ বাজেট।'

'তবে একেবারে শেষ কি না, সেটা বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণকেই আমি দিচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

সরকারি দপ্তরের বকেয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, দপ্তর সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ, আসল এবং বিনিয়োগের মুনাফা বাবদ বিপুল অংকের অর্থ পাওনা আছে। অর্থ বিভাগ এসব পাওনা আদায়ের চেষ্টা করছে।'

সব প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধের অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সেখানে আমাদের বিদ্যুতেও আছে। অনেক জায়গায় বিল দেওয়া হয়নি। সেগুলো আমরা দিয়ে দেব।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'জনগণের উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেই সরকার বাজেট দিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য দেশকে স্বাবলম্বী করা।'

তিনি বলেন, 'আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পর মুখাপেক্ষী হতে চাই না। ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে থাকতে চাই।'

কোভিডের সময় সরকার দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং যুদ্ধজনিত মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। কিছুটা আমাদের প্রবৃদ্ধি কমলেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ছিল।'

'আমরা যথেষ্ট ভালো স্থানেই আছি। আমরা অর্থনৈতিক নীতি ও কার্যক্রমে একটি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি। ধারাবাহিকতায় গত সাড়ে ১৪ বছরে এ অর্জন কিন্তু চট করে লাফ দিয়ে পড়েনি। আমরা ধীরে ধীরে অর্জনটা করতে সক্ষম হয়েছি,' বলেন তিনি

জনগণের কল্যাণই আমাদের মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'সেই লক্ষ‌্য নিয়ে মূল্যস্ফীতিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চলতি অর্থবছরে এবং আগামী অর্থবছরেও কৃছ্রতাসাধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে চালের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ডিজেলের মূল্য কমাতে আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।'

এর আগে পতিত জমি অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে আজ সংসদে তিনি বলেন, 'আমার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশবাসী তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করেছেন। আমি নিজেও করছি। গণভবন এখন প্রায় খামার বাড়ি।'

গৃহস্থালি কাজকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে নিতে বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সংসারে নারীরা যে কাজ করেন এটা বিরাট কর্মক্ষেত্র। কিন্তু হিসাবে নেওয়া হয় না। এটা হিসাবে নেওয়া হলে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক অগ্রগামী হতো। সেটা বাদ রেখে হিসাব হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago