হালদায় ঐতিহ্যগত কুয়ার জায়গা দখল করছে হ্যাচারি
পোনা উৎপাদনের জন্য হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা মাছের ডিম বিশেষ ব্যবস্থায় প্রায় ৯৬ ঘণ্টা পরিচর্যা করতে হয়। এর জন্য মাটির কুয়া ব্যবহারের প্রচলন ছিল। ঐতিহ্যগতভাবে এভাবেই ডিম থেকে পোনা উৎপাদন করা হলেও সম্প্রতি এর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এর জায়গা দখল করে নিচ্ছে হ্যাচারিগুলো।
কুয়া খোঁড়ার জন্য নদীর তীরে জমির অভাব, বাড়তি খাটুনি এবং সাফল্যের হার কম হওয়ায় মাছের ডিমের পরিচর্যার জন্য কুয়ার বদলে হ্যাচারির দিকে ঝুঁকছেন জেলেরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যাচারিতে ডিম থেকে পোনা উৎপাদনের হার বেশি হলেও কুয়ায় লালিত পোনার বেঁচে থাকার হার হ্যাচারির পোনার থেকে বেশি।
জেলেরা হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন করে লাভবান হলেও মাছ চাষিরা কুয়ায় উৎপাদিত পোনা থেকে লাভবান হন বেশি। কারণ সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রায় শতভাগ পোনা নতুন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। সেই কারণে হ্যাচারির পোনার তুলনায় এই পোনার চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হ্যাচারিতে ডিম থেকে পোনা উৎপাদনের সাফল্যের হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ। সেখানে পুষ্ট ও অপুষ্ট সব ধরনের ডিমই পোনায় পরিণত হয়।'
'কিন্তু মাটির কূপে এর হার ৬০ শতাংশের বেশি নয়। সেখানে অপুষ্ট ডিমগুলো প্রাকৃতিকভাবেই নষ্ট হয়ে যায়। তবে এভাবে উৎপাদিত পোনা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে।'
তিনি আরও বলেন, 'কুয়ায় ডিম পরিচর্যার কাজ শ্রমঘন। অন্যদিকে হ্যাচারিগুলো স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে চলে, যার জন্য কম পরিশ্রম প্রয়োজন হয়।'
চবির হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির পরিচালক এই অধ্যাপক আরও জানান, তিন-চার বছর আগে হালদা নদীর তীরে ১৬৮টি মাটির কুয়া ছিল। নদীতে বেড়িবাঁধ তৈরি করায় এর মধ্যে প্রায় ১০০টি কুয়া নষ্ট হয়ে গেছে।
হালদায় ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগরের সনাতন পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদনের অভিজ্ঞতা প্রায় ৫০ বছরের।
ডিম সংগ্রহকারীরা এখন কেন হ্যাচারির দিকে ঝুঁকছেন জানতে চাইলে বলেন, 'অনেক জেলের নিজস্ব জমি নেই। এ কারণে তারা কুয়া তৈরি করতে পারেন না। আর বেশিরভাগ ডিম সংগ্রহকারী বেশি পোনা উৎপাদনের আশায় হ্যাচারি বেছে নিচ্ছেন।'
হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শহিদুল আলম জানান, হাটহাজারীতে চারটি এবং রাউজানে একটি হ্যাচারি ডিম থেকে পোনা উৎপাদন করছে। কিন্তু এ বছর যে পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা গেছে তা হ্যাচারিগুলোর সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। ফলে জেলেদের বড় একটি অংশের জন্য কুয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদন করা ছাড়া উপায় নেই।
এর জন্য নদীর তীরে আরও কুয়া খুড়তে জেলেদের উৎসাহ দেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও শহিদুল আলম।
Comments