সাক্ষাৎকার

পাইপলাইনে এখন প্রচুর খেলোয়াড় আছে: হাথুরুসিংহে

Chandika Hathurusingha
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের সাফল্যের বড় কারিগর ছিলেন চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। মেয়াদ পূর্ণ করার আগে চলে গেলেও তার প্রতি মোহ কমেনি বিসিবির। পাঁচ বছর পর চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। নতুন মেয়াদে চার মাসে তিন সিরিজ পার করেছেন তিনি। এবার কেবল জাতীয় দল না, বাংলাদেশের পুরো ক্রিকেট কাঠামো নিয়েই বিশদ কাজে জড়িয়ে আছেন লঙ্কান কোচ। দ্য ডেইলি স্টারকে একান্ত সাক্ষাতকারে শুনিয়েছেন সেই গল্প।

(প্রথম পর্ব) 

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনি তৃণমূলের ক্রিকেটে ফোকাস দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ঘরোয়া কাঠামো উন্নত করতে বোর্ডকে কোন পরামর্শ দিয়েছেন?

চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে: আমি যেটা বলেছি তা হচ্ছে একটা সিস্টেম স্থাপন করা। সে জন্য আমি ডেভিড মুরকে (বিসিবির কাছে) সুপারিশ করেছি, সে নিউ সাউথ ওয়েলসের জেনারেল ম্যানেজার ছিল। সে আমার আগে এসে বিসিবিতে যোগ দিয়েছে (বিসিবির হেড অফ প্রোগ্রাম)। এবং কিছু কাজ এগিয়ে নিয়েছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা বোর্ডে উপস্থাপন করেছি।

আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দিয়েছি যেমন বাংলাদেশ টাইগার্স প্রোগ্রাম, হাই পারফম্যান্স ইউনিট ও কোচদের প্রশিক্ষণ নিয়ে। আমার মনে হয় সে (মুর) এমনকি আম্পায়ার, গুরুস্থানীয় কোচদেরও এরমধ্যে নিয়ে আসবে, এসব কাজ চলমান। কিছুটা সময় লাগবে। যেগুলো দ্রুত করা দরকার, আমরা করেছি।

জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) খুব ভালো প্রতিযোগিতা। একটাতে আট আরেকটাতে চার দল খেলে। কিন্তু একজন খেলোয়াড় যে বিসিএলে এক দলে খেলে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আরেক দলে খেলে এবং বিপিএলে আরেক দলে খেলে, সে জানে না কোন দলকে সে নিজের দল বলবে। এই কারণে ফাঁকা মৌসুমে সে কোথায় অনুশীলন করতে যাবে? এটা হচ্ছে বড় জায়গা যেটা আমাদের উন্নতি করতে হবে। শ্রীলঙ্কায় যদি আমি জাতীয় দলে না থাকি তাহলে আমি আমার ক্লাবে অনুশীলন করতে চলে যাব, এটাই আমার হোম। একইরকম সিস্টেম অস্ট্রেলিয়াতেও।

আমি ও ডেভিড মিলে একটা জিনিস ঠিক করছি যে আটটা কেন্দ্র থাকবে খেলোয়াড়দের। যেখানে গিয়ে তারা অনুশীলন করতে পারবে।

এটা হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, স্বল্প মেয়াদে পরিকল্পনাও আছে। যেসব খেলোয়াড় জাতীয় দল বা এইচপি সেটআপে থাকবে আমরা তাদেরকে কৌশলগত জ্ঞান ও দক্ষতা দেব। একইসঙ্গে খাদ্যভাস, ফিটনেস, খেলার পরিস্থিতি বোঝা ও আত্মবিশ্বাস দেব। এভাবেই আমরা সেরাদের থেকে সেরাদের নিয়ে জাতীয় দলের আদল বানাবো। আমরা একই সঙ্গে স্থানীয় কোচ, ফিজিও ও ট্রেনারদের জানার পরিধি বাড়াতে চাই। আটটা কেন্দ্রে যদি ইনডোরসহ সব সুবিধা থাকে তাহলে তারা ঢাকায় না এসেই শতভাগ প্রস্তুতি নিতে পারবে।

এরকম হলে জাতীয় লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে। তারা বুঝতে শিখবে কীভাবে লড়তে হয়, চাপ সামলাতে শিখবে। স্কিল আছে, সেজন্য তারা এই পর্যায়ে। বোর্ড ভালো উইকেট বানাচ্ছে এখন। এবং ফলটা কি? আমরা বেশ কিছু ভালো পেসার পেয়েছি। এবং ব্যাটার পেয়েছি যারা পেসারদের বিপক্ষে ভালো খেলে। আমার মনে হয় আমরা ঠিক পথেই আছি।

Chandika Hathurusingha
ছবি: স্টার

বাংলাদেশের পাইপলাইনে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় নেই বলে আলাপ উঠে। পাইপলাইনের শক্তি বাড়াতে আপনার কোন পরামর্শ আছে?

হাথুরুসিংহে: আপনি বললেন পাইপলাইনে খেলোয়াড় নেই, কিন্তু আমি অনেক খেলোয়াড় দেখছি যারা সুযোগের অপেক্ষায়। আমার মনে হয় পাইপলাইনে প্রচুর খেলোয়াড় আছে। আমরা পেস বোলিং ইউনিটে যদি দেখে দেখব সাত-আটজন আছে যারা তিন-চারটা জায়গার জন্য লড়ছে। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ তিনজনকে খেলাতে পারব যদি না চতুর্থজন পেস অলরাউন্ডার না হয়। ব্যাটিং বিভাগেও জায়গা নিয়ে অনেক লড়াই আছে।

আপনার প্রশ্নের ক্ষেত্রে বলব, আমি আরও কিছু স্পিনার দেখতে চাই। একজন লেগ স্পিনার নিয়ে আমার আকুতি বহুদিনের। ২০১৪-১৫ সাল থেকেই আমার এই জায়গায় চিন্তা ছিল। এই একটা জায়গা যেটাতে লোক দরকার। কিন্তু আবার দেখতে হয় মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে তাদের টলানো মুশকিল অন্য কারো।

এখানে লড়াই আছে কিন্তু আমি একটা চমৎকার এক দল খেলোয়াড় খুঁজছি  যারা বিশ্বমানের হবে। তারপর আপনি যেটা বললেন যেসব ঘাটতি আছে লেগ স্পিনার বা পেস অলরাউন্ডার(এসব নিয়ে ফোকাস হবে)।

বেশিরভাগ নতুন মুখ জাতীয় দলে আসার পর মনে হচ্ছে তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত না। তারা ঘরোয়া ক্রিকেটে যা সামলেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তেমন নয়। এই জায়গায় আপনার মত কি?

হাথুরুসিংহে:  উপমহাদেশে- ভারতকে বাদ দিয়ে বলি। তাদের মান অনেক উপরে চলে গেছে। যদি বলি শ্রীলঙ্কা ও আমাদের কথা। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে জাতীয় দল বড় এক লাফ। আমার কাছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে কাছাকাছি মানের। বাকি সব দেশের জন্যই ব্যবধানটা কিন্তু বড় ও একটা লাফ দেওয়ার বিষয় আছে।

আমাদেরকে এই তফাৎ কমানো দরকার। এবং মনে হয় আমরা সেদিকেই আছি। আমরা ব্যবধানটা কমাচ্ছি কারণ আমাদের ঘরোয়া কাঠামো উন্নত হচ্ছে। আমাদের দুটো চারদিনের টুর্নামেন্ট আছে। একটা প্রতিষ্ঠিত ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট আছে। বিপিএলের মতো একটা টি-টোয়েন্টি আসর আছে। আমার মনে হয় ঠিক পথেই আছি। ভালো প্রতিযোগিতা কিন্তু সাহায্য করে। ৫০ ওভারের ম্যাচ আমরা ভালো খেলি কারণ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। আমি জানি না এটা এখানে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে কিনা। এই কারণে আমরা ওয়ানডেতে ভালো দল।

আপনার প্রথম মেয়াদের সঙ্গে এই মেয়াদে খেলোয়াড়দের মধ্যে কোন বদলটা দেখছেন, যা আপনার মনে ধরেছে?

হাথুরুসিংহে: বড় পার্থক্য হচ্ছে কাজের প্রতি সততায়। তাদের কাজের সততা বেড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে প্রচুর অনুশীলনের চেয়ে কার্যকর অনুশীলন বেশি দরকার। বিশেষ করে যারা আগেও দলে ছিল (হাথুরুসিংহের আগের মেয়াদে)। তারা এখনো বেশি উদ্যোগী। নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে নিজের কাজ নিজেই শুরু করে দিচ্ছে। এটাই বড় তফাৎ। তাদের ফিটনেস অনেক উন্নত হয়েছে। প্রতিটা জায়গার জন্য লড়াই বেড়েছে।

Chandika Hathurusingha
ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

নতুনদের নিয়ে কি বলবেন?

হাথুরুসিংহে:  কিছু তরুণ আছে যাদের আমি আগে দেখিনি। যেমন তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, আফিফ হোসেন, হাসান মাহমুদ- এই ছেলেরা জানে কি করতে হয়। তারা খুব অ্যাথলেটিক। তারা লড়ুকে ও দক্ষ। এসব তরুণদের জন্য ফিল্ডিং অনেক উন্নত হয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য আপনি কোন লক্ষ্য ঠিক করেছেন?

হাথুরুসিংহে: আমি যাদের নেতৃত্ব দেই তাদের থেকে সব সময় সেরাটা বের করতে চেষ্টা করি। আমি খেলোয়াড়দের সফলতার জন্য সেরা পরিবেশ দিতে পছন্দ করি। আমি যদি পরিবেশ বানাতে পারি, এটাই হবে আমার সন্তুষ্টি। ফলাফল নিয়ে নয়। ফলাফল এমনিতেই আসবে। আমি তাদের সম্ভাবনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রস্তুত করতে চাই।

উদাহরণ হিসেবে বলি, আমি কিছু লোককে নিয়ে এসেছি। আমি কিন্তু মেন্টাল ট্রেনার নই, মনোবিদও না। এজন্য বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসেছি খেলোয়াড়দের সহায়তার জন্য, যাতে তারা নিজের সেরা অবস্থায় যায়। আমার কাছে হলো পরিবেশ তৈরি করা, ঠিক আবহ বানানো, যাতে খেলোয়াড়রা দলের জন্য আদর্শ অবদান রাখা নিশ্চিত হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

18h ago