ক্রীড়াজগতে সামাজিক ব্যবসা

ইউনেস্কোর সঙ্গে ইউনূস স্পোর্টস হাবের চুক্তি সই

ড. ইউনূস ইউনেস্কোর ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনেস্কোর সহকারী মহাপরিচালক গ্যাব্রিয়েলা রামোসের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। ছবি: সংগৃহীত

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের লুজানে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান কার্যালয়ে আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের এই বৈঠকে ভবিষ্যতের অলিম্পিক গেমসমূহসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং ক্রীড়া ও সামাজিক ব্যবসা ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। 

আগামী অলিম্পিক গেমগুলো এবং সামাজিক ব্যবসা খাতের অগ্রগতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট এ বছরের অক্টোবরে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠেয় ১০৪তম আইওসি সেশনে যোগদানের পথে ঢাকায় আসবেন এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে এই বিষয়গুলোর অগ্রগতি নিয়ে আবারও বৈঠক করবেন।

১১ জুন ড. ইউনূস ইতালির ট্যুরিন ভ্রমণ করেন, যেখানে তিনি সেরমিগ টাউন হলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ২০০ তরুণ নেতা ও ছাত্রদের একটি দলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ও তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ট্যুরিনের ডেপুটি মেয়রের উপস্থিতিতে এই সমাবেশে তিনি 'ট্যুরিন সামাজিক ব্যবসা নগরী' উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি লাভাৎজা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিভিল সোসাইটি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ট্যুরিন সামাজিক ব্যবসা নগরী গড়ে তুলতে সমাজের প্রতিটি অংশের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন।

সেদিন সন্ধ্যায় তিনি ২৬তম সিনেমামবিয়েনতে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন, যেখানে তিনি তরুণদের কল্পনাশক্তিকে উজ্জীবিত করতে চলচ্চিত্রের শক্তির ওপর জোর দেন। 

ড. ইউনূস বলেন, 'তোমরা যেরকম পৃথিবী চাও তা যদি কল্পনা করতে পার তাহলেই সেটা তৈরি হবে, তোমরা কল্পনা না করলে সে পৃথিবী কখনোই বাস্তবে রূপ নেবে না। চলচ্চিত্রের মধ্যে মানুষকে কল্পনা করতে সাহায্য করার এবং একটি "৩ শূন্য"র পৃথিবী সৃষ্টির ক্ষমতা রয়েছে।'

১৩ জুন ড. ইউনূস প্যারিসে ক্রেডিট এগ্রিকোল'র প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ব্রাসেক এবং গ্রামীণ ক্রেডিট এগ্রিকোল মাইক্রোফাইনান্স ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের এই বৈঠকে ফাউন্ডেশনের বৈশ্বিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা হয়। এই বৈঠকে সেনেগালে ২ হাজার ৫০০ নারী উদ্যোক্তাকে ৩ বছর অর্থায়ন করার একটি কর্মসূচি নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়। 

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে অসাধারণ সাফল্য অর্জনকারী ড. ইউনূসের 'নবীন উদ্যোক্তা কর্মসূচি'র আদলে সেনেগালের এই কর্মসূচিটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এ ছাড়া, তার সফরের সময় ফ্রান্সের আইএই নাইস এবং ঢাকার ইউনূস সেন্টারের মধ্যে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পৃথিবীর ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠিত ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারসমূহের মধ্যে এটি হবে ১০৫তম সেন্টার। সদ্য প্রতিষ্ঠিত এই ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারটি ফ্রান্সের ৩০টি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ইউনূসের তত্ত্ব ও দর্শন প্রসারের কাজ করবে।

এ ছাড়াও, সফরকালে ড. ইউনূস ইউনেস্কোর ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনেস্কোর সহকারী মহাপরিচালক গ্যাব্রিয়েলা রামোসের সঙ্গে ক্রীড়াজগতে সামাজিক ব্যবসার প্রসারের উদ্দেশ্যে ইউনূস স্পোর্টস হাবের পক্ষে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

ইউনেস্কোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে একটি বৃহত্তর কাঠামোর অধীনে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ক্রীড়া অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণ সমাজের ক্ষমতায়ন, সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটিগুলোর জন্য সামাজিক ব্যবসা ক্রীড়া কাঠামো গড়ে তুলতে সহযোগিতা সৃষ্টি ইত্যাদি লক্ষ্য অর্জনে একযোগে কাজ করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ড. ইউনূস এরপর এএফডি'র প্রধান নির্বাহী রেমি রিউর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ক্রীড়া ও সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ নিয়ে তাদের গৃহীত যৌথ প্রকল্প উদ্যোগগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে ড. ইউনূস সামাজিক ব্যবসা কর্মসূচির মধ্যমে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ককে রক্ষা করতে এএফডি'র সঙ্গে সম্ভাব্য বিভিন্ন নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।

১৪ জুন ড. ইউনূস গ্লোবাল স্পোর্টস উইক-২০২৩-এ মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন। গ্লোবাল স্পোর্টস উইক ফ্রান্সের ক্রীড়াজগতের অন্যতম বৃহত্তম বার্ষিক অনুষ্ঠান। তার ভাষণে ড. ইউনূস ক্রীড়া ও সামাজিক ব্যবসাকে সমন্বিত করার এবং ভবিষ্যতে ক্রীড়া কী ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়াও, তিনি ফ্রান্স ও ইউরোপে ক্রীড়া জগতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

7h ago