চট্টগ্রাম

উপকূলীয় বনের জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্বে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলের বনাঞ্চল এলাকার স্যাটেলাইট ইমেজ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুর মৌজায় বঙ্গোপসাগরের তীর লাগোয়া বনের জায়গা নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম বন বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

বন বিভাগ বলছে, জায়গাটি তাদের নিজস্ব এবং বন আইনের ৪ ধারায় নোটিফায়েডভুক্ত।

অপরদিকে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, জায়গাটি তাদের খাস খতিয়ানভুক্ত।

বন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তাদের তত্ত্বাবধানে বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে ওঠা উত্তর কাট্টলি এলাকায় ম্যানগ্রোভ বন কেটে জেলা প্রশাসন পাখির জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করেছে এবং এর জন্য ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ১২টি গাছ কাটা হয়েছে।

আর জেলা প্রশাসন বিষয়টি অস্বীকার করে বলছে, জেলা প্রশাসন নিজেদের জায়গাতেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে।

জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের বিরোধের এই সূত্রপাত গত ৩ জুন।

ওই দিন অনুমতি ছাড়াই গাছ কাটার সময় বন বিভাগ বাধা দিলে আপত্তির মুখে জেলা প্রশাসন গাছ কাটা বন্ধ করে।

ঘটনার বিস্তারিত নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রামের বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

ছলিমপুর মৌজার অধীন উত্তর কাট্টলী সংলগ্ন পোর্ট লিংক রোডের পাশে সমুদ্র উপকূলে লাগোয়া এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। সেখানে আগে থেকেই দখলদারদের কাছে থাকা ১৯৪ একর জায়গা উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন 'ডিসি পার্ক' নামে একটি বিনোদনকেন্দ্র করেছে এবং বেশকিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

একটি ওয়াচ টাওয়ার ও পাখির অভয়ারণ্য করা হবে সেখানে। ভবিষ্যতে বিশাল জায়গা দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে সেখানে গাছ লাগানো ও নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্রের ঘোষণা দিয়েছেন প্রশাসন।

মন্ত্রণালয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই বনটি ১৯৯১ সালে বন বিভাগের সৃজন করা। ১৯৮৫ সালে গেজেটের মাধ্যমে এটিকে ৪ ধারায় নোটিফায়েড করা হয়েছে। সেখানকার মোট ১২টা কেওড়া গাছ ও প্রায় ৫ হাজার বাইন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।'

'আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি আপনারা যা করেন, অনুমতি নিয়ে করেন। আমি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি,' বলেন তিনি।

তবে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে খাস খতিয়ানভুক্ত ও বনের জায়গায় কিছু অসাধু-প্রভাবশালী চক্র যোগসাজশে ভোগ-দখল ও ধ্বংস করে আসছিল।

পোর্ট লিংক রোডে ফৌজদারহাট-কাট্টলী পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ একর জায়গাজুড়ে বিগত বছরগুলোতে ৩৭টি পুকুর, ৩টি ইটভাটা গড়ে উঠলেও বন বিভাগ নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

বনের গাছ ও মাটি কেটে বিক্রি করলেও বন বিভাগ তার প্রতিকার করেনি বলে অভিযোগ তাদের।

২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার তৌহিদুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপকূলে ব্যাপক বনায়নের জন্য ১৯৭৬ সালে বন বিভাগের কাছে সমুদ্র বক্ষ থেকে জেগে ওঠা চরভূমির মধ্যে ১২ লাখ ৩০ হাজার একর জমি থেকে একটা সুনির্দিষ্ট অংশ কৃষিকাজের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে ফেরত দিতে বলা হয়। যার মধ্যে চট্টগ্রামে চাষাবাদযোগ্য বনভূমির পরিমাণ ৯ হাজার ৮৩৪ একর।'

তিনি আরও বলেন, 'এই ৯ হাজার ৮৩৪ একরের মধ্যে সদর রেঞ্জে জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩৫১ দশমিক ৩২ একর এবং সীতাকুণ্ড রেঞ্জে ৯৬৭ দশমিক ৫০ একর। এ ছাড়া, ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের জমি বুঝে নিতে চিঠি দেন ভূমি সচিব।'

'এখন যা জমি আছে সেই এলাকায় সবগুলোই ডিসির ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমি। এমনকি সবশেষ দীয়ারা জরিপেও বন বিভাগের কোনো জায়গা সেখানে নেই। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠির পর বাকি সব কিছু রহিত হয়ে গেছে। তাহলে জেলা প্রশাসন নিজের জায়গায় কাজ করতে কেন অনুমতি নেবে,' বলেন তিনি।

তার দাবি, বন বিভাগ নিজেই গত ২০ বছর ধরে বারবার বৃক্ষ নিধন ও টপ সয়েল কর্তন করেছে। স্যাটেলাইট ইমেজে সব প্রমাণ আছে।

'আমরা কোনো গাছ নিধন করিনি,' বলেন তৌহিদুল আলম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যা হয়েছে সেটা আমি আসার আগে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমার সময় যা হবে তা আমার। উনারা চাইলেই তো মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে পারতেন।'

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডের তুলাতুলি থেকে হালিশহর পর্যন্ত কাট্টলী বিটে সৃজিত বাগানের পরিমাণ ৯৮২ হেক্টর।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh inflation rate update

Inflation declines to 8.48%, lowest in 27 months    

The easing was driven by declines in both food and non-food inflation

53m ago