টাঙ্গাইল

শতবর্ষীসহ ২ হাজার ৩৭৯ গাছ কেটে সড়ক ‘উন্নয়ন’

৫০-১০০ বছর বয়সী ২ হাজার ৩৭৯টি গাছ কেটে সড়ক ‘উন্নয়ন’
টাঙ্গাইল শহরের কাগমারী মোড় থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে গাছ কাটা চলছে। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইল-আরিচা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য কাটা পড়ছে রাস্তার পাশের ২ হাজার ৩৭৯টি গাছ। এর মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঠাল, মেহগনি ও বটসহ অসংখ্য শতবর্ষী প্রাচীন ফলদ ও বনজ গাছ। ইতোমধ্যে এর বেশকিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বাকিগুলো কাটা চলছে।
 
অপরদিকে, নদী ভাঙন থেকে একটি প্রাচীন অশ্বত্থ (পাকুড়) গাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন জেলার ঘাটাইল ইউনিয়নের গর্জনা গ্রামের মানুষ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ৫৯.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩৩ ফুট প্রশস্ত মহাসড়ক উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যার মধ্যে টাঙ্গাইল অংশের দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার এবং মানিকগঞ্জ অংশের দৈর্ঘ্য ১৮.৫০ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। 

উল্লিখিত মহাসড়কটি ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করছে।

কাটা হচ্ছে সড়কের গাছ। ছবি: স্টার

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং এই কাজের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
 
তিনি আরও বলেন, বৃক্ষপালন বিভাগ ইতোমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করেছে।

এ বিষয়ে বৃক্ষপালন বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মুকুট আবু সাঈদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া সড়কে কাটা হচ্ছে ১ হাজার ৩৭০টি গাছ। এগুলোর জরিপ মূল্য ধরা হয়েছিলো ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আর টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। 

অপরদিকে একই প্রকল্পের আওতায় আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর–নাগরপুর সড়কে কাটা হচ্ছে ১ হাজার ৯টি গাছ। এগুলোর জরিপ মূল্য ধরা হয়েছিলো ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

সরজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহরের কাগমারী মোড় থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে গাছ কাটা চলছে। এর মধ্যে শতবর্ষী আম, মেহগনি ও বট গাছও রয়েছে। 

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ খান ভাসানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উন্নয়নের বলিতে কাটা পড়া গাছগুলোর মধ্যে জমিদারী আমলের বহু প্রাচীন গাছ রয়েছে। গাছগুলো দীর্ঘকাল মানুষকে বন্ধুর মতো সুমিষ্ট ফল এবং সুশীতল ছায়া দিয়ে আসছিল। ভবিষ্যত প্রজন্ম এই পুরোনো গাছগুলো  আর দেখতে পাবে না।'
  
'সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা যে পরিমাণ বাড়ছে তাতে দেশ যে ক্রমশ মরুকরণের দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অপরদিকে নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। সুতরাং পরিবেশের স্বার্থে ভবিষ্যতে যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গাছ রেখেই যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট থাকতে হবে', যোগ করেন তিনি।
 
এদিকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অজুহাতে গাছ কাটা অব্যাহত থাকলেও নদী ভাঙনের হাত থেকে একটি প্রাচীন অশ্বত্থ (পাকুড়) গাছ রক্ষার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন জেলার ঘাটাইল উপজেলার গর্জনা গ্রামের মানুষ।

নদী ভাঙনের হাত থেকে একটি প্রাচীন অশ্বত্থ (পাকুড়) গাছ রক্ষার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ঘাটাইল উপজেলার গর্জনা গ্রামের মানুষ। ছবি: স্টার

 
জানা গেছে, ঝিনাই নদীর পাড়ে বিশাল পাকুড় গাছটির শীতল ছায়া আশ্রয় নেন গ্রামের কর্মক্লান্ত মানুষ। কিন্তু নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হতে বসেছিলো গাছটি। 

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, নিশ্চিত নদী ভাঙনের কবল থেকে প্রাচীন গাছটি কীভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে ভাবছিলেন তারা। কাছেই কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় মাটির কাজ চলছিলো। সেখানে গিয়ে মাটি ফেলে গাছটি রক্ষার জন্য অনুরোধ করেন তারা। অনুরোধে সাড়া দিয়ে এক্সকাভেটরে সাহায্যে নদী থেকে মাটি তুলে গাছটির গোড়া ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে। 

গর্জনা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, বিভিন্ন ছুতোয় যেখানে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে সেখানে গ্রামবাসীর প্রাচীন গাছটি রক্ষার ব্যাকুলতা নিঃসন্দেহে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
 

Comments

The Daily Star  | English
Motorcycle sales in the last 6 years

Motorcycle sales hit five-year low

Interestingly, the premium motorcycle segment bucked the trend, showing significant growth in 2024.

12h ago