আমরা প্রতিপক্ষ ভাবলেও বিএনপি ভাবে শত্রু: কাদের

কাদের
বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

বিএনপির বাজেট সমালোচনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'বিরোধী দল শুধু সমালোচনা করে বিরোধিতার খাতিরে। বাজেটের ব্যাপারেও একই। শত্রুতা করছে, প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে না।'

আজ শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা প্রথম দিনেই বলেছিলাম এই বাজেট হচ্ছে সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ২০২৬-এ উন্নয়নশীল দেশের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাব। সেই লক্ষ্যে কিছু উপাদান আমাদের যুক্ত করতে হবে কর্মপরিকল্পনার মধ্যে।'

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ম্যাজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এটা শেখ হাসিনার ম্যাজিক্যাল লিডারশিপের কারণে সম্ভব হয়েছে। সংকটে এখনো তিনি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যেখানে বাস্তবভিত্তিক যা করণীয়, করতে তিনি পিছপা হচ্ছেন না।'

মুদ্রাস্ফীতি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, 'আজকে মুদ্রাস্ফীতি একটি উদ্বেগের বিষয়, যেটা সারা বিশ্বময় সংকটের অন্যতম কারণ। ৮ দশমিক ৪, এ পর্যায়ে আমরা আছি। আমাদের টার্গেট, এই বাজেটে আমরা ৬ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসব।'

তিনি বলেন, 'মুদ্রস্ফীতি নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছিল কিন্তু আমাদের তো হিসাব-নিকাশ আছে। আজকে বিএনপি বড় বড় কথা বলে, তারা লুটপাটের বাজেট বলে। এ কথা তাদের মুখে শোভা পায় না। যাদের অর্থনীতি ছিল লুটপাটের অর্থনীতি এবং এই লুটপাটে তারা ছিল বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন। দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন; এই দলের মুখে লুটপাট আর দুর্নীতি বক্তব্য শোভা পায় না।'

'আর তাদের চেয়ে ১০ গুণ বড় বাজেট আমরা দিতে পেরেছি। ২০০৫-০৬ সালে বাজেট ছিল ৬৬ হাজার কোটি টাকা। আজকে সেই বাজেট কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে? আজকে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা জাতীয় বাজেট সংসদে উত্থাপিত হয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের জিডিপি ১০০ বিলিয়ন ডলার হতে সময় লেগেছিল ৩৯ বছর। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে ধারাবাহিক অগ্রগতির ফলে জিডিপি গত ১৪ বছরে সাড়ে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৬০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে,' বলেন তিনি।

রিজার্ভ নিয়ে অস্বস্তির কারণ নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল, তখন বলতে হবে শূন্য রিজার্ভ নিয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যাত্রা শুরু করতে হয়েছিল। সেই রিজার্ভ বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এবং বাংলাদেশের খুব বেশি টাকা দিয়ে...আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়াতে সেই রিজার্ভের টাকা আমাদের এখন ৩১ প্লাস পয়েন্টে এসেছে। এটা নিয়ে আমাদের অস্বস্তির কারণ নেই। পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ এখন তলানীতে। পৃথিবীর অনেক দেশের অবস্থা খারাপ।'

এ সময় তুরস্ক, আর্জেন্টিনার উদাহরণ তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের বলেন, 'দেশে দেশে সংকট, ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রভাব।'

তিনি বলেন, 'কেন যেন মনে হয় যেভাবে পানির সংকট তীব্রতা পাচ্ছে তাতে পানি নিয়ে এখানে বিশ্বযুদ্ধের একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।'

অনেক চিন্তা-ভাবনা করে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। খাদ্য উৎপাদন আমাদের ঠিক রাখতে হবে। কৃষিটা আছে বলে, খাদ্য উৎপাদন যথাযথভাবে হচ্ছে বলে বাংলাদেশ এখনো তেমন সংকটে পড়েনি। আজকে বিএনপি নেতাদের কথা শুনলে মনে হয় দেশে বোধ হয় দুর্ভিক্ষ হয়েছে। দেশ বোধ হয় দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত। যে সময় তারা "দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত" এমন সব উদ্ভট কথা-বার্তা বলে যাচ্ছে ঠিক সে সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর, ওয়াশিংটনের বিশ্বব্যাংকের হেড কোয়ার্টার, যুক্তরাজ্য ঘুরে এসে এর পরে তিনি ২ দিনের জন্য কাতার গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২টি রাত তিনি ফ্লাইটে। ভোরবেলা এসে বাংলাদেশে নেমেছেন। শেখ হাসিনা কি প্রমোদ ভ্রমণের জন্য গেছেন? দেশের জন্য গেছেন। দেশের মানুষের জন্য গেছেন। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে গেছেন। তার যা প্রাপ্তি কাতারে জ্বালানিতে আমরা কল্পনাও করতে পারব না। চুক্তির বাইরেও অবিশ্বাস্য সংযোজন হয়েছে জ্বালানিতে। যেটা আমাদের জ্বালানির ব্যাপারে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সাহায্য করেছে।'

বিএনপি শত্রুতা করছে অভিযোগ করে কাদের বলেন, 'আপনার সঙ্গে রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকতে পারে। আপনি তার প্রতিপক্ষ হতে পারেন কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে আপনারা প্রকাশ্যে শত্রুতা করছেন। প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। প্রকাশ্যে তার অর্জনকে অস্বীকার করছেন।'

বিরোধী দল শুধু সমালোচনা করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আজকে করোনা, বিশ্ব পরিস্থিতিতে কোনো সাজেশন দেওয়ার কেউ নেই। বিরোধী দল শুধু সমালোচনা করে বিরোধিতার খাতিরে। বাজেটের ব্যাপারেও একই। শত্রুতা করছে, প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে না। অপজিশন হবে প্রতিপক্ষ। অপজিশনের কাছে সরকার হবে প্রতিপক্ষ। আমরা প্রতিপক্ষ ভাবলেও তারা ভাবে শত্রু। এই শত্রুতার পরিবেশে বিরোধী দলের কাছে বাজেটের প্রশংসা, ভালো দিক একটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের নেতাদের বক্তব্য শুনলাম। প্রশংসার বিষয়গুলো তারা প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) তো আছেই, তারা বলেই যাচ্ছে। বলুক, কথা হচ্ছে যে, বলার মধ্যেও একটা বিষয়, বাস্তবসম্মত বিষয়গুলো স্বীকার করা উচিত। কোন পরিস্থিতিতে কোন পদক্ষেপটা নিতে হবে সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর যে দূরদর্শীতার পরিচয় দিচ্ছেন সেটা অবশ্যই সবার স্বীকার করা উচিত।'

এ সময় ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।

বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ঋণ যেমন একজন যোগ্য ব্যক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তেমন একটি দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এগিয়ে যাওয়ার পথে শক্তি জোগায়। ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে গৃহীত অর্থ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তা ধনী-গরিব সবার সমান উপকার হয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে। প্রতিটি দেশেই বিদেশি ঋণ গ্রহণ করে সরকার পরিচালনা করে থাকে।'

এ সময় বিভিন্ন দেশের ঋণ গ্রহণের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন কাদের।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাজারে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে—গণমাধ্যমকর্মীদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে কি একটা মানুষ না খেয়ে মরেছে? কষ্ট তো আছে। যারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, যারা যুদ্ধ বাধাচ্ছে তারাই কষ্ট দিচ্ছে। কষ্টটা দিচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি, আমরা কষ্ট দিচ্ছি না। আমাদের জনগণকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না কিন্তু কষ্ট হয়তো পাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে। আমরা আমদানি করি অনেক বেশি দামে, আমাদেরকে বিক্রি করতে হয় অল্প পয়সায়।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নেতিবাচক দিকগুলোকে সহনীয় পর্যায়ে ইতিবাচক ধারায় যাতে নিয়ে আসা যায় সে কারণে বাজেট প্রণীত হয়েছে। এ বাজেটে নেতিবাচক যে বিষয়গুলো সমালোচনার উৎস হয়েছে সেগুলো দূর করে ইতিবাচক ধারা ফিরে আসা বাজেটের লক্ষ্য।'

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

3h ago