আমেরিকায় কেন এত জনপ্রিয় লেখক জুডি ব্লুম
হঠাৎ জুডি ব্লুম সর্বত্র আলোচনায়। এর কারণ 'জুডি ব্লুম ফরএভার' শিরোনামে তার জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র, এই মুহূর্তে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে স্ট্রিম করা হচ্ছে। ৫২ বছর বয়সে লেখা উপন্যাস "ঈশ্বর তুমি কি আছ? এটা আমি, মার্গারেট" ("Are You There God? It's Me, Margaret)-এর চলচ্চিত্র সংস্করণ, যা সবাইকে আকর্ষণ করছে।
ব্লুম আমেরিকার তরুণদের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। একই সাথে সবচেয়ে বেশি নিন্দাও কুড়িয়েছেন। তার বইগুলো প্রিটিন, টিন এবং তরুণদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় কারণ তিনি তরুণদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে লিখেছেন। এগুলিতে তারা সম্পর্কযুক্ত। তিনি জনপ্রিয় কারণ তিনি যা লেখেন এবং যেভাবে লেখেন তা তাঁর বইয়ে চরিত্রগুলোর ক্রিয়াকলাপ অন্য যে কোন লেখকের চেয়ে বেশি বাস্তব করে তোলেন।
জুডি ব্লুম হলেন একজন আমেরিকান লেখক, কথাসাহিত্যের। ব্লুম ১৯৫৯ সালে লেখা শুরু করেন এবং ২৫ টিরও বেশি উপন্যাস প্রকাশ করেছেন। ব্লুম নিউ জার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন। ১৯৬১ সালে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। তার উপন্যাস ৮২ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে এবং ৩২ ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
জুডি ব্লুমের কিছু বই প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। গত মার্চে, ফ্লোরিডার মার্টিন কাউন্টি স্কুল ডিসট্রিক্ট তার ১৯৭৫ সালের উপন্যাস 'ফরএভার', যা কিশোরী যৌনতা নিয়ে লেখা, তা জুনিয়ার হাই এবং হাই স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
আমেরিকায় স্কুলে গেছে এমন কোন টিন বা প্রিটিন খুব কমই মিলবে যারা জুডি ব্লুমের বই পড়ে বড় হয়নি। ৭০ এবং ৮০ এর দশকে ব্লুম যখন কিশোর এবং কিশোরীদের জন্য লেখা শুরু করেছিলেন, তখন তারা তার উপন্যাসগুলো গোগ্রাসে পড়ছিল। কি ছিল সেই বই গুলিতে?—এইগুলোতে লেখক তাদের আশা আর উদ্বেগের কথা বলেছিলেন। তাদের অনেক না জানা বিষয় সামনে এনেছেন যা তারা অভিবাদকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারতো না।
১৯৭০ সালে তার বই, "ঈশ্বর তুমি কি আছ? এটা আমি, মার্গারেট"- উপন্যাসটিতে একটি ১১-বছর-বয়সী মেয়ের গল্প বলছিলেন-- মার্গারে চিন্তিত, তার অন্য বান্ধবীদের ইতিমধ্যেই পিরিয়ড হয়েছে কিন্তু তার এখনও হচ্ছে না, অন্য বান্ধবীদের স্তন উঠছে, অনেকেই ব্রা পরতে শুরু করেছে — কিন্তু তার এখনও কিছু হয়নি। বইটিও বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ করা হয়, যার মধ্যে ১৯৭০ সালে, তার নিজের সন্তানেরা যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছিল সেখানেও বইটি নিষিদ্ধ হয়েছিল। এর কাহিনী এমন--
গল্পের মূল চরিত্র মার্গারেট সাইমন তার দ্বাদশ জন্মদিনের কাছাকাছি, বেড়ে ওঠার যন্ত্রণা ভোগ করছে এবং একই সঙ্গে ধর্ম নিয়ে সংকটের মুখোমুখি। তার বাবা হারবার্ট ইহুদি এবং তার মা বারবারা খ্রিস্টান। পরিবারটি সবেমাত্র নিউইয়র্ক সিটি থেকে নিউ জার্সির শহরতলিতে এসেছে এবং মার্গারেট তার জীবনের একটি কঠিন সময়ে একটি নতুন স্কুলে ভর্তি হয়ে খাপ খয়ানোর জন্য লড়াই করছে। মার্গারেটের খ্রিস্টান দাদি তাকে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছেন, কিন্তু তার ইহুদি দাদি চাচ্ছেন মার্গারেট যাতে ইহুদি ধর্ম পালন করে।
মার্গারেট ক্লাসের একটি প্রজেক্ট থেকে তার নিজের বিশ্বাস আবিষ্কার করে। সে কিশোরীদের একটি গোপন ক্লাবে যোগ দেয়, সেখানে বালিশে চুম্বন কৌশল অনুশীলন করা শিখে, শিখে স্তন-বর্ধিত-করণ ব্যায়াম। সে কামনা করে তার পিরিয়ড শুরু হবে--সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। নিরাশ হয়। পুরো উপন্যাসে মার্গারেট মাঝে মাঝে প্রার্থনা করে, "ঈশ্বর তুমি কি আছ? আমি, মার্গারেট" এভাবেই সে প্রার্থনা শুরু করে, কিন্তু ঈশ্বর তার প্রার্থনা শুনছেন না, তাই সে ক্রুদ্ধ হয় ঈশ্বরের সাথে তার কথা বলা (প্রার্থনা) বন্ধ করে দেয়। উপন্যাসের শেষে, তার দীর্ঘ-প্রত্যাশিত পিরিয়ড হয় এবং মার্গারেট ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, "আমি জানি ঈশ্বর তুমি আছ। আমি জানি তুমি আমাকে ভুলবে না!"
নতুন ডকুমেন্টারি জুডি ব্লুম ফরএভারে, তিনি বর্ণনা করেছেন- কিভাবে তিনি সাধারণ একজন শহরতলির স্ত্রী, গৃহকর্মী এবং মায়ের ভূমিকায় নিজেকে মানিয়ে নিয়ে একজন সাহিত্যিক সুপারস্টারে পরিণত হয়েছেন। এক পর্যায়ে, ব্লুম প্রতি মাসে তরুণ পাঠকদের কাছ থেকে ২০০০ চিঠি পেতেন - যাদের মধ্যে অনেকেই তার কাছে তাদের হৃদয় ঢেলে কথা বলতো।
৮০ বছর বয়সে, জুডি ব্লুম নারীবাদ, #MeToo আন্দোলন ভূমিকা রাখেন। এখন ৮৫, ব্লুম একজন প্রিয় সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব। কয়েক বছর ধরে তার বইগুলো পরিশীলিত করার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা কেলি ফ্রেমন ক্রেগকে তিনি মার্গারেটকে বড় পর্দায় আনার অনুমতি দিয়েছেন। চলচ্চিত্রটি ইতিমধ্যেই সবার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ব্লুম বয়ঃসন্ধিকাল এবং বয়ঃসন্ধি নিয়ে মার্গারেটকে অনুসরণ করে, এবার একটি ছেলের দৃষ্টিকোণ থেকে আরেকটি বই লেখেন "আবার, হয়তো আমি হবো না"(Again, Maybe I Won't)।
ব্লুমে'র "ফাজ" (Fudge) সিরিজের প্রথম বই, "টেলস অফ এ ফোর্থ গ্রেড নাথিং," যা প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। প্রায় এক দশক পরে লেখেন "সুপারফাজ" (Superfudge) এই সিরিজের আরেকটি বই লেখন, "ফাজ-এ-ম্যানিয়া" (Fudge-a-Mania)
তিনি আরেকটি উপন্যাস লেখেন—'ডিনি' Deenie কিশোরীদের জন্য। উপন্যাসে, 'ডিনি' একজন আকর্ষণীয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী যার মা তাকে পেশাদার মডেল হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে--এই নিয়ে গড়ে উঠে কাহিনী। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তার প্রথম উপন্যাস 'Wifey' যেখানে স্যান্ডি, একজন নিউ জার্সির গৃহিণী তার প্রেম এবং মানিয়ে চলার গল্প।
ব্লুম তার লেখার জন্য অনেক পুরস্কার জিতেছেন, যার মধ্যে ১৯৯৬ সালে আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন (ALA) এর মার্গারেট এ. এডওয়ার্ডস পুরস্কার। তরুণ ও বয়স্কদের সাহিত্যে অবদানের জন্য লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসে জীবন্ত কিংবদন্তি লেখক হিসাবে স্বীকৃত হন। ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশন পদক পান ২০০৪ সালে।
Comments