বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৭ চা
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চা। কাজের ক্লান্তি কিংবা মানসিক চাপমুক্ত হতে চায়ের জুড়ি নেই। শত শত বছর ধরে মানুষ চা পান করে আসছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চা নিয়ে নানান গবেষণা হয়েছে, চায়ের ধরণে যোগ হয়েছে নানান মাত্রা।
চা সহজলভ্য। কিন্তু, পৃথিবীতে এমন চা আছে, যার দাম শুনলে অবাক হতে আপনি বাধ্য।
আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবসে বিশ্বের দামি ৭টি চায়ের তথ্য জেনে নিন।
দা-হং পাও চা, চীন
চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উয়ি পর্বতমালায় উৎপাদিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামী চা দা-হং পাও চা। এর প্রতি কেজি চায়ের মূল্য প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। তবে, এই চা খুবই বিরল। তাই এটিকে চীনের জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিক্সন যখন চীন সফর করেছিলেন, তখন চীনের মাও সেতুং তাকে ২০০ গ্রাম দা-হং পাও উপহার দেন। যা ছিল ২ দেশের শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতীক।
এই চায়ের সঙ্গে চীনের মিং রাজবংশের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। প্রচলিত আছে, মিং রাজবংশের চীনা সম্রাট তার অসুস্থ মাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। মায়ের সুস্থতার জন্য রাজ পোশাকের বিনিময়ে এই চা নিয়েছিলেন সম্রাট।
পাণ্ডা ডাং চা, চীন
পাণ্ডা ডাং চা চাষে সার হিসেবে পাণ্ডা ভালুকের গোবর ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের উদ্যোক্তা আন ইয়ানশি প্রথম এই চা চাষ করেছিলেন। তিনি জৈব সার হিসেবে পাণ্ডার গোবর ব্যবহার শুরু করেন।
প্রথমবার ৫০ গ্রাম চা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ডলারে বিক্রি করেছিলেন আন ইয়ানশি। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত পাণ্ডা ডাং চায়ের নানান উপকারিতা আছে। বর্তমানে পাণ্ডা ডাং চা প্রতি কেজি প্রায় ৭০ হাজার ডলারে বিক্রি হয়।
ইয়েলো গোল্ড টি বাডস, সিঙ্গাপুর
বিলাসবহুল ও বিরল ইয়েলো গোল্ড টি বাডসের কুঁড়ি বছরে একবার সংগ্রহ করা হয়। তাও আবার স্বর্ণের কাঁচি ব্যবহার করে। তারপরে রোদে শুকানো হয়। এরপর চা পাতাগুলো ভোজ্য ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ ফ্লেক্স দিয়ে স্প্রে করা হয়।
এটি চীনের সম্রাটদের চা নামে পরিচিত। এই চায়ের এক কেজি পাতার দাম প্রায় ৭ হাজার ৮০০ ডলার। বর্তমানে শুধু সিঙ্গাপুরে টিডাব্লিউজি চা কোম্পানি এই চা বিক্রি করে।
সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা, দার্জিলিং (ভারত)
কেবল পূর্ণিমার রাতে দক্ষ শ্রমিকরা এই চা সংগ্রহ করেন। এটি দার্জিলিংয়ের ঢালু পাহাড়ের মাকাইবাড়ি চা স্টেটে কাটা এক ধরণের ওলং চা। এই চা বিশেষ কুঁড়ি থেকে আসে, যা দেখতে রূপালি সুইয়ের মতো এবং এতে আছে সূক্ষ্ম ফলের সুগন্ধ। এই চায়ের স্বাদ দারুণ।
২০১৪ সালের এক নিলামে ১ কেজি সিলভার টিপস ইম্পেরিয়াল চা ১ হাজার ৮৫০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। যা ছিল ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চা।
গিয়োকুরো, জাপান
জাপানের সবচেয়ে ভালো মানের গ্রিন টি-র একটি গিয়োকুরো চা। জাপানের উজি জেলায় এই চায়ের চাষ হয়। এই চা কাটার প্রক্রিয়া হিসেবে সেরা চা পাতা বাছাই করার আগে ৪ সপ্তাহের জন্য খড়ের ম্যাটের ছায়ায় রাখতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদকে এল-থিয়ানিন অ্যামিনো অ্যাসিড ধরে রাখতে সহায়তা করে, যা চায়ের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে।
১৮৩৫ সালে গিয়োকুরো চা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ষষ্ঠ কাহেই ইয়ামামোতো। এক কেজি গিয়োকুরো চায়ের দাম প্রায় ৬৫০ ডলার।
টিগুয়ানিন চা, চীন
বিশ্বের সর্বাধিক প্রশংসা পাওয়া চায়ের একটি টিগুয়ানিন চা। এটি এক ধরণের ওলং চা, যা বৌদ্ধ দেবতার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে। বৌদ্ধ দেবতা গুয়ান ইন লৌহ দেবী হিসেবেও পরিচিত। এই চা পাতায় নিজস্ব বাদামের স্বাদ ও ফুলের সুগন্ধ আছে।
চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উঁচু অঞ্চলে উৎপাদিত হয় টিগুয়ানিন চা। এর পাতা উজ্জ্বল সোনালি রঙের হওয়া পর্যন্ত রোদে শুকানো হয়। টিগুয়ানিন চা প্রতি কেজি প্রায় ৩ হাজার ডলারে বিক্রি হয়।
ভিনটেজ নার্সিসাস চা, চীন
নার্সিসাসের গ্রিক কিংবদন্তির নামানুসারে এই চায়ের নামকরণ করা হয়েছে। এটি একটি বিরল ওলং চা, যা চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উয়ি পর্বতমালা এবং তাইওয়ানের পিংলিন চা অঞ্চলে উৎপাদিত হয়।
এই চায়ের তীব্র সুগন্ধ আছে এবং এক কেজির জন্য প্রায় ৬ হাজার ৫০০ ডলার খরচ হয়।
লাইফস্টাইল এশিয়া অবলম্বনে
Comments