চনপাড়ায় ফের সংঘর্ষ, ১ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১১

সংঘর্ষের পর রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। 

আজ বুধবার দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গোলাগুলিতে এক দিনমজুর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের আরও ১০ জন।

গুলিবিদ্ধ মো. সৈয়দ খাঁ (৫৫) চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুই নম্বর গলির বাসিন্দা। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ নিয়ে গত একমাসে চনপাড়ায় ৩টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ১১ এপ্রিলের সংঘর্ষে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

গুলিবিদ্ধ সৈয়দ খাঁর ছেলে জুলহাস খাঁ বলেন, 'বাবা সকালে কাজের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। দুপুরে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন।'

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুপুর আড়াইটার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। চনপাড়ায় গোলাগুলির সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে স্বজনরা জানান।'

স্থানীয়রা বলছেন, চনপাড়ার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সমসের আলী ও সাহাবুদ্দিন গ্রুপের সঙ্গে জয়নাল আবেদীন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জয়নালের ওপর হামলা চালায় সমসের ও সাহাবুদ্দিন লোকজন। এ ঘটনার জেরে আজ বুধবার দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি চলে। 
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সৈয়দ ছাড়াও উভয়পক্ষের আরও ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মঙ্গলবার বিকেলে চনপাড়া এলাকার একটি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী যান। পরে সেখানে সমসের আলী ও জয়নাল আবেদীন উপস্থিত হন। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর সেখানে জয়নালের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে রাতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষ মুখোমুখি হয়।'

রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে সংঘর্ষ এড়ানো গেলেও, বুধবার দুপুরে তারা আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল চনপাড়ায় পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চনপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'

এদিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সমসের আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জয়নাল ও ইয়াসমিন চনপাড়ায় মাদক ব্যবসা চালানোর জন্য এসব কাজ করছে। আমি এসবের মধ্যে নাই।'

পাল্টা অভিযোগ করে জয়নাল আবেদীন বলেন, 'চনপাড়ার নিয়ন্ত্রক ছিল বজলু মেম্বার। সে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরই পুরো চনপাড়া নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় সমসের। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে সাহাবউদ্দিন। গতরাতে তারা আমার বাড়িতে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।'

চনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একসময় চনপাড়া নিয়ন্ত্রণ করতেন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য বজলুর রহমান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য ছিলেন। হত্যা, মাদক, ডাকাতিসহ অন্তত ২৬ মামলার আসামি বজলুর রহমান বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর আলোচনায় এলে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। 

গত ৩১ মার্চ কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বজলুরের মৃত্যুর পর চনপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় বলে স্থানীয়রা বলছেন। 

তাদের মধ্যে সমসের আলী ও জয়নাল আবেদীন কায়েতপাড়া ইউনিয়নে শূন্য হওয়া ইউপি সদস্য পদটিতে নির্বাচনে আগ্রহী। এ কারণে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে।

গত ১১ এপ্রিল সমসের আলী ও সাহাবউদ্দিনের লোকজনের সঙ্গে জয়নাল আবেদীনের লোকজনের সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়। 
৩০ এপ্রিল আবার তারা সংঘর্ষে জড়ায়। পরদিন সকালে ওই এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
 

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

2h ago