সাংবাদিকদের হয়রানি-ভীতি ছাড়াই কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে: ১৪ দেশের দূতাবাস

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনে এমএফসির উদ্বেগ

'মুক্ত এবং স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মাধ্যমে নাগরিকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য জানার পাশাপাশি তাদের নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে। স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার দলিলের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।'

আজ ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্য দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।

এই বিবৃতিতে সই করেছে বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস/হাইকমিশন।

বিবৃতিতে বলা হয়, '১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মে মাসের ৩ তারিখকে "ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে" বা 'বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই দিনে মুক্ত গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা উদযাপনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার অঙ্গীকার এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।'

'১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ঘোষণাপত্রের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "প্রত্যেকেরই মতামত পোষণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে; কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া অবাধে মতামত পোষণ করা এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যেকোনো মাধ্যমের মারফতে তথ্য ও ধারণাগুলো জানা বা অনুসন্ধান, গ্রহণ ও বিতরণ করা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।"'

'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার মূল্যবোধকে সম্মিলিতভাবে সমুন্নত রাখি। সাংবাদিকদের অবশ্যই হয়রানি, ভীতি বা সহিংসতার ভয় ছাড়াই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এটি সুশাসনকে সহায়তা করা ও জনসাধারণকে কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবহিত করা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া, সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে এবং তথ্যের সূত্রগুলোর সুরক্ষা দিতে পারতে হবে।'

'মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন সমমনাদেশগুলো নিয়ে গঠিত, যারা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার পক্ষে কাজ করে ও পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশস্থ মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের ডিপ্লোম্যাটিক নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভের (কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক উদ্যোগ) দেশগুলো আজ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে।'

'মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্য হিসেবে আমরা মুক্ত গণমাধ্যমের তাৎপর্য অনুধাবন করা ও একে রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকি। এর সঙ্গে সরকার, গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর স্বত্বাধিকারী, নাগরিক সমাজের নেতারা,  রাজনৈতিক দলগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জড়িত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার মাধ্যমে একটি সমাজ আরেও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধশালী হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি এমন দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বেশি। এর সহজ কারণটি হলো—মুক্ত গণমাধ্যম স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে; যা দুর্নীতি কমায় ও উদ্ভাবনী শক্তিকে ত্বরান্বিত করে, যা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য সহায়ক।'

'এ ছাড়া, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্যও মুক্ত গণমাধ্যম অত্যাবশ্যক। সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রকাশ ও জবাবদিহিতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এটি মুক্ত গণমাধ্যম আছে এমন সব দেশের জন্য প্রযোজ্য। সাংবাদিকরা নারীদের বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টিও তুলে ধরেন।'

'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্মুক্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাজের বিকাশ ও উন্নয়নের শক্তিশালী ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন একটা ধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা কাজ করছে বাংলাদেশস্থ মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্যরা তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Tarique Rahman on election demands

Conspirators eyeing country’s resources like vultures: Tarique

Tarique said the conspiracy by mischievous elements, both within the country and abroad, against the BNP, its leaders, and the nation, does not stop

20m ago