গোপালদী পৌরসভা

৩ শিশুর চুল কেটে নির্যাতনকারী সেই মেয়রকেই আবার মনোনয়ন দিল আ. লীগ

আবারও তিনি মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন নির্যাতনের শিকার শিশুদের অভিভাবকরা।
মেয়র হালিম সিকদার। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন হালিম সিকদার। তার বিরুদ্ধে ৩ শিশুর চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা চলমান আছে।

পুনরায় মেয়র পদে তিনি ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন নির্যাতনের শিকার শিশুদের অভিভাবকরা।

আগামী ২১ জুন গোপালদী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে হালিমের নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগের দুই মেয়াদেও তিনি দলীয় মনোনয়নে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন।

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি চুরির অপবাদ দিয়ে ৩ শিশুকে চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হালিম সিকদারের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় পরদিন মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করেন নির্যাতনের শিকার এক শিশুর অভিভাবক। মামলায় ২ আসামি গ্রেপ্তার হলেও, হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন হালিম সিকদার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রামচন্দ্রদী বাজার এলাকায় সরকারি জায়গায় মেয়র হালিম সিকদারের একটি টেক্সটাইল কারখানা আছে। কারখানাটি উচ্ছেদ করা হলে কিছু যন্ত্রপাতি ছড়ানো ছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ২ শিশু সেখানে খেলছিল। তাদের একজনের হাতে একটি শেকল দেখতে পান মেয়র। পরে তিনি ওই দুই শিশুকে বেঁধে তাদের সঙ্গী আরেক শিশুকে ধরে আনেন। পরে ৩ জনকে বেঁধে গ্রামে ঘোরান এবং  মারধর করেন মেয়র। ৩ ঘণ্টা ঘোরানোর পর বাজারে নিয়ে প্রকাশ্যে ৩ শিশুর চুল কেটে দেন মেয়র।

এ ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমে স্বীকারোক্তিও দিয়েছিলেন মেয়র হালিম সিকদার। তিনি এ ঘটনাকে 'অন্যায় মনে করছি না' বলেও মন্তব্য করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হালিম সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোটের মাঠে ওই ঘটনার প্রভাব পড়বে না।'

এদিকে হালিম সিকদারের পুনরায় মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন নির্যাতনের শিকার শিশুদের অভিভাবকরা। এক শিশুর স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনার পর তো আমরা ভয়ে মামলাই করতে চাইনি। যখন মিডিয়ায় লেখালেখি হলো তখন পুলিশের আশ্বাসে মামলা করা হলো একটা। ওই মামলা তুলে নিয়ে আপসে যাওয়ার জন্য আমাদের অনেক ভয় দেখান হয়েছে।'

'মেয়র হালিম প্রভাবশালী মানুষ' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'উনার সঙ্গে আমাদের শত্রুতা যায় না। আবারও উনি মেয়র হইতেছে, আমরা বিচার চাইব কোন সাহসে?'

'শিশু নির্যাতনকারী' এক ব্যক্তিকে ক্ষমতাসীন দল পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন শিশু সংগঠন খেলাঘর আসরের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ঘটনায় শিশু নির্যাতনকারীরা আরও উৎসাহিত হবে। সমাজে শিশুদের ওপর ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়বে।'

শিশু নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারাদেশের মানুষ তার কৃতকর্ম সম্পর্কে জেনেছে। তার মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তি মনোনয়ন পেয়েছেন, এতে আমরা আশ্চর্য হয়েছি। যদিও মনোনয়ন দেবার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্ত।'

'আমার বিশ্বাস, জননেত্রী শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত তার (হালিম সিকদার) কৃতকর্মের খবর পৌঁছায়নি। পৌঁছালে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তি মনোনয়ন পেতেন না। কেননা প্রার্থী হিসেবে যোগ্য আরও লোক পৌরসভায় আছে,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Former planning minister MA Mannan arrested in Sunamganj

Police arrested former Planning Minister MA Mannan from his home in Sunamganj's Shatiganj upazila yesterday evening

3h ago