ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল চেনার ৫ উপায়

ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল চেনার ৫ উপায়

নিত্যদিনের চলাফেরাতে এখন বাসার সামনের রাস্তাটা থাকুক না থাকুক, নিউজফিডের উঠানটা আমাদের চোখের সামনেই থাকে। ফেসবুক এমনই এক বিশাল অংশ হয়ে উঠেছে জীবনের, এতে মশগুল হওয়াটাই যেন এখনকার রীতি। 

তবে এ রীতি সকলে যে সমানভাবে, অথবা সঠিকভাবে মানেন, এমনটা নয়। অনেকেই অন্য নাম, অন্য পরিচয়ের পেছনে লুকিয়ে অনেক অসৎ কাজও করে থাকেন। হ্যাঁ, ফেইক ফেসবুক প্রোফাইলের কথাই হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এসব প্রোফাইল সম্পর্কে সচেতন হওয়াটা দরকার, নয়তো হ্যাকার বা প্রতারকদের পাল্লায় পড়তে খুব একটা দেরি হবে না। এসব ফেইক প্রোফাইল যাচাইয়ের জন্য ৫টি কৌশল দেখে নেওয়া যেতে পারে–

প্রোফাইলে ব্যবহৃত ছবি

প্রোফাইলে থাকা ছবিগুলো, অর্থাৎ প্রোফাইল ছবি বা ডিসপ্লে পিকচার, কভার ফটো, আপলোড করা ছবি, বিভিন্ন অ্যালবাম সবই একটু খতিয়ে দেখতে হবে। ফেইক প্রোফাইলে বেশিরভাগ সময় নকল ছবি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সেলিব্রেটি, মডেল বা অভিনেতা-অভিনেত্রীর ছবি থাকে। অনেকে আবার বিভিন্ন কার্টুনের ছবি ব্যবহার করে। তাই কোনো প্রোফাইলের ছবি নিয়ে একটুও সন্দেহ জাগলে ছবিগুলো গুগলে খুঁজে দেখা যায়। আর সত্যি বলতে একটা পুরো আলাদা জীবন রচনা করে ফেলাটা সাধারণ ফেইক প্রোফাইলের জন্য সহজ কোনো কাজ নয়। কেউ নিশ্চয়ই বসে বসে ক্যাফেতে খেতে যাওয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো মুহূর্তগুলোর ছবি 'তৈরি' করার মতো কষ্ট করতে যাবে না। ফেইক প্রোফাইলে বেশিরভাগ চটকদার দুয়েকটি প্রোফাইল ছবি আর কভার ফটো দিয়েই বাজিমাত করে দেওয়া হয়। তাই 'ব্যক্তিগত ছবি' আছে কি না, সেটি লক্ষ্য করার মাধ্যমেও ফেইক প্রোফাইল শনাক্ত করা সম্ভব। 

টাইমলাইনের পোস্ট

একথা মানতেই হবে যে একটি ফেইক প্রোফাইল ধরে রাখা ধৈর্যের কাজ। অন্তত তাতে নিয়মিত পোস্ট দিয়ে সচল রাখার বিষয়টি তো বটেই। বেশিরভাগ লোকই সেটা করে না। তাই খুবই অনিয়মিত পোস্ট বা কোনো পোস্ট না থাকাও ফেইক প্রোফাইল চিহ্নিত করার একটি মানদণ্ড হতে পারে। অথবা বেশি বেশি অন্য পেজ বা গ্রুপের শেয়ার করা পোস্টের আধিক এবং ব্যক্তিগত কোনো ঘটনা বা তথ্য না থাকাটাও একটু আশ্চর্য। তাই বন্ধুতালিকায় থাকা বা বন্ধুত্বের অনুরোধ নিয়ে আসা এমন কোনো প্রোফাইলের আচরণে মনে খটকা লাগলে ঠিকঠাক পর্যবেক্ষণ করাটা জরুরি। 

বন্ধু তালিকা

কারও বন্ধু তালিকায় যদি দেশীয় বা স্থানীয় লোকের চেয়ে অতি মাত্রায় অন্য দেশের লোকজন থেকে থাকে, তবে যতই 'আমরা সকলেই বিশ্বগ্রামের বাসিন্দা' গোছের ধারণা রাখা হোক না কেন– কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়বেই। অনেক বেশি 'ফরেনার ফ্রেন্ড' কিন্তু ফেইক ফেসবুক প্রোফাইলের অন্যতম দিকনির্দেশক। একটু ভালোমতো বুঝতে হলে সেসব অ্যাকাউন্টেও ঢুঁ মেরে আসা যায়। আর এসব প্রোফাইলের বন্ধুতালিকা যত দীর্ঘই হোক না কেন তাদের পোস্ট, কমেন্ট, রিঅ্যাকশন এসব একটু অনুসরণ করলেই দেখা যাবে– সেখানে লোকজনের আনাগোনা খুবই কম। আর থেকে থাকলেও তা বেশ যান্ত্রিক, অটো কমেন্টে ভরপুর। 

ইউআরএল ও প্রোফাইলের নাম

অনেক ফেইক প্রোফাইলেই আইডির নাম আর ইউআরএল এক থাকে না, কেন না নামটা বারবার চেঞ্জ করা হয়। অন্যদিকে ইউআরএল সেই প্রাথমিকটাই থেকে যায়। এভাবেও আসল-নকল যাচাই করা যায়। 

যোগাযোগের ধরন 

অনেকদিন বন্ধুতালিকায় থাকার পরও তারা কথা বলতে আসছে কি না, বা কথা বললে কী ধরনের যোগাযোগ করছে– এগুলো ভালোভাবে লক্ষ করতে হবে। ফেসবুকে স্বল্প পরিচয়েই কেউ যদি কোনোরকম সাহায্য চেয়ে বসে, তবে উদারমনা হবার আগে সেই মানুষটির পরিচয় নিয়ে সতর্ক হওয়াটা জরুরি। শুধু নিজের সঙ্গেই নয়, অন্যদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ খেয়াল করতে হবে। কমেন্টবক্সে তাদের চলাচল কেমন, মানুষের সঙ্গে কতটা ব্যক্তিগতভাবে সংযুক্ত আছে– এই দিকগুলোতে দৃষ্টিপাত করলে অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়। 

তবে এসব মানদণ্ড মেনে চললেই যে প্রোফাইলটি আসল নয়, নকল– এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। হতেই পারে, লুকিয়ে থাকার প্রয়োজন না থাকলেও অনেকে এভাবেই তার একমাত্র প্রোফাইলটি রাখতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো খেয়াল করে চললে অন্তত অনেক সাইবার অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা যাবে, কেন না নিত্যদিনই ফেইক প্রোফাইলের খপ্পরে পড়ে মানুষজন নিজেদের গোপনীয়তা-অর্থসহ অনেক কিছুই হারাচ্ছেন। তাই সাবধানের মার নেই।

তথ্যসূত্র: এমইউও, টেকথার্স্ট্রি, ম্যালওয়ারফক্স
 

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago