ব্যাটিং স্বর্গে আগ্রাসী ক্রিকেটের আভাস 

Paul Starling & Shakib Al Hasan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ/ স্টার

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট দূর থেকে দেখেও মনে হলো চকচক করছে। ধবধবে উইকেটে মাটি ধরে রাখতে হালকা মরা ঘাস আছে। সেই ঘাস যে ব্যাটসম্যানদেরই সুবিধা করে দিতে তা অনুমেয়। দুই দলের দুই কোচও উইকেট দেখে ব্যাটারদের পক্ষে নির্দ্বিধায় রায় দিলেন। মোটামুটি একটি ব্যাটিং স্বর্গে শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। যেখানে অনেকখানি এগিয়ে ফেভারিট বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্রেফ জয়ই নয়, সাকিব আল হাসানদের দলের চাওয়া বাড়তি আরও অনেক কিছু।

চট্টগ্রামে সোমবার দুপুর ২টায় শুরু হবে প্রথম টি-টোয়েন্টি। ২৯ ও ৩১ তারিখের ম্যাচগুলো একই সময়ে। টি-টোয়েন্টির যে ধারণা বা দর্শন তার সঙ্গে ভরদুপুরে ম্যাচ গড়ানো বেশ বেমানান। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের চাহিদা হচ্ছে দিনের আলো ফুরিয়ে ফেলে কাজ সেরে মানুষ ছুটবেন চার-ছক্কার বিনোদনের খোঁজে। কৃত্রিম আলোর নিচে হবে মারকাটারি উৎসব।

কিন্তু একেক সময় একেক কারণে সেই কনসেপ্টের বাইরে যেতে হয় বিসিবিকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শিশিরের কথা মাথায় রেখে খেলা রাখা হয়েছিল বিকেল ৩টায়। এবার রমজান মাসের কথা নেওয়া হয়েছে বিবেচনায়। ইফতারের আগে যেন খেলা শেষ করা যায় এই চিন্তা করেছেন আয়োজকরা। তবে সেটাই বরং বুমেরাং হতে পারে। রোজা রেখে কজনই বা ভরদুপুরে খেলা দেখতে রোদে পুড়বেন? ঠিক ইফতারের আগে খেলা শেষ হওয়ার পর হয়রানিতে পড়ার ঝক্কিও আছে। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড ও এই সব কারণ মিলিয়ে গ্যালারি যদি বেশিরভাগ ফাঁকা থাকে তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

Bangladesh Cricket Team
ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

বাংলাদেশ দলের অবশ্য এসবে ভাবনা নেই। আরও একটি পরীক্ষায় সব প্রশ্নে ফুলমার্কস পাওয়া চাই। বাংলাদেশে খেলতে এসে ওয়ানডে সিরিজে আইরিশরা যেমন পারফর্ম করেছে তাতে তাদের নিয়ে আর চিন্তার কি আছে? আরেকটা সহজ জয়ই তো আসা উচিত। বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এমন প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে বোঝাতে চাইলেন কাজটা অতটাও সহজ না,  'না না, কোন ক্রিকেট ম্যাচই সহজ নয়। আমরা হালকাভাবে ভুগতে হবে। এটা আমরা সবাই ক্যারিয়ারের শুরুতেই বুঝে যাই। এজন্য খেলাটাকে আমরা ভালোবাসি। আমরা সব প্রতিপক্ষকেই সমানভাবে নেই। কিন্তু ভয় পাই না। এটাই আমাদের মন্ত্র।'

সবাই হয়ত ভেবেছিলেন আইরিশদের ঘরের মাঠে স্পিন দিয়ে ধরাশায়ী করবে বাংলাদেশ। সফরকারীদের ভাবনাও ছিল এমনটা। কিন্তু ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ড ধসে গেছে মূলত বাংলাদেশের পেস আক্রমণে। সিলেটের মাঠে রাখা হয়েছিল ঘাসের আভা। সেখানে ফনা তুলেছেন তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদরা। শেষ ওয়ানডেতে তো সবগুলো উইকেটই নিয়েছেন তারা। হাথুরুসিংহে টি-টোয়েন্টিতে সিরিজে পেসারদের এমন দাপট দেখার সম্ভাবনা দেখছেন না, 'দেখে মনে হচ্ছে খুব ফ্ল্যাট উইকেট হবে। উইকেটে তেমন কোন ঘাস নেই। আমার মনে হয় না পেসারদের তেমন কিছু থাকবে।'

পেসারদের ভালো করার সঙ্গে সিলেটে ব্যাটাররাও রান পেয়েছেন। ৩৩৮ , ৩৪৯ রানের মতো ইনিংস খেলেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের ১০১ রান উড়িয়ে দিয়েছে ১০ উইকেট হাতে রেখে। সিলেটে পেসারদের সুবিধার পাশাপাশি যেমন রান ছিল চট্টগ্রামে কেবল রানই দেখছেন আয়ারল্যান্ড কোচ হেনরিক মালান। তার কাছে উইকেট মনে হচ্ছে সিলেটের চেয়েও ফ্লাট,  'চট্টগ্রামের উইকেট সিলেটের চেয়েও ফ্ল্যাট মনে হচ্ছে। এটা অনেক শক্ত। বোলারদের জন্য ব্যাটারদের আটকাতে এখানে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আমাদেরকে সুযোগটা নিয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা লাগবে। এখন কাজটা খেলোয়াড়দের।'

Ireland
ছবি: স্টার

আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা বড় শট খেলতে ভালোবাসেন। বেশ কয়েকজন বিগ হিটারও আছে দলে। চট্টগ্রামে দুদিনের ঘুরে দাঁড়ানোর একটা দৃঢ় প্রত্যয় দেখা গেছে তাদের মাঝে। বাংলাদেশ যেখানে ঢিমেতালে সেরে প্রস্তুতি, আয়ারল্যান্ড ছিল চোয়লবদ্ধ।

সিরিজের আগের দিন নিয়মিত অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নিকে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের জন্য বিশ্রাম দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পল স্টার্লিংকে। সাকিবের সঙ্গে ট্রফি উন্মোচনও করেছেন তিনি। নেতৃত্বের পাশাপাশি দলের ব্যাটিংয়ের মূল ভারটাও নিতে হবে স্টার্লিংকে। বাংলাদেশে এসে ধুঁকতে থাকা এই আগ্রাসী ব্যাটার জ্বলে উঠলে নিশ্চিতভাবেই ছন্দ পাবে পুরো আয়ারল্যান্ড দল। এছাড়া হ্যারি টেক্টর, লোরকান টাকার, কার্টিস ক্যাম্ফারদের দিকেও তাকিয়ে থাকবে দলটি। যদি বোলিং আক্রমণের অবস্থা তাদের বেশি নাজুক। বাংলাদেশকে হুমকি দিতে পারেন এমন কেউ নেই। জস লিটল চোট ও আইপিএল খেলার জন্য এই সফরে আসেননি। মার্ক অ্যাডাইয়ার, গ্রাহাম হিউমরা এই জায়গায় অতটা প্রভাব ফেলতে পারেননি।

বাংলাদেশের  সেদিক থেকে কোন সমস্যা নেই। সবাই আছেন ফিট, আছেন সেরা অবস্থায়। স্কোয়াডে নতুন দুই মুখ এসেছেন। কিপার ব্যাটার জাকের আলি অনিক ও লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের শুরুর দিকে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

ইংল্যান্ড সিরিজে যারা রাঙিয়েছেন, এখানেও ভার তাদের হাতে। লিটন দাসের সঙ্গে রনি তালুকদারই ওপেন করবেন। নাজমুল হোসেন শান্ত, তাহহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান নামবেন পর পর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ থেকে বাদ পড়ার পর স্কোয়াড থেকেই ছিটকে যান আফিফ হোসেন। ছয় নম্বর জায়গাটা তাই আপাতত শামীম হোসেন পাটোয়ারির। সাতে মেহেদী হাসান মিরাজ। আটে নাসুম আহমেদ। এরপরে থাকবেন তিন পেসার। সেখানেও দোলাচলের তেমন কিছু নেই। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান আর হাসান মাহমুদই খেলার কথা।

প্রথম দুই ম্যাচে সিরিজ জিত গেলে শেষ ম্যাচে নতুনদের বাজিয়ে দেখবে বাংলাদেশ। আগের সিরিজে যারা পুরোপুরি ডানা মেলতে পারেননি তাদের কাছ থেকেও সর্বোচ্চ আউটপুট চাইবে দল। পাওয়ার প্লের শুরু, মাঝের ওভারের ব্যাটিং আর স্লগ ওভারের হিটিং কেমন হচ্ছে ফলের বাইরেও এসব দেখতে চায় দল।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: লিটন দাস, রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina’s extradition: Dhaka to remind Delhi after certain time

Bangladesh is expecting a reply from India regarding its request for former Prime Minister Sheikh Hasina's extradition and will send a reminder after a certain period if no reply is received from New Delhi, said a spokesperson today

44m ago