সেঞ্চুরির সুবাস জাগিয়ে ফিরলেন সাকিব

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। খেলার ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় পুঁজি পাওয়ার পথে রয়েছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন স্বাগতিকরা।

এই প্রতিবেদন লেখার সময়, বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৪২ রান। ক্রিজে আছেন অভিষিক্ত ডানহাতি ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়। তিনি খেলছেন ৬৯ বলে ৬৬ রানে। তার সঙ্গী অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের রান ৮ বলে ১৬।

সেঞ্চুরির সুবাস জাগিয়ে সাকিব সাজঘরে

ফিফটি স্পর্শ করার পর উড়ছিলেন সাকিব আল হাসান। উত্তাল হয়ে ওঠে তার ব্যাট। হ্যারি টেক্টরের করা ৩৬তম ওভারে মারেন ৫ চার। সব মিলিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ২২ রান। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সংগ্রহ পেরিয়ে যায় দুইশ রান।

তবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি শেষ পর্যন্ত পাওয়া হয়নি সাকিবের। ৯৩ রানে থামেন তিনি। তার ৮৯ রানের ইনিংসে ছিল ৯ চার। হিউমের ওয়াইড ইয়র্কারে উইকেটরক্ষক লরকান টাকারের গ্লাভসবন্দি হন তিনি।

সাকিবের আউটে ভাঙে হৃদয়ের সঙ্গে তার ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি। ৩৮তম ওভারে ২১৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

অভিষেকে হৃদয়ের ফিফটি

ওয়ানডে অভিষেকে পাঁচে নেমে ফিফটি পান ২২ বছর বয়সী তৌহিদ হৃদয়। পেসার গ্রাহাম হিউমের করা ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি পৌঁছান ব্যক্তিগত মাইলফলকে। ৫৫ বলে ৫ চারে ফিফটি আসে তার ব্যাট থেকে।

বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে ফিফটি করেন হৃদয়। তার আগে এই অর্জন ছিল ফরহাদ রেজা ও নাসির হোসেনের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখা হৃদয় এবার সেই তালিকায় যুক্ত হন।

সাকিব-হৃদয়ের শতরানের জুটি

৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে দলীয় শতরানের আগে তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর সাজঘরে ফেরার ধাক্কাকে জেঁকে বসতে দেননি সাকিব ও হৃদয়। তাদের কল্যাণে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা।

সাকিব ব্যাট হাতে দায়িত্বশীল ভূমিকায় আছেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন অভিষিক্ত হৃদয়। দুজনের মধ্যকার চতুর্থ উইকেট জুটি ৩৪তম ওভারে স্পর্শ করে শতরান। হিউমের ডেলিভারি ডিপ মিড উইকেটে মেরে সাকিব ডাবল নিলে ১০৩ বলে পূর্ণ হয় জুটির 'সেঞ্চুরি'।

সাকিবের টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি

ফিফটির হ্যাটট্রিক করেন ৩৫ বছর বয়সী তারকা সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ৩০তম ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারের বল কাট করে সিঙ্গেল নিয়ে ব্যক্তিগত মাইলফলকে যান তিনি। মাঠের বাইরের একটি ঘটনায় আলোচনায় থাকা বাঁহাতি ব্যাটারের এটি ৫৩তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে ফিফটি করেছিলেন সাকিব। তার ব্যাট থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৫৮ ও ৭৫ রান। এদিন চারে নেমে তিনি হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন ৬৫ বলে, মাত্র ২ চারের সাহায্যে।

সাকিব-হৃদয়ের জুটিতে পঞ্চাশ

কিছুটা চাপে পড়া দলের হাল ধরেন সাকিব ও হৃদয়। রানের চাকা সচল রাখার কাজও দারুণভাবে করেন তারা। ফলে বড় সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত পায় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে পঞ্চাশ রান আসে ৫৭ বলে।

ইনিংসের ২৬তম ওভারের শেষ বলে ম্যাকব্রাইনকে লং অফে উড়িয়ে মারেন ব্যাট হাতে ছন্দে থাকা সাকিব। ক্যাচের আওয়াজ উঠলেও বল পড়ে যায় বিপদ ঘটার আগে। সাকিব ও হৃদয় দৌড়ে সিঙ্গেল নিলে জুটির রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ।

৭ হাজারে দ্বিতীয় সাকিব

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে সাত হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব। ২২৮তম ওয়ানডেতে এসে ২১৬ ইনিংসে এই অর্জনে পৌঁছান শীর্ষ টাইগার তারকা। সাত হাজারে অধিনায়ক তামিম পৌঁছেছিলেন ২০৪ ইনিংস। সাকিবের লাগে ১২ ইনিংস বেশি।

মাইলফলকের কাছে সাকিব চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের সিরিজে। এই ম্যাচে তার দরকার ছিল ২৪ রান। লিটনের আউটের পর ইনিংসের দশম ওভারে ক্রিজে আসেন সাকিব। মুখোমুখি হওয়া ৩৩তম বলে সিঙ্গেল নিয়ে পৌঁছান সাত হাজারে।

শান্তও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ

লিটনের মতো থিতু হয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। রাউন্ড দ্য উইকেটে অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের আর্ম বলে কুপোকাত হন তিনি। ড্রাইভ করার চেষ্টায় হন বোল্ড। শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলাতে গেলেও পারেননি।

২ চারে ২৫ বলে ২০ রান করেন শান্ত। তার বিদায়ে বাংলাদেশের আরেকটি সম্ভাবনাময় জুটির অবসান ঘটে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তিনি যোগ করেন ৪২ বলে ৩২ রান। ফলে ১৭তম ওভারে ৮১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হয় বাংলাদেশের।

থিতু হয়ে আউট লিটন

ক্রিজে মানিয়ে নেওয়ার পর বিদায় ঘটে লিটনের। বোলিং আক্রমণে বদল এনে সাফল্য পায় আয়ারল্যান্ড। ২ চার ও ১ ছয়ে ৩১ বলে ২৬ রান করে থামেন তারকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন।

পেসার কার্টিস ক্যাম্ফারের লেংথ বল উইকেটে পড়ে কিছুটা গতি হারায়। লিটন আগেই চালিয়ে ফেলেছিলেন ব্যাট। শর্ট কভারে অনায়াস ক্যাচ তালুবন্দি করেন পল স্টার্লিং। দশম ওভারে লিটনের বিদায়ে ভাঙে শান্তর সঙ্গে তার ৪২ বলে ৩৪ রানের জুটি।

লিটন-শান্তর জুটি গড়ার প্রয়াস

প্রাথমিক ধাক্কা সামলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ইংলিশদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে পুরোপুরি হতাশ করেছিলেন লিটন। তিন ম্যাচে দুটি শূন্যসহ তার মোট রান ছিল কেবল ৭। তবে ওই সিরিজে বাঁহাতি ব্যাটার শান্ত ছিলেন অসাধারণ। নিজেকে মেলে ধরে দুটি ফিফটি করেছিলেন তিনি।

অ্যাডায়ারের করা পঞ্চম ওভারে ম্যাচের প্রথম ছক্কা হাঁকান লিটন। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল তিনি থার্ড ম্যান দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠান। শুরুতে ক্যাচ হওয়ার শঙ্কা জাগলেও সেদিকের ছোট বাউন্ডারি লিটনকে দেয় সহায়তা।

শুরুতেই বিদায় তামিমের

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ রান পাননি তামিম ইকবাল। তিনি আউট হয়েছিলেন যথাক্রমে ২৩, ৩৫ ও ১১ রানে। আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও হাসেনি তার ব্যাট। এবার তিনি ফেরেন এক অঙ্কের স্কোরে।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ারের শিকার হন তামিম। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি। ৯ বলে ৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। দলীয় ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

Comments

The Daily Star  | English

Lower revenue collection narrows fiscal space

Revenue collection in the first four months of the current fiscal year declined by 1 percent year-on-year

10h ago