মাদ্রাসা থেকে ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামে একটি মাদ্রাসা থেকে ১০ বছর বয়সী ছাত্র শাবিব সাইয়ানের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ।

যদিও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিধানের বেল্ট বাথরুমের টাওয়াল স্ট্যান্ডের সঙ্গে বেঁধে গলায় ফাঁস লাগায় শাবিবের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, এ ঘটনার পর মাদ্রাসাটির এক শিক্ষকের পালিয়ে যাওয়া এবং শাবিবের গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত করছে পুলিশ। একইসঙ্গে কীভাবে বেল্ট সেখানে লাগানো হলো এবং গলায় ফাঁস পড়ল, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।

পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এখনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তবে শিশুর বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। কী কারণে, কেন এই ঘটনা, তা জানতে তদন্ত করা হচ্ছে।

গতকাল সোমবার রাতে চকবাজারের মেহেদীবাগ এলাকার দারুস সুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে ওই ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

শাবিব সাইয়ান ওই মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির অনাবাসিক ছাত্র ছিল। তার বাবার নাম মশিউর রহমান চৌধুরী। শিশুটি নগরের বাগমনিরাম পল্টন রোডের আবদুল কাদের চৌধুরী বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকত।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দারুস সুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসাটি একটি ৪তলা ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে এই মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে হাফেজি ও অ্যাকাডেমিক ২ ভাগে পাঠদান চলে। এই মাদ্রাসার মোট শিক্ষার্থী ৪৮ জন। তার মধ্যে আবাসিকে আছেন ২১ জন ছাত্র। হাফেজিয়া বিভাগে ৩ জন এবং অ্যাকাডেমিক বিভাগে ৩ জন শিক্ষক এই মাদ্রাসায় ছাত্রদের পাঠদান করেন। মাদ্রাসাটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। হাফেজ মোহাম্মদ ফোরকান এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। ২টি ফ্ল্যাট পাশাপাশি ভাড়া নিয়ে এই মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি। হাফেজ ফোরকানের পরিবার ছাড়াও আরও ২ জন আবাসিক শিক্ষক—হাফেজ রিদোয়ান ও হাফেজ মিজানুর রহমান ছাত্রদের পড়াশোনা ও দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন।

২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর শাবিব এই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।

শাবাবের বাবা মশিউর টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলে ৩ বছর ধরে ওই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। তার নতুন নতুন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। ইউটিউব দেখে যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ করতে পারত এই বয়সে। বাসার চার্জার লাইট থেকে শুরু করে অনেক জিনিস ঠিক করেছে সে। কীভাবে তার পরিণতি এমন হলো, তা আমি বুঝতে পারছি না।'

'আমার বোন সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছে। আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কেন, কীভাবে এমন হলো, তারা তা বের করবে', বলেন তিনি।

আজ দুপুরে সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক হাফেজ ফোরকান পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

হাফেজ ফোরকান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোমবার সকালে শাবিবকে অনান্য দিনের মতো তার বাবা মাদ্রাসায় দিয়ে যান। শাবিব সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবার এবং পড়াশোনা শেষ করেই বাসায় যায় সাধারণত। রাত ৯টা ১২ মিনিটে শাবিবের বাবা আমাকে ফোন করে শাবিবকে নিচে পাঠাতে বললে আমি তখন অন্য ছাত্রদের তাকে ডাকতে বলি। ঘটনার সময় শাবিব বাথরুমে গিয়েছিল। ক্লাস চলাকালীন বাথরুমে গেলেও সে আর বের হয়নি।'

'অন্য ছাত্ররা বাথরুমে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করলেও সে বের হয়নি। এক পর্যায়ে শিক্ষক মিজানুর ও রিদোয়ান শৌচাগারের দরজার কাছে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। সাড়া-শব্দ না পেয়ে দরজার ফুটো দিয়ে উঁকি দিয়ে শাবাবকে গলায় বেল্ট লাগানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে দরজায় লাথি মেরে ভেঙে ফেলেন রিদোয়ান এবং তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন', বলেন ফোরকান।

তবে ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসার শিক্ষক রিদোয়ানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ বলে জানান প্রধান শিক্ষক ফোরকান। মাসিক ৯ হাজার টাকা বেতনে তাকে মাদ্রাসায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা জানিয়েছে, পাঞ্জাবি বাথরুমের মেঝেতে পড়েছিল। টয়লেটের টাওয়াল ও কাপড় রাখার স্টিলের স্ট্যান্ডের সঙ্গে কোমরের বেল্টে ঝুলেছিল শাবিব।

মাদ্রাসার আরেক ছাত্রের অভিবাবক মুফতি নুরুন্নবী ঘটনা শুনে আজ দুপুরে মাদ্রাসায় এসেছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলে ও শাবিব একইসঙ্গে পড়ত। চঞ্চল স্বভাবের হলে সে খুব ভালো ছেলে ছিল। ঘটনার দিনও তারা একসঙ্গেই পড়াশোনা করেছে।'

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, শাবাব আত্মহত্যা করেছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজে অস্বাভাবিক কিছু পাইনি এখনো। তবে তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শিশুটির ময়নাতদন্ত হয়েছে আজ। রিপোর্ট এলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।'

'শিশুটির বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। আমরা আলামত হিসেবে কিছু জিনিস জব্দ করেছি। তবে এখনো এই ঘটনায় কাউজে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়নি', বলেন ওসি।

Comments

The Daily Star  | English

Renewable ambitions still mired in uncertainty

Although the Awami League government made ambitious commitments to renewable energy before being ousted by a mass uprising in August last year, meeting those lofty goals remains a distant dream for the country.

12h ago