যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা

সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য

সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে ১৪৫টি আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট মেজর, ১০০টি মাইনর এবং ৭৫টিরও বেশি গ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ। পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকার জন্য এখানকার শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। যা তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে এবং পরবর্তীতে ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। 

এ ছাড়া সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীবান্ধব এবং অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাফল্যের প্রতি অঙ্গীকারের ঐতিহ্য লালন করে যা বহির্বিশ্বের উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।

সুযোগ-সুবিধা 

সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এনমন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মনোরম পরিবেশে পড়াশোনার সুবিধার পাশাপাশি এই ক্যাম্পাসে রয়েছে বিশালাকার লাইব্রেরি, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য শাটল সার্ভিস, কম্পিউটার ল্যাব, ফ্রি হোম টিউটর সুবিধা, প্রতি মাসে একবার ফ্রি খাবার, ডিজিটাল মাধ্যমে ক্লাস করার সুবিধা ইত্যাদি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে শিক্ষাব্যয় তুলনামূলক কম। এ ছাড়া ক্যারিয়ার সার্ভিসসহ রয়েছে অন-ক্যাম্পাস ও অফ-ক্যাম্পাসে থাকার সুবিধা তো রয়েছেই। 

যেসব বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে 

আর্টস ও মিডিয়া, ব্যবসা এবং কম্পিউটিং; শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং হিউম্যান স্টাডিজ; মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান; বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত।

সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রতি বছর ২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অর্জন, প্রতিভা, অ্যাথলেটিক যোগ্যতা, নেতৃত্ব, ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট কাজে অংশগ্রহণ, ভৌগোলিক ও আর্থিক প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে এসব স্কলারশিপ দেওয়া হয়। 

স্কলারশিপ প্রোগ্রাম

৪-বছর ব্যাচেলরস ডিগ্রি; পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট সার্টিফিকেট/মাস্টার্স ডিগ্রি; ২-বছর আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ডিপ্লোমাসহ অন্যান্য। 

যেসব স্কলারশিপ দেওয়া হয়- 

কপার ডোম স্কলারশিপ; রেসিডেন্স লাইফ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড; রেডহকস অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড; ভিজ্যুয়াল অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টস অ্যাওয়ার্ড; অ্যাকাডেমিক সাপোর্ট সেন্টার অ্যাওয়ার্ড; এন্ডওয়েড অ্যান্ড স্পন্সরড স্কলারশিপ; স্টেট গ্র‍্যান্টস অ্যান্ড স্কলারশিপ; পেল গ্র‍্যান্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজন-ভিত্তিক স্কলারশিপ। 

এ ছাড়া সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটি ৫টি ভিন্ন সেগমেন্টে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ অফার করে। যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমিক অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড- বিগিনিং ফ্রেশমেন ও ট্রান্সফার স্টুডেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট স্কলারশিপ- ফ্রেশমেন, ট্রান্সফার, আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ও গ্র‍্যাজুয়েট, ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজিশন অ্যাওয়ার্ড- আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ও গ্র‍্যাজুয়েট। 

স্কলারশিপের ভিন্নতা অনুযায়ী অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ডলার থেকে ৮ হাজার ডলার হয় এবং যোগ্যতাও ভিন্ন হয়। এ সম্পর্কে সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। 

এ ছাড়া পূর্ণ-কালীন স্নাতক অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীকে সহায়তা প্রদানের জন্য দেওয়া হয় গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ সুবিধা। যা একপ্রকার স্কলারশিপ হিসেবেও গণ্য করা হয়। এই অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ শিক্ষার্থীদের পেশাদার হিসেবে ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ এবং প্রশাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার সুযোগ করে দেয়।

সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ২ ধরনের অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের সুবিধা রয়েছে- টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (টিএ) এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (এএ)।  

টিএ-এর মাধ্যমে মূলত কোর্সের পাঠদান, টিউটরিং বা নির্দিষ্ট কোর্স বিভাগে নির্ধারিত শিক্ষাদান সহায়তা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত দায়িত্ব পালনে সরাসরি অংশগ্রহণ করা যায়। যার মধ্যে পরীক্ষাগার বা ক্লিনিক্যাল প্রস্তুতি, গ্রেডিং, টিউটরিং বা লাইব্রেরি গবেষণা সম্পর্কিত ক্লাস প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে সাহায্য করার কাজও করতে হয়। আর এএ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ইউনিটের দৈনন্দিন কাজকর্মে অংশগ্রহণ করে দক্ষতা বিকাশ এবং সহায়তা করা যায়। 

এ ক্ষেত্রে অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগের সুপারিশ প্রক্রিয়া শুরু হয় বিভাগ/ইউনিটে এবং কলেজের ডিন এবং গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ভাইস প্রভোস্ট/ডিনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। অনুমোদিত হয়ে গেলে নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগের ফর্ম চূড়ান্ত করা হয় এবং অফিস অফ দ্য গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ দ্বারা অনুমোদিত হয় এবং চুক্তি জারি করার জন্য মানব সম্পদে প্রেরণ করা হয়। তারপর প্রার্থীর ই-মেইল ঠিকানায় চুক্তি ই-মেইল বিজ্ঞপ্তি, চুক্তি পর্যালোচনা এবং গ্রহণ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিস্তারিত নির্দেশাবলি দেওয়া হয়।

আর অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ যেহেতু একটি স্কলারশিপ, তাই সন্তোষজনক অ্যাকাডেমিক রেকর্ড বজায় রাখতে হয়। এজন্য অবশ্যই কমপক্ষে ৩.০০ জিপিএ থাকতে হবে। 

আবেদনের যোগ্যতা 

বেশিরভাগ স্কলারশিপ ও অ্যাওয়ার্ড সাধারণত আবেদনের সময় প্রার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় প্রাধান্য পায়।

প্রার্থী একের অধিক এসিটি বা এসএটি টেস্ট দিয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে ভালো স্কোরকে প্রাধান্য দেয়। 

তবে শুধু টেস্ট স্কোর স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় না। কোনো টেস্ট ছাড়াই এইচএসসিতে কমপক্ষে ৩.২৫ জিপিএ থাকলেই প্রার্থীকে কপার ডোম স্কলারশিপের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

কিছু স্কলারশিপ আবার 'স্ট্যাকেবল'। বড় অংকের অর্থ যোগ করতে সেসব স্কলারশিপ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া প্রয়োজনভিত্তিক অর্থসাহায্য স্কলারশিপের মূল্যে কোনোপ্রকার প্রভাব ফেলে না। আর স্কলারশিপগুলো মূলত রিনিউয়াল হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বছরে ক্রেডিট আওয়ার বাছাই করে নির্দিষ্ট জিপিএ বজায় রাখলে সহজে স্কলারশিপ পাওয়া যাবে। 

এ ছাড়া আইএলটিএস পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬.৫ স্কোর থাকা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে এইচএসসিতে যদি ৪.৫০ জিপিএ থাকে তাহলে বছরে ৮ হাজার ডলার স্কলারশিপ পাওয়া যাবে। 

আবেদনের সম্ভাব্য সময়

  • জানুয়ারি-এপ্রিল (এক মাস বা তার বেশি সময়ের মধ্যে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে জানা যায়)
  • সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর (১৫-৩০ দিনের মধ্যে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা জানা যায়) 

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস 

বিদেশে আবেদনের জন্য গ্রহণযোগ্য কলেজের মূল ট্রান্সক্রিপ্ট (কলেজ থেকে সিলকৃত ট্রান্সক্রিপ্ট ফেড-এক্স বা অন্যান্য সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। আরেক কপি নিজের কাছে রেখে দিতে হবে)

  • সার্টিফিকেট ও মার্কশিট (ইংরেজি ভাষায় হতে হবে)
  • আইএলটিএস স্কোর
  • ফাইন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট (ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও অন্যান্য)

আবেদন প্রক্রিয়া 

সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এনমন খানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। তারপর মেসেজে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যা যা লাগবে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। তার মধ্যে আইএলটিএস স্কোর, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, অভিভাবকের প্রয়োজনীয় আর্থিক কাগজপত্র, সার্টিফিকেট, মার্কশিট ইত্যাদির অনলাইন কপি পাঠাতে হবে প্রথমে। ট্রান্সক্রিপ্টের মূল কপি পরে সেখানে পাঠাতে হবে। আই-টুয়েন্টি আসার পর অনলাইনে ম্যাথ টেস্ট দেয়া যাবে (এসএটি টেস্ট স্কোর না থাকলে)। 

তারপর নির্দেশনা অনুযায়ী সেভিস ফি (প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো) পে করতে হবে। ভিসার জন্য ক্লাস শুরুর আগে কয়েক মাস আগেই যত দ্রুত সম্ভব অ্যাম্বাসিতে আবেদন করতে হবে। এ জন্য প্রথমে অনলাইনে ডিএস ওয়ান সিক্সটি ফর্ম ফিলআপ করে আবেদন করার পর ব্যাংকে (১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা) জমা দিতে হবে। ফর্ম ফিলআপের সময় সতর্ক থাকতে হবে কেন না সেখানে উল্লিখিত তথ্যের উপরই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে অ্যাম্বাসিতে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যালেন্স, অভিভাবকের আয়ের উৎস সংক্রান্ত আর্থিক কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। তারপর অ্যাম্বাসি থেকে ভিসা পেয়ে গেলে প্লেনের টিকিট কেটে ফেলতে হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আবেদনের জন্য বিস্তারিত তথ্য এই লিংকে পাওয়া যাবে: https://semo.edu/admissions/index.html 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে থাকাকালীন অবস্থায় কোনো বেতন দিতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর পরই বেতন দেওয়া যাবে। সেটা প্রতি মাসে কিংবা বছরে একসঙ্গেও দেওয়া যাবে। 

সম্ভাব্য খরচ 

প্রথমত ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। প্রথম এক বছরে খরচের জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন পড়বে। আবেদন, পাসপোর্ট, ভিসা, সেভিস ফি ইত্যাদির জন্য লাগবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। আর প্লেনের টিকিট কাটতে আরও ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। তা ছাড়া থাকা-খাওয়ার জন্য মাসে ১ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। ডলারের মান অনুযায়ী অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। 

মিডওয়েস্টের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির খরচ তুলনামূলক বেশ কম বলা যায়। শিক্ষার্থীদের সামর্থ্যের স্বল্পতার বিষয়টি বিবেচনা করে স্কলারশিপ ছাড়াও দেওয়া হয় পেল গ্র‍্যান্ট, ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা। তাই উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিকে পছন্দের তালিকায় রাখা যেতে পারে। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

8h ago