সিঙ্গাপুরে অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রবাসীদের শ্রদ্ধা

বাংলার কণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত ভাষা শহীদদের প্রতি স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্যে সিঙ্গাপুরের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন ডরমিটরিতে বসবাসরত শ্রমজীবী অভিবাসীরা একুশের প্রথম প্রহরের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবারের মতো এ বছরও অস্থায়ী শহীদ বেদি তৈরি করে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সিঙ্গাপুরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

সিঙ্গাপুরের বাংলা পত্রিকা 'বাংলার কণ্ঠ'র কার্যালয়ে স্থাপিত প্রতীকী শহীদ বেদিতে একুশের প্রথম প্রহরে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলার কণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত ভাষা শহীদদের প্রতি স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্যে সিঙ্গাপুরের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন ডরমিটরিতে বসবাসরত শ্রমজীবী অভিবাসীরা একুশের প্রথম প্রহরের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

চলতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি কর্মদিবস মঙ্গলবার হওয়ায় কর্মরত প্রবাসীদের সুবিধার্থে ও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ২০শে ফেব্রুয়ারি সোমবার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা ১মিনিট বাংলাদেশ সেন্টারে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, একুশের গান ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ সেন্টার- সিঙ্গাপুর, অগ্রণী এক্সচেঞ্জ হাউজ সিঙ্গাপুর প্রা. লি, বাংলার কণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ, বাংলার কণ্ঠ কালচারাল ও পাঠক ফোরাম এবং সিঙ্গাপুরে কমর্রত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি, প্রবাসী সাংবাদিক সমিতিসহ প্রবাসীদের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দেন।  

এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম এনডিসি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর (অব.) ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটির সহ সভাপতি সাব্বির আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্থানীয় সংস্কৃতি ও সংবাদকর্মী এবং সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিক।

সেদিন হাই কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম বাংলার কণ্ঠ ও বাংলাদেশ সেন্টার এর নতুন কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে একেএম মোহসীন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, 'ভাষা শহীদদের ত্যাগের কারণেই আমরা আজ এখানে সমবেত হতে পেরেছি মন খুলে মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের তথ্য বিনোদনের জন্যই 'বাংলার কন্ঠ'র পথ চলা। আবার বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরকে ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতিতে একসূত্রে গ্রোথিত করার প্রয়াস থেকেই 'বাংলাদেশ সেন্টার, সিঙ্গাপুর' এর জন্ম।'

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাই কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা সবাই চাই আমাদের স্মৃতিগুলো, আমাদের অভিজ্ঞানগুলো সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে। বাংলাদেশ সেন্টার সেই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন। এটি সিঙ্গাপুরের কয়েকশ মানুষ ও তাদের স্মৃতিকে ধারণ করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক ধনী মানুষ ছিলেন, অনেক শিক্ষিত মানুষ ছিলেন তারা কালের গর্ভে হারিয়েও গেছেন। শুধু তাদের রেখে যাওয়া সভ্যতা, তাদের কর্মকান্ড আজও পৃথিবীতে রয়ে গেছে। যখন কোনো শুভ উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন পাশে দাঁড়ানোর মতো সমর্থনকারী কম পাওয়া যায়, ভালো কিছু করতে গেলে হাজারো বাঁধা আসে। আর এসব বাঁধা অতিক্রম করেই মানুষ এগিয়ে চলে তাদের পরিশ্রম আলোর মুখ দেখে।'

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর (অব.) ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'ভাষা শহীদের রক্তঋণে পাওয়া এই গৌরবকে শুধু ধারণ করলেই হবে না এটিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে জানা-অজানা অনেকেই অবদান রেখেছেন তাদের কথা কেউ মনে রেখেছে কেউ রাখেনি। এমনকি ইতিহাসও তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলার কণ্ঠ'র উদ্যোগে স্মারক গ্রন্থ 'ইতিহাসের অন্তরালে আব্দুল মালেক ভূঁইয়া; নির্ভীক ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক' প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

আলোচনা শেষে বাংলার কণ্ঠ প্রকাশনীর উদ্যোগে প্রকাশিত 'ইতিহাসের অন্তরালে আব্দুল মালেক ভূঁইয়া; নির্ভীক ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক' শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মাননীয় হাই কমিশনার ও উপস্থিত বিশেষ অতিথিরা।

এছাড়া করোনাকালীন সময়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ৫টি বিশেষ ক্ষেত্রে মনোনীতদের 'বাংলার কন্ঠ স্মারক সন্মাননা ২০২৩' প্রদান করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

10m ago